দুলাল দে: কার্লেস কুয়াদ্রাত উত্তর হলে অস্কার ব্রুজো একেবারে দক্ষিন মেরু। সে স্ট্র্যাটেজির দিক থেকে হোক, কিংবা বাহ্যিক প্রকাশে। দু’জনের মধ্যেই প্রচুর প্রচুর পার্থক্য। কিন্তু এটাতো সত্যি, এখনও পর্যন্ত লিগ টেবিলের শেষতম স্থান হলেও, অস্কার ব্রুজোর হাতে পড়ে এই ইমামি ইস্টবেঙ্গলের উপর এখন সত্যিই আশা রাখতে শুরু করেছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। মনে হচ্ছে, হয়তো পুরো বিষয়টি ভীষণই কঠিন। কিন্তু অস্কার ব্রুজোর হাত ধরে শেষ মুহূর্তে প্লে অফ খেলার সুযোগ আসলেও আসত পারে। সত্যিই কি তাই? শুনে নেওয়া যাক, অস্কারের মুখেই ..।
প্রশ্ন: সত্যি করে বলুন তো, ইস্টবেঙ্গলের থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কতক্ষণের মধ্যে হ্যাঁ বলেছিলেন ?
অস্কার: এখন স্বীকার করতে অসুবিধা নেই। ইস্টবেঙ্গলের থেকে প্রস্তাব পাওয়া মাত্র ঠিক করে ফেলি, এখানে কোচ হতেই হবে। কিন্তু তখন আমি ইন্দোনেশিয়াতে। সেখানকার একটি ক্লাবের সঙ্গে কথা বার্তা পাকা। চুক্তিতে সই করতেই ইন্দোনেশিয়াতে গিয়েছি। আর সেই সময় প্রস্তাব পেতেই ইন্দোনেশিয়ার ক্লাবকে বুঝিয়ে রাজি করাই ছেড়ে দিতে। চলে এলাম এখানে।
প্রশ্ন: যে দলটা লিগ টেবিলের শেষতম স্থানে। সেই দলের কোচ হতে এরকম আগ্রহ ?
অস্কার: প্রস্তাব পাওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল সম্ভবত জামশেদপুর ম্যাচটা খেলেছিল। ম্যাচটা দেখে যা বুঝলাম, প্রচুর গন্ডগোল থাকলেও বেশ কিছু পজিটিভ পয়েন্ট আছে। আমি যদি দলের নেগেটিভ পয়েন্টগুলো কমিয়ে যে পজিটিভ পয়েন্টগুলো দেখেছি, সেগুলির সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাহলেই ম্যাচ বার করে নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: এসেই পড়লেন ডার্বি ম্যাচে। এখন যদি কালকেই ডার্বি ম্যাচ খেলতে নামেন, সেই ম্যাচের থেকে পারফরম্যান্সে পার্থক্য কিছু দেখা যাবে?
অস্কার: আমার হয়ে আমি কেন বলব? দলটার মধ্যে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি না, সেটা আপনারা বলবেন, সমর্থকরা বলবে। যদি মনে হয়, ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ ভালো করছে, তাহলে ডার্বিতেও তার প্রভাব পড়বে।
প্রশ্ন: কুয়াদ্রাতের সময় দলটা দৌড়তেই পারছিল না। কেমন যেন আনফিট মনে হত। কী এমন করলেন, যে পুরো দলটা নড়ে চড়ে উঠল?
অস্কার: পুরো ব্যাপারটাই টেকনিক্যাল। আমি কুয়াদ্রাতের নাম উল্লেখ করতে চাইছি না। তিনি তাঁর মতো করেছেন। কিন্তু ডার্বির দিন দেখলাম, দলটা যখন ডিফেন্স করছে, তখন মিডফিল্ডাররা অনেক দূরে। তাদের থেকেও দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফরোয়ার্ড। দলটা খেলছে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। ফলে মাঝ মাঠে এত ফাঁক-ফোকর যে প্রতিপক্ষ যেখান সেখান থেকে পাস বাড়াচ্ছে আমাদের ডিফেন্সে। এবার ফুটবলাররা তা থামানোর জন্য ছুটছে। কিন্তু একটা পজিশনের সঙ্গে আরেকটা পজিশনের এত বড় গ্যাপ যে দৌড়ে হাঁফিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই ফুটবলারদের ক্লান্ত মনে হত।
প্রশ্ন: আপনি কী করলেন?
অস্কার: দলটাকে তাড়াতাড়ি করে ৪-৪-২ ফর্মেশনে এনে মাঝমাঠে লোক বাড়লাম। তাতে অন্তত জায়গা কিছুটা ভরাট হল। এবার ফুটবলারদের বললাম, ডিফেন্স-মিডফিল্ড আর ফরওয়ার্ড সব সময় একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে থাকবে। যদি ফরওয়ার্ড আক্রমণে যায়, তাহলে মিডফিল্ড এবং ডিফেন্সও একই দূরত্ব রেখে উঠবে। ফলে প্রতিপক্ষ আর গ্যাপ পাচ্ছে না। এবার কোনও কারণে বল প্রতিপক্ষ কেড়ে নিলে, আগে ডিফেন্ডাররা পিছিয়ে গিয়ে পজিশন হোল্ড করত। ফরওয়ার্ড নিজেদের জোনে দাঁড়িয়ে থাকত। আমি ঠিক করলাম, বল হারালে ডিফেন্স আর পিছিয়ে যাবে না। যে অঞ্চলে আমরা বল হারাব, সেখান থেকেই শুরু হবে বল কেডে নেওয়ার লড়াই। যে মুহূর্তে আমার কাছে বল নেই, আমি ডিফেন্ডার। আর গ্যাপ কমে গেছে বলে এখন ফুটবলারদের বেশি ফিট মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: সমর্থকদের জন্য এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন, যে দল প্রথম ছ’য়ে যাবেই?
অস্কার: বলেছি না, কাজ করার আগে আমি বড় বড় কথা বলতে চাই না।
প্রশ্ন: তবুও কিছুতো নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারছেন ?
অস্কার: এতবার করে যখন বলছেন, তখন বলছি, এই মাসটা যেতে দিন। ডিসেম্বরের ম্যাচগুলি ঠিকভাবে ক্রস করলে বলতে পারব, আমরা প্লে অফে যেতে পারব কি না। কারণ, অস্বীকার করার উপায় নেই, পরিস্থিতিটা খুবই কঠিন। খুব ভালো জায়গা থেকে চ্যালেঞ্জটা নিইনি।
প্রশ্ন: তবুও মাঝপথে কুয়াদ্রাতের বিদায় নিয়ে কী বলবেন?
অস্কার: দেখুন, কোনও ব্যর্থতা এলে দলে কিছু তো পরিবর্তন করতেই হয়। এবার ফুটবলারদের তো আর পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ব্যর্থতা এলে কোচকে সরতেই হয়। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.