Advertisement
Advertisement
Bohurupi Review

কেমন হল নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘বহুরূপী’? ছবি মুক্তির আগেই পড়ে নিন রিভিউ

ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ৮ অক্টোবর।

Bohurupi Review: Nandita Roy and Shiboprosad Mukherjee's upcoming Film Review
Published by: Akash Misra
  • Posted:October 7, 2024 4:37 pm
  • Updated:October 8, 2024 3:40 pm

‘বহুরূপী’ সিনেমার গল্প চোর-পুলিশ খেলার মন্ত্রণার উপর প্রতিষ্ঠিত। দু’জনের ভাগ্যকে এক-সুতোয় বেঁধেছিল অতীত। বর্তমান তাদের দাঁড় করায় সিস্টেমের ভিতরের পচনের বিরুদ্ধে। গিরগিটির মতো, রং বদলে যায় খাকি উর্দি ও ডাকাতিয়া সাজপোশাকের। ছবি মুক্তির আগেই পড়ে নিন রিভিউ(Bohurupi Review)। লিখেছেন, প্রিয়ক মিত্র। 

প্রথমেই বলে রাখা ভাল, নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বহুরূপী’ আদতে বহুরূপী সম্প্রদায় বা লোকায়ত এই সংস্কৃতি সংক্রান্ত কোনও ডকুফিচার গোত্রের সিনেমা নয়। হ্যাঁ, একশোবার এই ছবির মূল ভিত্তি একটি সত্য ঘটনা, কিন্তু এর আখ্যানভাগ আদতে চিরায়ত ‘চোর-পুলিশ’ খেলার মন্ত্রণার উপর দাঁড়িয়ে।
বিশ্বজুড়েই এমন ছবি অজস্র হয়েছে। স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’-এ যেমন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত তুমুল জোচ্চোর ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবেগনালে জুনিয়রের সঙ্গে এফবিআইয়ের দুঁদে এজেন্ট কার্ল হ্যানরাটি (টম হ্যাংক্‌স) বিড়াল-ইঁদুর দৌড় দেখিয়েছিল। ‘নেটফ্লিক্স’-এর ‘নার্কোস’ সিরিজ অনেকাংশেই এই দৌড়ের গল্পই বলে, কেবল তা আরও হিংস্র, আরও লোলুপ এবং হত্যায় ঢাকা। একুশ শতকের গোড়া থেকে বলিউডে তৈরি হওয়া ‘ধুম’ ফ্র্যাঞ্চাইজি হোক, বা অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘ডন’-এর রিমেক, বা আরও বেশ কিছু পরে শাহরুখ খান ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি অভিনীত ‘রইস’– বারবার এই দৌড় আমরা দেখেছি।

Advertisement

এসব ন্যারেটিভে মাঝে মাঝে পুলিশ কখনও চোরের প্রতি সমব্যথী হয়ে উঠেছে, কখনও-বা হালকা প্রেমের চোরাটান বা যৌনতার টেনশনও ফুটে উঠেছে সেই সমীকরণে (‘ডন টু’-এ শাহরুখ খান ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কেমিস্ট্রি, ‘খলনায়ক’ সিনেমায় সঞ্জয় দত্ত ও মাধুরী দীক্ষিতের মন-রসায়ন স্মর্তব্য)। ‘রইস’-এ এক দৃশ্যে দুর্ধর্ষ চোরাকারবারি রইসের (শাহরুখ খান) ফোন ট্যাপ করতে গিয়ে তার প্রেমালাপ শুনে ফেলে তদন্তকারী অফিসার (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি)। তার মুখে ফুটে ওঠে আলতো হাসি– অবজ্ঞার, আবার গোপন ভাল লাগারও। শেষাবধি, পুলিশ ও চোরের এই সম্পর্ক আদতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার, সংঘাতের, না কি এমন এক বোঝাপড়ার, যা সাধারণের আওতার বাইরে? অনুরাগ কাশ্যপের ‘রামন রাঘব ২.০’-র শেষে পুলিশ এবং খুনি ব্যাটন বদলাবদলি করে। ততটাও যদি না হয়, অন্তত কোথাও একটু নরম তো হয় মন? জেতা-হারার কোনও না কোনও সীমান্তে তো এসে দাঁড়াতেই হয়!

‘বহুরূপী’-র সময়কাল গত শতকের শেষার্ধ। গঙ্গাপাড় জুড়ে যে বিস্তীর্ণ জুটমিল এলাকা, যেখানে কারখানার চিমনি বা অবিরত সাইরেনের আড়ালে অভাব-অনটন, শ্রমিক ইউনিয়ন রাজনীতি, বিশ্বাসহনন ও সংঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে, সেখানেই বিক্রম প্রামাণিক ও পুলিশ সুমন্ত ঘোষালের জীবনের নাড়া বঁাধা হয়ে যায়। অপরাধী না-হয়েও অপরাধের বোঝা ঘাড়ে নেওয়া, পরিবার ও সমাজের কাছে অন্যায়ভাবে ত্যাজ্য হওয়া বিক্রমকে শেষমেশ অপরাধীই বানায় বটে, কিন্তু সে সহিংস নয়। মানুষের হয়ে, মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য একটি অপরাধতন্ত্র সে বয়ন করে। সেখানে কোথাও লোভ-লালসার ঠঁাই নেই, বরং রয়েছে এক ধরনের সমান্তরাল রিপাবলিক। আর, এর উল্টো দিকে, আইনের আড়াই পায়ে বাঁধা থাকে সৎ, আদর্শবাদী, ব্যক্তিত্ববান অফিসার, সুমন্ত ঘোষাল। অঞ্জন চৌধুরীর ‘শত্রু’, ‘নবাব’, বা ‘ইন্দ্রজিৎ’ কপ ট্রিলজির রঞ্জিত মল্লিক সেই চরিত্রে খানিক ঘাপটি মেরেই থাকেন। একজন ব্যাঙ্ক-ডাকাত বনাম এক রোল মডেল দারোগা– এই সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব ক্রমে ধূসর হতে থাকে।

Shiboprosad Mukherjee on his weight loss Diet for Bohurupi

এই দু’জনের ভাগ্যকে এক-সুতোয় বেঁধেছিল অতীত। কিন্তু বর্তমান আদতে এই দু’জনকেই দাঁড় করায় রাষ্ট্র বা ব্যবস্থার ভিতরের পচন ধরা, দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের বিরুদ্ধে। দু’জনেই সেই ব্যবস্থার বিছোনো জালে জড়িয়ে যায়। গিরগিটিরই মতো, রং বদলে যায় খাকি উর্দির ও ডাকাতিয়া সাজপোশাকের।

আর, এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বহুরূপী সম্প্রদায়। তারা আদতে নেপথ্য খেলুড়ে, যারা এই আবহমান লোকজ সাংস্কৃতিক অভ্যাসটিকে ধার দেয় লড়াইয়ের স্বার্থে। তা’বলে কি ব্যাঙ্কডাকাতিকে ‘লড়াই’ বলতে হবে? কিন্তু অবহেলিত শিল্পী, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সর্বহারা ব্যবসায়ী, লকআউটে কর্মহারা মজুর ও যাত্রাপালার ডিরেক্টর, গ্রামের পিকপকেট– প্রত্যেকেই কোথাও না কোথাও তো মার খাওয়া। তাদের আবছা, রংহীন জীবনে তাই রং ঢালছে বহুরূপীর পোশাক ও সজ্জা। একই সঙ্গে, এই ছবিতে পুলিশ ও ডাকাতের যে-দাম্পত্য সমান্তরাল, তা বেশ আগ্রহব্যঞ্জক। একদিকে রুচিশীল ও সমস্যাজর্জর, অথচ উপরিতলে নিরাপদ এক বৈবাহিক জীবনের আলাপ, অন্যদিকে সারল্যের মধ্যেও উদ্দামতা ও অনিশ্চয়তার প্রেম ও মিলনের সরগম– যেন আশ্চর্য এক বৈপরীত্য ও সেতুবন্ধনকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে চলল। অভিনয়, চিত্রগ্রহণ, সংগীত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে, কিন্তু শারদীয় আবহে, নানা সংকটে ও টানাপোড়েনে এই ছবির অন্য এক আকর্ষণ রয়েই যাবে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement