শ্রমণ দে: দিনগুলি মোর… পুজো(Durga Puja 2024) দোরগোড়ায় এলেই হারানো সময় কড়া নাড়ে হৃদয়ে। উৎসব নিজেকে বদলে নেয় নতুন দিনের ছাঁচে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মন সব সময় পিছনদিকে চলতে চায়। আর তাই পুজোর ভিড়ে খুঁজে বেড়াই কবেকার সব পুজোর দিন! এবারও খুঁজব। লোকারণ্যে হাঁটতে হাঁটতে নাকে এসে পৌঁছবে এগরোলের সুবাস। ডিম, পেঁয়াজ ও সসের আশ্চর্য সম্মিলন। ছোটবেলায় ঠাকুর দেখতে বেরনো মানেই এগরোলের অলৌকিক সুবাস। সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্কস।
আমাদের মফস্বলে এসব খাবার সারা বছর পাওয়া যেত না। পাড়ায় এক ভদ্রলোক স্ন্যাকস বার চালাতেন। তিনি ঝিলের ধারে সাজিয়ে বসতেন পসরা। কিন্তু তিনি রোজ থাকতেন না। আর থাকলেও বাড়ি থেকে অ্যালাও করা হত না। তাই অপেক্ষা, কবে পুজো আসবে। বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরতাম। সদ্য বাড়ির লোক ছাড়া ঠাকুর দেখার পারমিশন মিলেছে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া পুজো খরচ থেকেই এগরোল ও কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে বসা পাড়ার মোড়ে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানে। কেবল শারদ পার্বণেই যার দেখা মিলত। কখনও আশপাশের পাড়ার দোকানেও যে খাওয়া হত না তা নয়। চাউ তখনও এতটা দখলদারিত্ব দেখাতে পারেনি। এগরোলই ছিল পয়লা নম্বরে চয়েস।
মনে পড়ে অর্ডার দিয়ে সেই অপেক্ষার পল-অনুপল। রোলের সুবাস যেন চেতনার একদম গভীরে নেমে যেত! সদ্য কৈশোরে সেই গন্ধ নতুন দিনের ঘ্রাণের মতোই রোমহর্ষক ও চনমনে মনে হত। তার পর যখন তা হাতে উঠে আসত, সে এক আশ্চর্য অনুভব। রোল মোড়ানো সাদা পাতলা কাগজের ভাঁজে ভাঁজে যেন কোন অজানা অনুভূতির প্রদেশের ঠিকানা! পিউবার্টির সময় শরীরে মনে যে ঢেউ, তার সঙ্গে অবিকল মিলে যেত এগরোলের প্রতিটি কামড়ে অনুভব করা রোমাঞ্চ।
তখন ক্লাস নাইন। পাশের বাড়ির অনুপ প্রেমে পড়েছে। সেই মেয়েটিও পুজোর সময় বান্ধবীদের সঙ্গে বেরিয়েছে। আর ঘুরতে ঘুরতে বড়মাঠের প্যান্ডেলের পাশে বাঁশ-কাপড়ে তৈরি হওয়া অস্থায়ী রোল-চাউমিন সেন্টারে জড়ো হয়েছে। আমরাও সেখানে। হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এগরোল। সঙ্গে তাদের মুচকি হাসি। কত যে কথা চোখে চোখে! কেবল অনুপই নয়, সেই মেয়েটির বান্ধবীদের সঙ্গে মনে মনে সংকেত পাঠাতাম আমরা। দেখতাম কী এক হাসির কথায় ওরা হাসতে হাসতে একেবারে গড়িয়ে পড়ছে। সেই বয়সে এমন হাসি, ওয়েদার চেঞ্জের ঠান্ডা হাওয়া আর এগরোলের গন্ধ সব একসঙ্গে মিলেমিশে যেত।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে তিরিশটা বছর। দিনবদলের পৃথিবীতে অনুপ এখন লন্ডনের বাসিন্দা। বাকিরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। আমি একা খুঁজে বেড়াই এগরোলের সুবাস মাখা সেই সব দিন। অনুপের সেই বান্ধবী কেমন আছে? কী যেন নাম ছিল? ওর বান্ধবীদের? কিছুই মনে নেই। কেবল মনে আছে এগরোলের সুবাস। উৎসবের আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় বাড়ির সকলের সঙ্গে বেরলে এখনও যে গন্ধ আমাকে নিমেষে নিয়ে যায় কৈশোরের দিনগুলোয়। যখন বলার চেয়েও জোরাল ছিল না বলা সংলাপ। সেই গোপন সংকেতমালার মাধুর্য ধরা আছে এগরোলের ভাঁজে ভাঁজে। তাই পুজোয় গন্ধটা এলেই অলৌকিক বলে মনে হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.