সন্দীপ্তা ভঞ্জ: সাহিত্যেপ্রমী বাঙালিদের বোধহয় বোধোদয়ের আঁতুরঘর থেকেই গোয়েন্দা, রহস্যপ্রীতি রয়েছে। তাই তাঁর মগজাস্ত্রের জড়িপ নিতে গোয়েন্দাপ্রেমী দর্শকদের কৌতুহলী মন স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকে, তাই নয় কি? শহরে আবারও এক নতুন গোয়েন্দা। আর পাঁচজন ‘সত্যান্বেষী’র সঙ্গে আবার এই ডিটেক্টিভের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অমিল অনেক! যে নিজেকে ‘ভাড়া করা টিকটিকি’ বলেই সভ্য সমাজে অনায়াসে পরিচয় দেয়। তা নতুন এই গোয়েন্দা কেমন? পরিচয় করালো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্রাইডে’। ডাকাবুকো মহিলা গোয়েন্দা ‘লেডি চ্যাটার্জি’ ওরফে যাজ্ঞসেনী চট্টোপাধ্যায়।
‘শুভ মহরৎ’-এ ঋতুপর্ণ ঘোষ দেখিয়েছিলেন মধ্যবিত্ত ‘রাঙাপিসি’র গোয়েন্দাগিরি। তারপর অরিন্দম শীল নিয়ে এলেন সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘মিতিন মাসি’কে। এবার চেনা-পরিচিত গোয়েন্দা ছকে না পড়া ‘চ্যাটার্জি’ দেবী এলেন। তাঁর বুদ্ধি যেমন, তেমনই তাঁর গায়ের জোর। যেখানে আইন আটকে যায়, সেখানে গোয়েন্দা ‘লেডি চ্যাটার্জি’র আবিভার্ব হয়। বলাই বাহুল্য অপরাধীদের খেল খতম করতে তাঁর বুকের পাটা আর মুখের কথাই যথেষ্ট! আর এহেন এক ডাকাবুকো মহিলা গোয়েন্দার চরিত্রে অরুণিমা ঘোষ। ‘লেডি চ্যাটার্জি’র নিজস্ব একটা জগৎ রয়েছে, যেখানে অনধিকার প্রবেশ নিষেধ। রহস্যের জট খোলার বাইরে গিয়ে তাঁর ‘মি টাইম’ মাদকের সঙ্গেই কাটে। মুখের ভাষা আর আচার-ব্যবহারের জন্য এহেন যাজ্ঞসেনীর নাম থুড়ি ‘দুর্নামে’র পাল্লাই ভারী বেশি। যেসব অপরাধীদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনকেও বেগ পেতে হয়, সেখানে বুদ্ধির জোরে কামাল করে ‘লেডি চ্যাটার্জি’। তার হাতেই ঘটনাচক্রে এসে পড়ে সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের গৃহকর্ত্রীর খুনের রহস্য সমাধানের ভার।
মল্লিক বাড়ির খুনের তদন্ত। হাইপ্রোফাইল কেস। ঘুমের মধ্যে হাঁটা অর্থাৎ স্লিপওয়াকের মাঝেই কীভাবে একজন খুন করতে পারে? যাজ্ঞসেনীর ভাষায় সেই মামলা ‘সাল্টাতে’ গিয়ে সে নিজেও জটিল ধাঁধায় জড়িয়ে পড়ে। রহস্য সমাধানের ফাঁকেই পরিচালক সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায় ‘লেডি চ্যাটার্জি’র ডাকাবুকো হয়ে ওঠার গল্প বলেন। ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে ওঠে তার শৈশব, তিক্ত অতীতের কথা। গোপন চরবৃত্তির নেপথ্যে একটাই উদ্দেশ্য, টাকা উপার্জন করা আর মাদক নেশার জোগান দেওয়া। এহেন ‘লেডি চ্যাটার্জি’ মল্লিক বাড়ির ঘুঘুর বাসা ঘেঁটে গুপ্ত অতীতের খোঁজ পায় এবং সেই সূত্র ধরেই অপরাধীদের খুঁজে পায়। তবে তার রহস্য সমাধানের ধরন আলাদা।
বড় ব্যবসায়ী পরিবার। ক্ষমতার অলিন্দে থাকা সদস্যদের সঙ্গে অতীত শত্রুতা। সেইসঙ্গে যৌবনের কামলোভের ফল… এহেন নানাবিধ রসদ রয়েছে সিরিজে। তবে গোয়েন্দা গল্পের স্বাদ আলাদা হলেও চিত্রনাট্যের বাঁধন বড়ই আলগা। বিশেষ করে প্রথম কয়েকটা পর্বে। বেশ কিছু দৃশ্য অতিরঞ্জিত বলেও মনে হয়। পোক্ত গোয়েন্দাপ্রেমী দর্শকরা অনায়াসেই সেখানে ‘লুপ হোলস’ খুঁজে পাবেন। খুনের সঙ্গে জড়িতদের মোটিভের বিষয়টায় আরেকটু শাণ দিতে হত। তবে দর্শকদের পাতে ভিন্নস্বাদ পরিবেশনের প্রচেষ্টা মন্দ নয় সাগ্নিকের। ডাকাবুকো নারী গোয়েন্দা চরিত্রে বেশ ভালো অরুণিমা ঘোষ। অন্যদিকে মল্লিক বাড়ির সমকামী সদস্যের চরিত্রে ‘সারপ্রাইজ’ সবুজ বর্ধন। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেবাশীষ মন্ডলকে টাইপকাস্ট বলে মনে হল।
বাংলা সাহিত্যে যেমন গোয়েন্দা চরিত্রের তালিকা লম্বা, ঠিক তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রূপোলি পর্দায় তাঁদের আনাগোনা। বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও রহস্য-রোমাঞ্চের কোনও অভাব নেই। ব্যোমকেশ, ফেলুদাকে নিয়ে কাটাছেঁড়ার অন্ত নেই। দর্শকরাও ততোধিক তিতিবিরক্ত! সাহিত্যের পাতা থেকে যদিও মিতিন মাসি কিংবা কাকাবাবু-কিরিটিরা রুপোলি পর্দায় মাঝেমধ্যে উঁকি দেন! তবে বক্সীবাবু, ফেলু মিত্তিরদের কদরই পরিচালকদের কাছে বেশি। ওদিকে সোনাদাও রয়েছেন তালিকায়। সেই তালিকায় এবার ‘লেডি চ্যাটার্জি’। তার ভিন্নস্বাদের রহস্য সমাধানের গল্প ‘বিঞ্জ ওয়াচ’ হিসেবে মন্দ নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.