চারুবাক: সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) গোয়েন্দা প্রদোষচন্দ্র মিত্রর গল্পে পাঠক ও দর্শকের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আকর্ষণ বলতে গেলে ফেলু মিত্তির, লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায় ও তোপসেই! অধিকাংশ দর্শকের ফেলুদার গল্প প্রায় মুখস্ত। ‘নয়ন রহস্য’ (Nayan Rahasya) দেখতে বসে লক্ষ্য করলাম আমার পাশে বসা কিশোরী আপন মনে একাধিক চরিত্রের সংলাপ বলে যাচ্ছে। ব্যস, এখানেই তো ছবির সাফল্য!
এমনিতে ‘নয়ন রহস্য’ গল্পে অ্যাকশন তেমন নেই, ফেলুদার মগাজস্ত্রের ব্যবহারও অনেক কম, শুধুমাত্র শেষ পর্বে এসে কিঞ্চিৎ দেখা যায়। এবারে কথাবার্তা চালানোর ব্যাপারটা ফেলুবাবু অনেকটাই দিয়েছেন লালমোহনবাবুকে। হ্যাঁ, মানতেই হচ্ছে সেই কাজটি যথাসাধ্য সম্পন্ন করেছেন অভিজিৎ গুহ, যদিও কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি ঘটেছে ক্যারিক্যাচের করতে গিয়ে। তবে খুদে দর্শকরা মজাই পাচ্ছে মনে হল। জাদুকর সুনীল (দেবনাথ) তাঁর জাদু প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ রেখেছেন হাতে এসে পরা বিস্ময় কিশোর নয়নকে। যে সংখ্যা দিয়ে উত্তর দেওয়া যায় এমন যে কোনও প্রশ্নের উত্তর চোখ বুজে বলে দিতে পারে। সুতরাং এমন একটি সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে একাধিক লোক নিজের স্বার্থে কবজা করতে চাইবে – সেটাই স্বাভাবিক।
কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাই। যায় ফেলু মিত্তিরের দলও। আর দক্ষিণ ভারতের আউটডোর মানেই চোখের আরাম। সমুদ্রের পাড়ে মহাবলীপুরম মন্দিরের চত্বর, পাঁচতারা হোটেলের মধ্যে ঘটতে থাকা ঘটনা মাকড়সার জালের মতো দর্শকদেরও জড়িয়ে নেয়। সেজন্য অবশ্যই কৃতিত্ব পরিচালক সন্দীপ রায়ের (Sandip Ray)। তিনি ফেলুদার হাতে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়েও গল্পে সত্যজিতের মেজাজ ও বাঁধুনিকে এতটুকু আলগা হতে দেননি। আবার উগান্ডা থেকে আনা দৈত্যের চেহারার ‘গাঙ্গওয়ানি’ কে অন্তিম দৃশ্যের আগে পর্যন্ত লুকিয়ে রেখে ‘নাটক’ জমিয়ে দিয়েছেন।
তবে, গল্প পড়া না থাকলেও একটু বুদ্ধিমান দর্শক আন্দাজ করতেই পারবেন আসল কে অপরাধী। কিন্তু ছবির জমজমাট মেকিং, আর সত্যজিতের তৈরি ফেলুদার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ক্ষণে ক্ষণে উপস্থিতি অবশ্যই দর্শক মনে এক ধরনের নস্ট্যালজিয়া নিয়ে আসে। এই ছবির আরও বড় আকর্ষণ হল প্রত্যেক শিল্পীর জম্পেশ অভিনয়। সহশিল্পীদের মধ্যে মোহন আগাসে, পূণ্যদর্ষণ গুপ্ত, সুপ্রিয় দত্ত, রাজেশ শর্মা, প্রত্যেকেই স্বল্প উপস্থিতিতেই জমিয়ে দিয়েছেন। নয়নের ভূমিকায় অভিনব বড়ুয়া শুধু চোখ আর মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে নয়নের অসহায়তা সুন্দর প্রকাশ করেছে।
সন্দীপ বলেছিলেন, ‘হত্যপুরী’ বানানোর সময়েই অভিনবকে দেখেই তাঁর মাথায় এই গল্প নিয়ে ছবি করার পরিকল্পনা আসে। “ও বড় হয়ে ওঠার আগেই কাজটা করতে চেয়েছিলাম। হয়েও গেল!” সব শেষে বলা যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ফেলুদার চরিত্রে এখনও কিছুদিন চালিয়ে যেতে পারবেন মনে হচ্ছে। সন্দীপকে অনুরোধ – তাঁর পছন্দমাফিক আরও দু-তিনটে ফেলুদা কাহিনি বড়পর্দায় আসুন ইন্দ্রনীলকে নিয়ে।
ছবি – নয়ন রহস্য
অভিনয়ে – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অভিজিৎ গুহ, আয়ুষ দাস, মোহন আগাসে, পূণ্যদর্ষণ গুপ্ত, সুপ্রিয় দত্ত, রাজেশ শর্মা প্রমুখ
পরিচালনায় – সন্দীপ রায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.