Advertisement
Advertisement
Rakesh Sharma

মহাকাশ-বিজয়ী প্রথম ভারতীয়, রাকেশ শর্মার লড়াই ছিল কতটা কঠিন?

এখন কোথায় অন্তরীক্ষে ইতিহাস গড়া রাকেশ শর্মা?

Know where is first Indian in space Rakesh Sharma। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:August 24, 2023 9:17 pm
  • Updated:August 24, 2023 9:23 pm  

বিশ্বদীপ দে: চাঁদের মাটিতে ভারত। ইসরোর চন্দ্রবিজয়ের গৌরবের সাক্ষী গোটা বিশ্ব। মহাকাশ রেসে নতুন ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে উঠেছে আমাদের দেশ। আমেরিকা, রাশিয়ার মতো দেশ যা পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে ভারত। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এই প্রথম নামল মানুষের পাঠানো চন্দ্রযান। এমন ইতিহাস গড়ার দিনে আচমকাই ভেসে উঠেছে এক বিস্মৃতপ্রায় নাম। রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma)।

অথচ ১৯৮৪ সালে এদেশের সর্বত্র আলোচিত হয়েছিল তাঁরই নাম। ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট তিনি মহাকাশে কাটিয়েছিলেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাশূন্যে থাকার নজির গড়া মানুষটি সেদিন জায়গা করেছিলেন আমজনতার হৃদয়ে। মহাকাশ থেকে কেমন লাগছে ভারতকে? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এহেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, ”সারে জাঁহা সে আচ্ছা।” এই উত্তর আজকের ভাষায় সেদিন ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল রাকেশ শর্মার নাম

[আরও পড়ুন: নির্বাসিত ভারতীয় কুস্তি সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় টুইট করলেন মমতা]

কিন্তু যত সময় গিয়েছে, ধীরে ধীরে বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছিলেন সেদিনের সেই হাস্যমুখ তরুণ। ‘দেহ পট সনে নট, সকলই হারায়’। সেদিনের তরুণ রাকেশ আজ বৃদ্ধ। কোথায় তিনি? কী করেন? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আচমকাই মানুষের মনে পড়ে গিয়েছে তাঁকে। চন্দ্রবিজয়ের গৌরবের মুহূর্তে দেশের মহাকাশে যুগের সূচনাকারী প্রথম নভোচরকে নিয়ে কৌতূহলী অনেকেই। বিশেষ করে আজকের প্রজন্ম।

শুরুটা করা যাক ১৯৮৪ সালের এপ্রিল দিয়েই। স্যালিউট -৭ মহাকাশ স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে দেখা গিয়েছিল রাকেশ শর্মাকে। পৃথিবীতে বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ মন্তব্যও সেই সময়েরই। গোটা দেশ সাদা-কালো টিভির পর্দায় দেখেছিল সেই দৃশ্য। সে এক অন্য সময়। মহাকাশে সে সময় ভারত হাঁটি হাঁটি পা পা। বিশ্বের ১২৮তম ও ভারতের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রাকেশ শর্মাকে মহাকাশে পাঠানো হয় দুই রুশ নভোচরের সঙ্গে। ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের টেস্ট পাইলট থেকে স্কোয়াড্রন লিডার হয়ে ওঠা রাকেশ শর্মার ওই ভূমিকায় নির্বাচিত হওয়াটা অবশ্য সহজ ছিল না। রীতিমতো কঠিন পরীক্ষার বৈতরণি টপকাতে হয়েছিল। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মনোনীত হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল পাড়ি দেন মহাকাশে। মাঝের এই সময়ে যেতে হয়েছিল বিপুল প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে।

চন্দ্রযানের সাফল্যের মাঝেই ফের স্মৃতিতে জেগে উঠলেন রাকেশ

[আরও পড়ুন: চন্দ্রজয়ের পর এবার সূর্যে পাড়ি, মিশন আদিত্য এল১ শুরুর পথে ISRO]

