Advertisement
Advertisement

Breaking News

Putul movie review

আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের ‘পুতুল’, পড়ুন রিভিউ

কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল এই ছবি।

Indira Dhar Mukkherjee's movie Putul review
Published by: Akash Misra
  • Posted:December 28, 2024 5:30 pm
  • Updated:December 28, 2024 5:56 pm  

আকাশ মিশ্র: ঠিক যেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। রোজকার ব্যস্ত জীবনের চলার পথে, আশপাশগুলোকে দেখেও, যেন না দেখার ভান করা। ঠিক যেমন, রঙিন আলোর ভিড়ে একাকীত্বকে দূরে সরিয়ে রাখা। ঠিক যেমন, মনের ভিতর স্বার্থের বসবাস। ঠিক যেমন, ভিড়ের মাঝে একলা হয়ে যাওয়া। হাজার কটাক্ষ পেরিয়েও, নিজের মতো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা। পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের ‘পুতুল’ ছবি উপরের প্রত্যেকটি বিষয়কে যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। কীভাবে আমরা নিজের উঠুনটুকু শুধু বাঁচিয়ে, বাইরের জগত থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখি, তাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ইন্দিরা। আর এ ব্য়াপারে তিনি বেছে নেন ছোট্ট একটা মেয়ে পুতুল ও তার মা ভেলিকে। রাস্তার ধারে থাকা এই মা-মেয়েই যেন আয়না ধরে সভ্যসমাজের সামনে। টেনে নিয়ে আসে, এমন কিছু জলজ্য়ান্ত ইস্যু, যা কিনা এই সোশাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত সমাজের বাইরের অন্ধকারকে স্পষ্ট করে তোলে।

‘পুতুল’ একটি ছোট্ট মেয়ের গল্প। যে রাস্তায় বড় হচ্ছে মায়ের আদরে। ছবি শুরুতেই ছোট্ট মেয়ে পুতুল আস্তাকুড় থেকে খুঁজে পায় একটি সুন্দর পুতুল। যার ছিল কোঁকড়া চুল। কিন্তু হঠাৎই পুতুলের হাত থেকে সেই পুতুল কেড়ে নেয় অন্য পথশিশুরা। পুতুল ফিরে পেতে, ছুটতে থাকে পুতুল। মায়ের কাছে বায়নাও করে নতুন পুতুলের। কিন্তু গরীব মা, তাকে নতুন পুতুল দিতে না পারলেও, তার সামনে আয়না ধরে। আর বলে, তুই তো আমার আসল পুতুল, যে পুতুল গোটা দুনিয়াতেও পাওয়া যায় না। এই ছোট্ট দৃশ্যতেই যেন পুরো ছবির মুড তৈরি করে ফেলেন পরিচালক। আর গল্প এগিয়ে নিয়ে যান একজন সন্তানহারা মা, একাকীত্বে ভোগা এক নারীর মানসিক অবসাদ, মায়ের কথায় ওঠবোস করা এক রূপান্তরকামী ছেলে এবং এক আইনজীবীর জীবনের মধ্য়ে দিয়ে। ‘পুতুল’ এই প্রত্যেকটি চরিত্রের আসল রূপকেই সামনে নিয়ে আসে। পুতুল সামনে নিয়ে আসে রাস্তায় বড় হওয়া সেই প্রত্যেকটি পথশিশুদের জীবন ও ভবিষ্যতকে। পুতুল সামনে নিয়ে আসে অর্থের সঙ্গে মায়ের অন্তরের লড়াইকে।

Advertisement

পরিচালক ইন্দিরা এসবের সমাধান খুঁজেছেন ছবির শেষে এবং এক আশার আলো জাগিয়েছেন প্রত্যেকটি দর্শকের মনে। খুব যত্নে ইন্দিরা সমস্যা ও সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। আর তাই তো সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে পুতুল মনের কোণে বাসা বাঁধে। আর তাই তো আয়নার সামনে দাঁড়ালেই প্রশ্ন আসে, নিজের জীবন ছাপিয়ে, বাইরেটা এড়িয়ে যাওয়া কী সম্ভব? উচিত?

অভিনয়ের দিক থেকে প্রত্যেকেই দুর্দান্ত। তনুশ্রী শঙ্কর, সুজন মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রত্যুষা রোজলিন, পাপিয়া রাও বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়, প্রত্য়েকেই নিজের জায়গায় একেবারে পারফেক্ট। তবে পুতুলের চরিত্রে ছোট্ট ভেনেসা ফ্রেমে আসতেই মন জয় করে নেয়। কিন্তু এই ছবিতে যিনি সবচেয়ে বেশি নজর কাড়েন, তিনি হলেন মুমতাজ সরকার। ভেলির চরিত্রে নিজের একশো শতাংশ দিয়েছেন তিনি। আদবকায়দা, কথা বলার স্টাইল যেভাবে অনুকরণ করেছেন তা সত্যিই বাহবা পাওয়ার মতো। ছবির বেশ কিছু দৃশ্যে স্মিতা পাটিলকে মনে করায় মুমতাজ। পুতুলের মায়ের চরিত্রে মুমতাজ যে সঠিক বাছাই ছিল, তা স্পষ্ট গোটা ছবিতে।

প্রথম ছবি হিসেবে ইন্দিরা, ছবির মধ্যে দিয়ে সমাজকে বার্তা দিয়েছেন। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছবির টান টান চিত্রনাট্য ছবিকে খুবই সহজভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে ছবির সম্পাদনায় আরেকটু যত্ন থাকা উচিত ছিল। একই দৃশ্য এবং মাঝে মধ্য়েই একই সংলাপের ব্যবহার ছবির গতিতে স্লথ করে। বাদ বাকি ‘পুতুল’ অবশ্যই দেখার মতো একটা ছবি। যা কিনা সহজ গল্পের মধ্যে দিয়ে মনকে ধাক্কা দিয়ে যায়।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement