কিশোর ঘোষ: পেলের (Pele) মতো ছেলে! ”যে শক্তিতে দূরপাল্লার শট নেয় ঠিক যেন সাইফাই সিনেমার নায়ক! বিদ্যুতের গতি, গায়ে বুনো মোষের মতো শক্তি। আমার ধারণা বড় বক্সের মাথায় দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে শট নিলে জাল ছিঁড়ে ফেলবে এই ছেলে। কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe) আমার ফেভারিট।” শনিবার বিকেলে একদমে কথাগুলো বলছিলেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ময়দানের এক ব্যর্থ ফুটবলার। খেলা ছেড়ে কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের দোকানদার তিনি। তাঁর মিনি বিপণীর দেওয়ালে ‘ফ্রান্সের পেলে’র ছবি। মুচকি হেসে বলেন, “মেসির (Lionel Messi) সাপোর্টাররা দুঃখ পাবেন, কিন্তু কবিগুরু বলেছেন, সত্যরে লও সহজে। এবারও মেসির স্বপ্ন চুরমার হবে। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাছে ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এমবাপে।”
ফাইনালের আগেভাগে ময়দানের ব্যর্থ ফুটবলারের সুরেই ব্রাজিলীয় (Brazil) কিংবদন্তি জিকো (Zico) বলেন, “মন বলছে মেসি, যুক্তি এমবাপের পক্ষে।” পেলের জেরক্স কপি! বয়স তেইশ। ইতিমধ্যে একটি বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছেন। হয়তো পরেরটাও, হয়তো জেতেননি। না জিতলেও কম করে আরও ১২ বছর মূলস্রোতে খেলবেন। সুস্থ থাকলে, আরও তিনটি বিশ্বকাপে খেলার কথা। কেরিয়ার কোথায় শেষ করবেন এমবাপে! খেলোয়াড় জীবনে তিনটে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। ১৯৫৮, ৬৬ ও ৭০। এমবাপে কি ছাপিয়ে যাবেন?
সমকালীন ফ্রান্স (France) দলের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা ১৮ ছুঁই ছুঁই বয়সে বিশ্বকাপ জেতেন। সেবার গোটা টুর্নামেন্টে বিদ্যুৎ গতির বুলডোজার দৌড়ে নাস্তানাবুদ হয় বিপক্ষ। দুরন্ত খেলেন ফাইনালেও। ক্লাব পর্যায়তেও খেল দেখাচ্ছে ছেলে। এমবাপে মোনাকো ছেড়ে পিএসজি-তে যোগ দেওয়ার পর ২০১৭-১৮, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ সালের ফ্রেঞ্চ কাপ, ‘ক্যুপ দ্য ফ্রান্স’ চাম্পিয়নশিপ জেতে পিএসজি। অন্যদিকে ২০১৮-র বিশ্বকাপ থেকেই পেলের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়। এমবাপে ১৮ বছরের কম বয়সি দ্বিতীয় খেলোয়াড় যিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছেন। প্রথম জন স্বয়ং পেলে।
তথাপি স্কোরবোর্ড গাধা। বিশ্বকাপ না জিতেও ইউসেবিও, খুলিট, বাজ্জিওরা সেরা। সেরাই থাকবেন। এমবাপেকেও কেবল বিশ্বকাপ দিয়ে মাপা ঠিক হবে না। কারণ ইতিমধ্যে অসাধ্যসাধন করেছেন। যে সময়ে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo), নেইমার জুনিয়ররা ফুটবল খেলছেন, সেই পৃথিবীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বতন্ত্র ঘরানা তৈরি করেছেন। মেসির মতো ড্রিবল-শিল্পী নন, রোনাল্ডোর মতো নিখুঁত স্ট্রাইকার নন। নেইমারের মতো দুলকি চালে ডিফেন্স চেরা দৌড় নেই। কিন্তু যা আছে তা সামলাতে নাভিশ্বাস ওঠে বিশ্বসেরা ডিফেন্ডারদের। কী আছে?
ফুটবলের প্রাথমিক পাঠে দুরন্ত ছাত্র এমবাপে। নিখুত রিসিভিং, টার্নিং, পাসিং। এবং শক্তির উপাসক। যে গতিতে এমবাপে দৌড়তে পারেন, শট নিতে পারেন তাকে এককথায় ভয়ংকর বলা চলে। কোয়ার্টার ফাইনালে গোলার মতো যে দুটো শটে গোল করেছিলেন, তা মেসির পক্ষে সম্ভব ছিল না। সেমিফাইনালে মরোক্কোর বক্সে ঢুকে যেভাবে বুলডোজার হয়ে উঠেছিলেন, তা রোনাল্ডো বা নেইমারের কাজ নয়।
ভাবতে ভাল লাগছে, মেসি-টাইম, রোনাল্ডো মুহূর্ত ফুরিয়ে আসা বিশ্ব ফুটবলে এমবাপে আছেন। এখনও অনেক দিন খেলবেন। দেশ ভার্সাস দেশ, ক্লাব ভার্সাস ক্লাবের ঊর্ধ্বে খাঁটি ফুটবল ভক্তের হৃদয় তাই লিও কিংবা ক্রিশ্চিয়ানোর মতোই এমবাপেকেও ভালবাসে। মাঠে নেমে আলতামিরার গুহাচিত্রের জেদি বাইসন হয়ে ওঠেন যিনি। সবুজ মাঠে ছুটতে থাকে যৌবনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার। যাঁকে দেখলে মনে হয়, প্যারিসের বস্তিতে জন্মানো পেলের মতো ছেলে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.