শিল্টন পাল। ফাইল চিত্র।
অর্পণ দাস: ইংল্যান্ডের প্রাক্তন গোলকিপার পিটার শিল্টনের ভক্ত ছিলেন বাবা। নিজেও চাইতেন একদিন গোলকিপার হবেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়নি। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত গোলকিপারের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছেলের নাম রাখেন শিল্টন। কালক্রমে মছলন্দপুরের সেই ছেলেটাই একসময় হয়ে উঠলেন মোহনবাগানের ‘বাজপাখি’।
অবশেষে গ্লাভসজোড়া তুলে রাখলেন শিল্টন। এখন তাঁর বয়স ৩৬। বলা হয়, গোলকিপারদের বয়স বাড়লে তাঁদের খেলা আরও ফোটে। এখনও হয়তো তাঁর মধ্যে ফুটবল বেঁচে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেনবো এফসির জার্সি গায়ে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন শিল্টন। টাটা ফুটবল আকাদেমিতে তাঁর যাত্রা শুরু। কিন্তু কেরিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন মোহনবাগানেই।
কিন্তু যদি নিজের কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত বাছতে বলা হয়, তাহলে কোনটা বাছবেন তিনি? শিল্টনের মতে, “সদ্য ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছি। এখনই স্মৃতি ঘেঁটে সব সেরা মুহূর্ত খোঁজা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রথমেই যেটা মাথায় আসবে, সেটা হল মোহনবাগানের অধিনায়ক হিসেবে আই লিগ জয়। তার পরই আসবে আই লিগের সেরা গোলকিপার হওয়া। এই দুটো মুহূর্ত সারা জীবন উপভোগ করব।”
২০০৬-এ সবুজ-মেরুনের জার্সি গায়ে দেওয়ার পর ক্রমশ ‘ঘরের ছেলে’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ছিলেন রক্ষণের শেষ প্রহরী, বিশ্বস্ত ‘বাজপাখি’। ২০১৪-১৫ মরশুমে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও ওঠে শিল্টনের হাতে। তবে শুধু বাংলায় নয়, খেলেছেন রাজ্যের বাইরেও। আই লিগের ক্লাব গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্স ছাড়াও আইএসএলে চেন্নাইয়ান, এটিকে, কেরালা ব্লাস্টার্স দলেও ছিলেন তিনি। ২০২০-এ ভবানীপুর ক্লাবের হয়েও ভরসা জুগিয়েছেন তিনি।
কেরিয়ারে জিতেছেন অসংখ্য ট্রফি। মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ, কলকাতা ফুটবল লিগ, ফেডারেশন কাপের শিরোপা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। কেরিয়ারের শেষ ম্যাচটা যদিও খেললেন রেনবোর জার্সিতে। কিন্তু ভক্তদের কাছে তিনি আজও মোহনবাগানের ‘ঘরের ছেলে’। সবুজ-মেরুন জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলতে পারলে কি ভালো লাগত? শিল্টন বললেন, “আমার কাছে সেই আক্ষেপ নেই যে, মোহনবাগান থেকেই অবসর নিতে পারলাম না। আসলে ময়দান থেকে কোনও কিছু পাওয়ার আশা করি না। কখনই কোনও বিতর্কে জড়াতে চাই না। ফুটবলের বাইরে আমার নিজের জগতেই ভালো আছি। কোনও কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে কখনই ফুটবল খেলিনি।”
কেরিয়ারে অসংখ্য ডার্বি জিতেছেন, আবার অনেক ম্যাচে হারের সাক্ষীও থাকতে হয়েছে। যার মধ্যে আসে ইস্টবেঙ্গলের ডু ডংয়ের ফ্রিকিক থেকে হজম করা দুটি গোলের কথাও। সেটাই কি কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল? শিল্টন মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষের উত্থানপতন থাকে। আমরা তো লাইভ পারফর্মার। আমাদের কোনও রিটেক নেই। প্রত্যেকটা প্লেয়ারই মাঠে ১০০ শতাংশ দেয়। গোলকিপার হিসেবে ময়দানে আমি সবচেয়ে বেশি বছর খেলেছি। এমনও ম্যাচ খেলেছি, যেখানে বিপক্ষ অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কখনও ভয় পাইনি বা পিছপা হইনি। ওটা যেমন একটা মুহূর্ত ছিল, তেমনই প্রচুর ভালো দিনও গিয়েছে। ওটা ফুটবলেরই একটা অংশ।”
বিশ্ব ফুটবলে গোলকিপারদের কেরিয়ার সাধারণত দীর্ঘ হয়। সেখানে ৩৬ বছর বয়সে অবসর নেওয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত? শিল্টন জানান, “ভারতীয় ফুটবল এখন নতুন ফুটবলার তুলে আনার দিকেই নজর করছে। সেখানে যেন অভিজ্ঞ ফুটবলারদের মূল্য কমছে। সবাই তো সুনীল ছেত্রী হন না। এক সময়ে চার্চিলে ১৬টা ম্যাচ খেলার পর মোহনবাগানে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। বিদেশি ফুটবলার আনার ক্ষেত্রেও এখন তারুণ্যের দিকেই ঝুঁকেছে। ফলে শুধু গুণমানটাই মানদণ্ড দেখা হয় না। তবে অভিজ্ঞ ফুটবলার থাকলে সেটা দলের কাজেই লাগে। আরও দুবছর হয়তো খেলতে পারতাম। নিজের সেরা ফর্মে থাকাকালীন সম্মানের সঙ্গেই সরে যেতে চেয়েছি।” সেটাই করলেন শিল্টন। গ্লাভসজোড়া তুলে রাখলেও ময়দান চিরকাল মনে রাখবে ‘বাজপাখি’কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.