এই প্রসঙ্গে আরেকজনকে মনে পড়ে গেল। তিনি রবীশ মালহোত্রা। রাকেশের সঙ্গে তিনিও নির্বাচিত হন মহাকাশচারী হিসেবে। সেই সময় রাকেশের মতোই রবীশের ছবিও খবরের কাগজে দেখা গিয়েছিল। যদিও সয়ুজ টি-১১-তে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার সময় রবীশের আর রাকেশের সঙ্গী থাকা হয়নি। তিনি ছিলেন ব্যাকআপ টিমের সদস্য। খোদ রাকেশই যেখানে বিস্মৃত, রবীশকেও যে মানুষ মনে রাখেনি তাতে আর আশ্চর্য কী!

যাই হোক। রাকেশ শর্মার প্রস্তুতির কথা হচ্ছিল। মস্কোর ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে মাসের পর মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল তাঁকে। সবচেয়ে কঠিন পর্যায়টা ছিল একেবারে শেষে। টানা ৭২ ঘণ্টা একটা ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। এটা ছিল ক্লস্ট্রোফোবিয়া টেস্ট। সব পরীক্ষাতেই দারুণ ভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর আর তাঁর মহাকাশে প্রথম ভারতীয় হয়ে ইতিহাস রচনায় কোনও বাধা ছিল না।

আজকের রাকেশ- ‘দেহ পট সনে নট সকলই হারায়’

মহাকাশ থেকে নিজের দেশকে দেখে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলেন রাকেশ। ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে প্রশ্ন করেন, ”ভারতে কেমন দেখাচ্ছে ওপর থেকে?” জবাবে রাকেশ শর্মা সাবলীল ভাবে বলে উঠেছিলেন, ”সারে জাঁহা সে আচ্ছা।” এমন উত্তর কার্যতই তৈরি করে দিয়েছিল এক আশ্চর্য আবেগময় মুহূর্ত। যে প্রশ্নোত্তর আজও থেকে গিয়েছে মানুষের স্মৃতিতে।

কিন্তু এমন এক মানুষকে সবাই ভুলে গেল! শোনা যায়, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান ২-এর উড়ানের সময় আমন্ত্রণও নাকি জানানো হয়নি দেশে ‘অশোক চক্র’, রাশিয়ায় (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) ‘হিরো অফ সোভিয়েত ইউনিয়ন’ সম্মানে ভূষিত হওয়া। ২০২৩ সালে চন্দ্রযান ৩-এর অভিযান শুরুর ঠিক আগে জুলাই মাসে আচমকাই সবাইকে চমকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে ওঠে এক বৃদ্ধের মুখ। তামিলনাড়ুর এক গ্রামে জীবনযাপন করা মানুষটির নাম রাকেশ শর্মা। স্ত্রী মধুর সঙ্গে নিভৃত এক জীবন কাটাচ্ছেন কুনুর নামের ছোট্ট সেই গ্রামে। হইহই থেকে দূরে শান্ত পৃথিবীর কোলে। তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত অবশ্য তিনি চাকরি করেছেন। বেঙ্গালুরুর এক সংস্থায় চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে ইসরোর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কিন্তু ছিন্ন হয়নি। গগনযান মিশনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার নানা প্রকল্পেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু জনমানসে যেন হারিয়েই গিয়েছেন তিনি।

ইন্দিরার সঙ্গে রাকেশের কথোপকথন আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে

চন্দ্রযান ৩ ইতিহাস গড়ার আগেই রাকেশ শর্মা বলেছিলেন, ”ইসরোর কর্মকাণ্ডের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত বলেই আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) সফট ল্যান্ডিং করবেই।” তাঁর কথা ফলে গিয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। আগামী ২ সপ্তাহ সকলের চোখ থাকবে আকাশে ভারতের সাফল্যের নতুন খতিয়ানের দিকে। আর সেই সঙ্গে নতুন করে আলোচিত হবেন তিনি- রাকেশ শর্মা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement