Advertisement
Advertisement
Parikrama Goutam Ghose

‘পরিক্রমা’য় ফিরে এল ‘নর্মদা বাঁচাও’-এর সেই আর্তি, কেমন হল গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই ছবি?

কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এই ছবি।

Director Goutam Ghose movie Parikrama review
Published by: Akash Misra
  • Posted:December 10, 2024 2:49 pm
  • Updated:December 10, 2024 2:49 pm  

ইন্দ্রনীল শুক্লা: জলই প্রাণ বাঁচায় আবার জলই বন্যায় ভাসায়। জল থেকেই মাছ এবং জলেই নৌকাডুবি। জলেই পবিত্র নদী, আবার জলেই নানা দূষণ। জল এবং মানুষের জীবনের সম্পর্ক বড় অদ্ভুত। আর এই জলের প্রেক্ষাপটে যখনই ছবি গড়া হয়েছে, প্রতিবারই আলাদা ভাবে ধরা দিয়েছেন, অবাক করেছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। নদী ‘পার’ হওয়ার গল্প হোক, নদীর পাড়ে শ্মশানে কমলকুমার মজুমদারের কাহিনি থেকে ‘অন্তর্যলী যাত্রা’ হোক কিংবা মাণিক বাঁড়ুজ্জ্যের উপন্যাস থেকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’। জলের গৌতম ঘোষ যেন আলাদাই শক্তিশালী। এহেন ‘ওয়াটার এলিমেন্ট’ এর নবতম সংযোজন ‘পরিক্রমা’।

নর্মদা নদীতে বাঁধ দিতে গিয়ে সেখানকার বহু গ্রামবাসী কেমন করে ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন, জীবনটাই কার্যত ভেসে গিয়েছে, ক্ষয়-ক্ষতি সীমাহীন- এইসব মারাত্মক তথ্যগুলো উঠে এসেছে ‘পরিক্রমা’ তে। ফিরে এসেছে ‘নর্মদা বাঁচাও’-এর সেই আর্তি। প্রাথমিকভাবে এটুকু শুনে মনে হতে পারে এ বুঝি কোনও তথ্যচিত্র। না তা নয়। এতে কাহিনির মধ্যস্থতায় তথ্যগুলো পরিবেশিত হয়েছে। এহেন ডকু-ফিচারটি কেমনভাবে এগিয়েছে দেখা যাক।

Advertisement

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইতালিয়ান পরিচালক অ্যালেসান্দ্রো পরিবেশ নিয়ে ছবি তৈরি করেন। তিনি নতুন ছবি করার কথা ভাবছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের নর্মদা নদীকে নিয়ে। নর্মদা নদীকে ঘিরে পরিবেশ বাঁচাও, নদী বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও- ইস্যুতে যে দেশে-বিদেশে বহুল চর্চা হয়েছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মেধা পাটকরের ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর কথা কে না জানেন! বহু বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে সেই আন্দোলন।

নদী বিষয়ক গবেষক তথা লেখিকা রূপা এবং ক্যামেরাপার্সনকে নিয়ে ভারতে এসে শ্যুটিং শুরু করেন অ্যালেসান্দ্রো। সে সময়ই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় লালা নামে এক আঞ্চলিক বালকের। রঙ বেরংয়ের পাথর, কবচ, মালা ইত্যাদি বেচেই সে রোজগার করে। অ্যালেসান্দ্রো এবং লালা-র কথা এবং আদান-প্রদানেই ছবিটা এগিয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার অ্যালেসান্দ্রোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা মার্কো লিওনার্দি, যাঁকে ‘মারাদোনা দ্য হ্যান্ড অফ গড’, ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো’র মতো ছবিতে আমরা পেয়েছি। রূপার ভূমিকায় চিত্রাঙ্গদা সিং এবং ক্যামেরাপার্সনের ভূমিকায় কলকাতার মঞ্চাভিনেতা গৌতম সরকার ভাল অভিনয় করেছেন। বালাক লালার ভূমিকায় আরিয়ান বাদকুলের সারল্যমাখা সাবলীল অভিনয় মনে রাখার মতো।

লালার কথাতেই বেরিয়ে আসে গৃহহীন, মাতৃহারা একটা ছোট ছেলের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প। অ্যালেসান্দ্রো নিজের ছবির কাজের পাশাপাশি তার নিজের মাতৃহারা পুত্রের সঙ্গে লালার মিল খোঁজার চেষ্টা করেন। লালার জার্নির সঙ্গী হওয়াটাই নর্মদা নদী পরিক্রমার মতো। এতেই সামনে আসে লালার অতীত। জানা যায়, কেমন করে বাঁধ দিয়ে নর্মদাকে বেঁধে দেওয়ার ফলে নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছে লালাদের জমি আর ঘর। তবে লালা এখনও বিশ্বাস করে তার বাবা-মা টিলা পাহাড়ের উপরে আদিবাসীদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে । তাকে সেই খোঁজে এগিয়ে দিতে চান অ্যালেসান্দ্রো ও অন্যরা।
নর্মদার উপর বাঁধ দেওয়ার সেই ঘটনা যে কত মানুষের চিরস্থায়ী ক্ষতি করেছে তা তীব্রভাবে উঠে আসে ছবিতে। অ্যালেসান্দ্রো-র মধ্য দিয়ে রাগ প্রকাশ করতে চেয়েছেন যেন গৌতম-ই। এই রূঢ়, কর্কশ বাস্তবের পাশাপাশি চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে গৌতম ও তাঁর পুত্র ঈশানের ক্যামেরায়। এ ছবিটা বড় পর্দায় না দেখলে আসল রসটা মিলবে না। আর নদীর সৌন্দর্যের ঠিক পাশেই এই ছবিতে অসুখী মুখে বসে ঘর হারানো চরিত্রেরা। সেখানেই এই ছবির টান!

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement