Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dabaru Review

জীবনের কিস্তিমাতের গল্প বলে ‘দাবাড়ু’, কেমন হল এই ছবি? পড়ুন রিভিউ

নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায় নিবেদিত ‘দাবাড়ু’ একটি অন‌ন্য প্রয়াস।

Rituparna Sengupta's new movie Dabaru Review
Published by: Akash Misra
  • Posted:May 10, 2024 10:39 am
  • Updated:May 10, 2024 10:41 am  

শম্পালী মৌলিক: দাবা নিয়ে সিনেমা, তাও আবার বাংলায়! সেক্ষেত্রে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায় নিবেদিত ‘দাবাড়ু’ একটি অন‌ন‌্য প্রয়াস। যে ছবির পরিচালনায় পথিকৃৎ বসু। প্রথমেই জানিয়ে রাখি, কেবলই দাবার বোর্ড আর চাল-সর্বস্ব ছবি নয় ‘দাবাড়ু’, তার চেয়ে বেশি ফ‌্যামিলি ড্রামা। যে কাহিনি গ্র‌্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ‌্যায়ের জীবনের অনুপ্রেরণায় ডালপালা মেলেছে। ছবিটা উত্তর কলকাতার রক থেকে এক বিস্ময় বালকের উত্থানের আখ‌্যান। দেখতে দেখতে দাবাড়ু রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দর মায়ের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া কিছু মুহূর্ত স্মৃতিতে ধাক্কা দিচ্ছিল বার বার। প্রজ্ঞানন্দ যেখানে যেখানে খেলতে যেতেন, তঁার মাকে দেখা যেত। প্রায় নির্বাক কিন্তু ছায়ার মতো সন্তানের সাফল‌্য কামনায় একা মায়ের উপস্থিতি। প্রজ্ঞানন্দ জিতলে, মায়ের চোখে ঝিলমিল লাগত। তাঁকে কখনওই কিছু বলতে দেখিনি, শুধু আনন্দ-অশ্রুর ইমেজটা মাথায় রয়ে গেছে। মা কি প্রজ্ঞানন্দর তুখড় সব চাল বুঝতেন? আমার জানা নেই। শুধু জানি, মায়ের ভালোবাসা এইরকম-ই হয়। বিরাট হাঁকডাকে থাকে না, কিন্তু একশো শতাংশ গ‌্যারান্টি থাকে। এই ছবিতে খুদে দাবাড়ু আর মায়ের সম্পর্কটাও ততখানি জোরালো।

[আরও পড়ুন: বৈশাখের দহনজ্বালায় মিষ্টি প্রেমের সুবাস আনল মিমি-আবিরের ‘আলাপ’, পড়ুন রিভিউ]

ছবিতে সূর্যর আদলে তৈরি চরিত্র সৌর (সমদর্শী ও অর্ঘ‌্য, দুটি বয়সে)। তার মা (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) দাবা খেলতে জানে। রয়েছে তার দাদু (দীপঙ্কর দে), যার কাছে সৌরর দাবায় হাতেখড়ি। পাঁচ বছরের খুদে, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ‘দে, বল দে’ বলে চেঁচাত আর দাদুর বয়সিদের দাবার বোর্ডে হারিয়ে চলে আসত। এমন বিস্ময় বালককে আগলে রেখেছিল মা আর দাদু মিলে। বাবা (শংকর চক্রবর্তী) জ্যোতিষীর চাকরি করত। কিন্তু মিথ্যে বলে লোকের মন ভোলাতে পারেনি ফলে চাকরি চলে যায়। ততদিনে ছেলেটা রাজা, রানি, সৈন‌্য, হাতি, ঘোড়া, নৌকার চাল রপ্ত করে ফেলেছে। চরম দারিদ্র পিছনে টানছে, আর ছেলেটার অর্জিত প্রাইজ মানিতে হাড়ি চড়ছে সংসারে। দাবার বোর্ডে প্রতিপক্ষের চাপের থেকেও বাড়িতে পাওনাদারের হামলার আতঙ্ক তাকে বেশি তাড়া করত। একজন সহৃদয় প্রশিক্ষক (চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী) পায় একসময়। কিন্তু জিতলেই তো হবে না, ভিন রাজ্যে কিংবা বিদেশে খেলতে যেতে টাকা লাগে। খরচ জোগাবে কে? আর দাবা তো ক্রিকেট-ফুটবল নয় যে, চাকরি জুটে যাবে– এ ছিল সৌরর ব‌্যর্থ বাবার দুশ্চিন্তা। এইভাবে ছেলে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছয়। প্রেম আসে। হঠাৎ মায়ের সঙ্গে কথায় কথায় মেজাজ হারায় সৌর। ব‌্যস, তাল কেটে যায়। মা-ছেলের দূরত্বের শুরুয়াত। বাবা সেতু হওয়ার চেষ্টা করে তবু কি ব‌্যবধান মোছে? এমন সময়েই কোচ বদলে যায়। নতুন কোচের (কৌশিক সেন) টেকনিকের সঙ্গে মেলাতে পারে না ছেলেটা। বাড়িতে সবটা খুলে বলতেও পারে না। দুই কোচের টানাপোড়েন, সংসারে তীব্র অনটন, দাদুর মৃত্যু, মায়ের সংযোগ ছিন্ন হয়ে পড়া– এবারে মগজাস্ত্রের জোরে সৌর কি পারবে জীবনের যুদ্ধে কিস্তিমাত করতে? ছবিতে দেখার।

Advertisement

না, ‘দাবাড়ু’ দেখতে গিয়ে ‘কুইনস গ‌্যামবিট’ মনে পড়বে না। এ হল কলকাতার গলি থেকে এক দাবাড়ুর রাজপথে উত্থানের গল্প। তখন টিভিতে ‘মহাভারত’ চলত, দেওয়ালে দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি তারা দেখা যেত। আমি দাবা বিশেষজ্ঞ নই। চেন্নাই বা জার্মানিতে সৌরর চৌষট্টি খোপের লড়াইয়ের খুঁতও ধরতে পারব না। তবে এলো রেটিং, মাস্টার, গ্র‌্যান্ডমাস্টার, র‌্যাপিড, ক্লাসিক এসব না জানলেও ছবিটা উপভোগ করতে অসুবিধা হবে না। কারণ পরিচালক জীবনসংগ্রামটা ধরতে পেরেছেন। চিত্রনাট‌্য লিখেছেন অরিত্র বন্দ্যোপাধ‌্যায়। আর সংলাপ অর্পণ গুপ্ত।  ছোট্ট সৌরর রোলে সমদর্শী সরকার মন কেড়ে নেয়। ভালো লাগে কিশোর সৌরর চরিত্রে অর্ঘ‌্য বসু রায়কে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অসহায় অথচ হাল না-ছাড়া মায়ের ভূমিকায় চরিত্রের চাহিদা পূরণ করেছেন। নীরব কান্নার দৃশ্যে তিনি খুব ভালো। যত্নবান প্রশিক্ষকের রোলে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী ভালো অভিনয় করেছেন। অনড়-ইগোইস্ট আরেক কোচের চরিত্রে কৌশিক সেন এফর্টলেস। তবু বলব, ছবির সেরা অভিনয় ‘দাদু’ দীপঙ্কর দে-র। সুদখোর রাজুর চরিত্রে মানিয়েছে খরাজ মুখোপাধ‌্যায়কে।

আর ভালো লাগে ‘ঝগড়া করি চল’ গানটা। ছবির সবটা নিখুঁত নয়। অতি নাটকীয়তা কমানো যেত। মায়ের অসহায়তা দেখাতে গিয়ে তাকে সারাক্ষণ আটপৌরে শাড়িতে না দেখালেও চলত। ক্লাইম‌্যাক্সে মায়ের চেন্নাইযাত্রা অন‌্যরকম হতেই পারত। আর বিদেশে একটু আউটডোর শট থাকবে না! বিশ্বনাথ বসু ও সংঘশ্রী সিংহ মিত্র ভালো অভিনেতা। তবে তঁাদের চরিত্র দুটো বড্ড একমাত্রিকভাবে বোনা হয়েছে। এই ত্রুটিগুলো পাশে সরিয়ে রেখে বলা যায় ছবির আবেগ বড্ড খাঁটি।

[আরও পড়ুন:ওটিটির পর্দায় সঞ্জয় লীলা বনশালির ঝলমলে ‘থিয়েটার’, কেমন হল ‘হীরামাণ্ডি’?]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement