অঙ্কন: অর্ঘ্য চৌধুরী।
বামুন সমাজের ঢিলে হালে মনখারাপ ব্রহ্মদত্যির! ডেকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছে না বেচারা নিশি! বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। ভূত চতুর্দশীতে মনের কথা থুড়ি ‘আত্মাকথা’ জানালেন বাংলার ভূতেরা। আজ স্কন্ধকাটার পালা। ভূতের ভাষাকে মনুষ্য পাঠযোগ্য করলেন বিশ্বদীপ দে।
আপনারা আমার কথা শুনবেন? ‘আত্মাকথা’? আপনারা তো আমাদের খুঁজেই পান না! প্রশ্ন তোলেন ‘ভূতগুলো সব গেল কোথায়?’ কেবল ভূত চতুর্দশী এলে ঢুঁ মারেন অন্ধকারে। অবশ্য অন্ধকারই বা আর কোথায়? আপনাদের মনের মধ্যে ছাড়া! যাক, ভাববেন জ্ঞান দিচ্ছি। প্রথমেই বলি আপনি যেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন আমি সেখানে নেই। মানে, আমার মাথাটা সেখানে নেই। কাটা মাথাটা, এই দেখুন রয়েছে হাতে। মশাই, স্কন্ধকাটার মাথা যদি ঘাড়ের উপরই থাকল তাহলে আর স্কন্ধকাটা কী করে হল?
আমি অবিশ্যি ওই মার্কিন স্লিপি হলো কিংবা হ্যারি পটারের হেডলেস নিকের চেয়ে আলাদা! গ্লোবালাইজেশনের ঝ্যালঝেলে আলোয় আজও টিকে রয়েছি, খাঁটি দিশি স্কন্ধকাটা। ‘বঙ্গজীবনের অঙ্গ’ কেবল সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিমই নাকি? তা সে যাই হোক, চারপাশে যা চলছে সেসব দেখে আমার কাটা মাথা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবিরাম! একে তো সব সময় হারিয়ে ফেলার ভয়। যতই হৃদয়ের উত্তাপ বলুন, জিভের উল্লুস আহ্লাদ বলুন কিংবা… সব তো ওই মাথার ভিতরই ভরা। ওটাই হেড আপিস। তা সেই মুন্ডু হারিয়ে ফেললে কতটা মুশকিল ভাবুন একবার! লোকে মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে ধাঁই করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে, সুযোগ পেলে ব্রন, ফুসকু়ড়িও বোধহয় বাদ দেবে না। সেখানে মুন্ডু কতটা আর সেফ! তার ওপর আমাদের ভূতেদের জীবনে তো ইনশিওরেন্সের বালাই নেই। জীবনই নেই, তো তার আবার বিমা! তার আবার মুন্ডু। কাঁধের উপরে মাথার তাও একটা প্রেস্টিজ থাকে। হাতের উপরে মাথা তো একেবারেই… ওই ইয়ে আর কী!
যাক সে কথা। আমাদের করুণ অবস্থার কথা বুঝেছিলেন মানিকদা। উনিই তো গুগাবাবাকে দিয়ে গাইয়েছিলেন, ‘মুন্ডু গেলে খাবটা কী? মুন্ডু ছাড়া বাঁচব নাকি…’ যে মানুষ মুন্ডু হারিয়ে ফেলে তার কেস কতটা জন্ডিস, তা উনি ছাড়া আর কে ভেবেছিলেন! দাঁড়ান দাঁড়ান। মানিকদা সম্বোধন করলাম বলে নাক কুঁচকোলেন? কিন্তু কত লোকই তো ওঁর ধারেকাছে কখনও না পৌঁছতে পেরে, বড়জোর কখনও এক-আধবার ওঁর বসার ঘরের ভিড়ে মুখ দেখিয়ে দিব্যি মানিকদা আওড়ান! সেখানে উনি তো আমাদেরই লোক। খোদ ভূতের রাজার খোঁজ যাঁর জানা ছিল, তাঁকে তো মানিকদা ডাকতেই পারি। নাকি?
তবে আমরা রীতিমতো বিপন্ন প্রজাতি। চারপাশে ‘মাথা কাটা’ লোকজন খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। কারও বুঝি লজ্জায় মাথা কাটাই যায় না আজকাল। যেখানে সেখানে দেখি সব দল বেঁধে রিল বানাচ্ছে। ভিড় ট্রেনে নেচে উঠছে, লামাহাটায় পাইনগাছের প্রশান্ত সারির সামনে কোমর দোলাচ্ছে। কে দেখল, কে কী ভাবল তাতে কিস্যুই যায় আসে না। নিজের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেও সামনে মোবাইলের লেন্স মেলে ধরছে! এরা মরলে কোনওদিনও স্কন্ধকাটা হবে না। একটা প্রচলিত ধারণা অবশ্য রয়েছে যে, অপঘাতে মাথা খোয়ালে কেবল তবেই সে স্কন্ধকাটা হয়। সে ধারণা সবটা সত্যি নয়, এটুকু বলতে পারি। লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার ব্যাপারটা ইগনোর করা কি আদৌ ঠিক? সুতরাং আমাদের বিপন্ন ভৌত প্রজাতি ঘোষণা করা হোক। ভূত চতুর্দশীর আগে এটাই আমাদের প্রার্থনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.