স্পেনের নতুন তারকা লামিনে ইয়ামাল। ফাইনালে নজরে তিনিই।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই তো সেদিনও রোকাফোন্ডার ফুটপাথ দিয়ে বল জাগলিং করতে করতে মাঠের দিকে যেত ছোট্ট ছেলেটা।
এই তো সেদিনও পাতলা জাল দিয়ে দু’ভাগ করে রাখা মাঠ দু’টোয় ফুটবল নিয়ে মাতাতো পুঁচকে ছেলেটা। এই তো সেদিনও মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার খেলা দেখতেন প্রতিবেশীরা।
আর আজ? এক লহমায় বদলে গেছে সব। সে ছেলে আজ আর ছোট্ট নেই, অনেক বড়! বছর সতেরো হলে কী হবে, ইয়ামাল (Lamine Yamal) এখন ‘আপনি’ গোত্রীয়! প্রতিপক্ষের অনেক বয়োঃজ্যেষ্ঠ ফুটবলারকে নিত্য ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন যে স্পেনের ‘ওয়ান্ডার কিড’।
আজ থেকে বছর দশেক আগের কথা। ইয়ামাল তখন মাত্র সাত। দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে বার্সেলোনায় প্র্যাকটিস করতে যাওয়ার আগে ইয়ামালকে নিয়ে স্থানীয় এক ছোট বারে প্রাতঃরাশ করতে আসতেন বাবা কার্লোস সেরানো। সেই ইয়ামালই এখন সুপারস্টার। পুরানো সেই দিনের কথার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কার্লোস বলছিলেন, “ভেবে দেখুন, সদ্য ও ১৬ পার করল। এখনও ও বাচ্চা। আর কয়েক বছর বাদে তবে কী হবে?” কথা শেষ করতে পারেননি কার্লোস। হাত উঁচিয়ে দেখালেন সেই মাঠ, যেখানের সবুজ ক্যানভাসে অপটু শিল্প গড়ে তুলত ছোট্ট ছেলেটা। বলছিলেন, “আপনারা আজ ওকে চিনছেন। আমরা ওকে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি।” সঙ্গে জুড়লেন, “এবার যখন ও বাড়ি আসবে, তখন আর রাস্তায় এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে পারবে না। আমাদের ছোট্ট ইয়ামাল এখন যে মহাতারকা।” বস্তুতই তাই। দোকান করার ফাঁকে, মাঠের পাশের বেঞ্চে বসে অলস আড্ডা মারার আলসেমিতে যে ইয়ামালের খেলা দেখতেন স্থানীয়রা, তাঁরা যে এখনও পাশের বাড়ির ছেলেটার খেলা দেখছেন। তবে তা চোখের সামনে নয়। হয় মোবাইলে, নয় টেলিভিশনে অথবা ইয়ামালের বড় হয়ে ওঠা সেই মাঠের পাশে লাগানো জায়ান্ট স্ক্রিনে!
যেদিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়েছিলেন কার্লোস, সেখানে মাঠ ছাড়াও রয়েছে কংক্রিটের স্ল্যাব। হয়তো ওখানেও কোনও সময় বল নিয়ে জাগলিং, ড্রিবলিং করতেন ছোট্ট ইয়ামাল। নেটহীন বারপোস্টের দিকে এখন নতুন স্বপ্ন নিয়ে শট মারেন ভবিষ্যতের ইয়ামালরা। তাদের মধ্যে লামিন ইয়ামালকে খুঁজতে, ফুটবল দুনিয়ার নতুন নক্ষত্রের অতীত খুঁজতে এখন রোজ ভিড় জমান উৎসাহীরা। সবুজ মাঠের পাশের দেওয়ালের গ্রাফিটিতে সুন্দরভাবে লেখা রোকাফোন্ডা। সেটিই যে ইয়ামালের চারণভূমি। যার সঙ্গে ইয়ামালের নাড়ির টান। শুধু সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়ার কারণেই নয়, স্থানীয়দের কাছে ইয়ামাল নায়ক হয়ে গিয়েছেন সেই অতীতকে যেভাবে আঁকড়ে রেখেছেন ইয়ামাল সেই কারণে। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেওয়ার পর সেলিব্রেশনের সময় আঙুল দিয়ে কিছু চিহ্ন আঁকেন ইয়ামাল। ভালভাবে দেখলে বোঝা যাবে সেটি একটি সংখ্যা। ৩০৪। এটি আসলে রোকাফোন্ডার পিনকোডের শেষ
তিন সংখ্যা!
আজ সেই পিনকোডকে ভুবনবিখ্যাত করার চ্যালেঞ্জ ইয়ামালের সামনে। রোকাফোন্ডা বিশ্বাস করে, তা হবে। অবশ্যই হবে। স্পেনই জিতবে ইউরো। জেতাবেন তাদেরই ঘরের ছেলে। তাদের পাশের বাড়ির ছেলে। লামিন ইয়ামাল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.