ছবি: সায়ন্তন ঘোষ।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তীরে এসে ডুবল মোহন তরী! যুবভারতীর ৬০ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে শহর থেকে আইএসএল (ISL Cup) কাপ জিতে নিয়ে গেল মুম্বই সিটি এফসি। অথচ ঘরের মাঠে ফেভারিট হিসাবেই নেমেছিল মোহনবাগান। তাহলে কেন এই অসহায় আত্মসমর্পণ! কে ভুল করলেন? হাবাস, নাকি ফুটবলাররা? মোহনবাগানের হারের সম্ভাব্য কারণগুলি দেখে নেওয়া যাক।
১। আত্মতুষ্টি: পর পর ৩ ম্যাচ জিতে লিগ চ্যাম্পিয়ন। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে এই মুম্বই সিটির (Mumbai City FC) বিরুদ্ধে সহজ জয়। ফাইনালের আগে পর পর এই সাফল্যে বোধহয় কিছুটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস, বলা ভালো আত্মতুষ্টিতে ভুগলেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে মুম্বই ফুটবলাররা যেমন দৌড়ে গেলেন, সেই এনার্জির ধারেকাছে ছিলেন না কাউকো বা মনবীররা। বোঝা যাচ্ছিল, কোথাও একটা গা-ছাড়া মনোভাব কাজ করছে।
২। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল: মুম্বই সিটির মূল শক্তি ইউং প্লে। একদিকে ছাংতে অন্যদিকে বিক্রম প্রতাপ সিং। দুই উইঙ্গারের গতি সামাল দিতে হাবাস অতিরিক্ত রক্ষ্মণাত্মক হয়ে গেলেন। ডিফেন্সকে সঙ্গ দিতে নামিয়ে আনলেন লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিংকে। ফলে বেশিরভাগ সময় রক্ষণভাগেই আটকে গেলেন মোহনবাগানের অধিকাংশ আক্রমণভাগের ফুটবলার। যার ফলে গোটা ম্যাচটাই কার্যত ডিফেন্স করে কাটিয়ে দিতে হল মোহনবাগানকে (Mohun Bagan)।
৩। উইং প্লের অভাব: হাবাসের মোহনবাগানের ইউএসপিই ছিল দুই উইঙ্গার বলা ভালো উইংব্যাকের ওঠানামা করে খেলা। মনবীর এবং লিস্টন এই কাজটা শেষ কয়েক ম্যাচে দুর্দান্তভাবে করে আসছিলেন। কিন্তু ফাইনালে মুম্বইয়ের আক্রমণের ঝাঁজ সামলাতেই হিমশিম খেয়ে গেলেন তাঁরা। আক্রমণে সেভাবে দেখাই গেল না মনবীর বা লিস্টনকে। ফলে আক্রমণভাগে যেন একা হয়ে গেলেন দিমি পেত্রাতোস এবং কামিন্স। গোটা ম্যাচে দু-একটা মুহূর্ত বাদ দিলে সেভাবে সুযোগই তৈরি করতে পারেনি সবুজ-মেরুন শিবির। গোলটিও এসেছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো।
৪। বিশ্রী রক্ষণ এবং মাঝমাঠ: মোহনবাগানের লেফটব্যাক পজিশন নিয়ে সমস্যা ছিলই। শেষের দিকে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না শুভাশিস। বার বার তাঁর দিক থেকেই উঠে এল আক্রমণ। ইউতসেকেও এদিন অনেকটা ফিকে দেখাল। ছাংতে, জ্যাকুব, পেরেরিয়া দিয়াজরা যখনই আক্রমণ শানিয়েছেন, মোহনবাগান রক্ষণ তখনই আতঙ্কিত হয়েছে। মাঝমাঠও সঙ্গ দেয়নি সেভাবে। রক্ষণকে সাহায্য করার জন্য এদিন ম্যাচের শুরুতে দীপক টাংরিকে নামান হাবাস। কিন্তু গোটা ম্যাচে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাউকোও রক্ষণকে সাহায্য করতে পারেননি। বস্তুত মাঝমাঠের ব্যর্থতায় চাপ বেড়েছে রক্ষণে, আক্রমণ ভাগের সঙ্গে সমন্বয়ও তৈরি হয়নি। সেই বাড়তি চাপ সামলাতে পারেনি সবুজ-মেরুন শিবির। তবু কেন টাংরিকে এতক্ষণ মাঠে রাখা হল বোধগম্য হল না। সাহালের মতো স্কিলফুল ফুটবলারকেও হয়তো আরেকটু ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত।
৫। ক্লান্তি: ক্লান্তি যে সমস্যা হতে পারে সেটা আগেই বোঝা যাচ্ছিল। চলতি মরশুমের দ্বিতীয় ভাগে মুম্বইয়ের চেয়ে দু-তিনটে ম্যাচ বেশি খেলতে হয়েছে মোহনবাগানকে। ফাইনালে সেই বাড়তি ম্যাচ খেলার ক্লান্তি ভালোমতো চোখে পড়ল। আবার আর্মান্দো সাদিকুর মতো ফুটবলারের না থাকাটাও ভোগাল মোহনবাগানকে। কোচ হাবাস যেন বিকল্পের অভাবে ভুগলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.