Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bengali Ghost

‘রাতভর লোকেরা অনলাইন, কেউ সাড়া দেয় না’, আক্ষেপ নিশির

ভূতেদের দুনিয়ায় নিশিরা আজকাল বিলকুল আউটকাস্ট হয়ে পড়েছে। ফলোয়ার কমছে হু হু করে।

A funny write up on Bengali ghost Nishi

ছবি: অর্ঘ্য চৌধুরী।

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 30, 2024 7:05 pm
  • Updated:October 30, 2024 7:05 pm  

গাছের অভাবে বিপন্ন গেছো! ডেকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছে না বেচারা নিশি! বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। ভূত চতুর্দশীতে মনের কথা থুড়ি  ‘আত্মাকথা’ জানালেন বাংলার ভূতেরা। আজ নিশির পালা। ভূতের ভাষাকে মনুষ্য পাঠযোগ্য করলেন বিশ্বদীপ দে

‘আত্মাকথা’ শুনবেন? বলাই যায়। কিন্তু সত্যিই কি কেউ শুনবে? আজকাল লোকজন বড় ইয়ে হয়ে গেছে মশাই। এই দেখুন না, আজকের দিনটা থুড়ি রাতটা। ভূত চতুর্দশী। এই দিনটায় খুব মনখারাপ হয়ে যায় আজকাল। এখন সত্যিই মোবাইলে হামলে পড়ে লোকে রাত-টাত পার করে দেয়। ঘুমুতে যায় ভোরবেলা। কী আদিখ্যেতা বুঝি না। আমি যদি জানলার ধার ঘেঁষে ডেকে ডেকে হন্যেও হয়ে যাই কেউ সাড়া দেয় না। আমাদের ভূতেদের দুনিয়ায় আমরা নিশিরা আজকাল বিলকুল আউটকাস্ট হয়ে পড়েছি। ফলোয়ার কমছে হু হু করে।

Advertisement

আচ্ছা, লোকেরা তো আজও ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দো পিদিম দেয়। চোদ্দো শাক খায়। সকলে না মানুক, অনেকেই এখনও এসব মানে। তার পর ছবি তুলে ফেসবুক-টুকে দেয়। কিন্তু যাদের আহ্বান করলি, তাদের জন্য অপেক্ষা করিস না কেন? বুঝি না। আমি তো নিশি। সারা বছরের অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু টার্গেট ফুলফিল হওয়া দূরে থাক, ধারেকাছেও যেতে পারি না। কী করে যাব? মানুষ আজকাল ঘুমোয় কই! ফোন ঘাঁটতে থাকে রাতভর। অনেকে আবার ঝিমোয়। গার্লফ্রেন্ড বলে, ‘বাবু তুমি ঘুমিয়ে পড়লে?’ তখন আবার সেই পিংয়ের শব্দে সে জেগে ওঠে। আমি তাক করে থাকি। এই সময় তার প্রেমিকার নাম ধরেই ডেকে উঠি। জানলার এক্কেবারে গা ঘেঁষে। তা হতভাগারা সেই শব্দ শুনে ফোনের অডিও মেসেজ চেক করে। তার পর হতাশ হয়ে আবার ঝিমোয়। সাড়া দেওয়ার কোনও সিন নেই। আমিও আনসিন হয়ে লটকে থাকি জানলার ডগায়। তার পর বার তিনেক ডেকে ফিরে যাই। রবীন্দ্রনাথের লেখায় আছে ‘আমি সারা নিশি তোমা লাগিয়া/ রব বিরহশয়নে জাগিয়া’… ওসব বিরহ-ফিরহ এখন অতীত। পাঁচতলা প্রেম। পুরোটাই অনলাইন।

কেবল প্রেমিক-প্রেমিকারাই কি নিশাচর? আগে তো বলত- ‘প্রথম প্রহরে সবাই জাগে,/ দ্বিতীয় প্রহরে ভোগী।/ তৃতীয় প্রহরে তস্কর জাগে/ চতুর্থ প্রহরে যোগী’। ওসব এখন ঘেঁটে দিয়েছে লোকেরা। ভোগী, যোগী, তস্করকেও টেক্কা দেবে যত রাতজাগা চ্যাংড়া থেকে বেতো রোগী। সবাই জেগে জেগে থাকে। না হয় ঝিমোয়। মোবাইলে একটা পিং দেখে হাঁউমাউ করে ফোনের দিকে তাকায়। জানলার বাইরে যে কেউ ওদের প্রিয় জনের গলা নকল করে আর্তিমাখা কণ্ঠে ডাকছে তাতে বয়েই গেছে। দিবারাত্র ইয়ারফোন কানে গুঁজে রেখে কানেরও তো পুঁটলি পাকানো অবস্থা। যত্ত সব। তার ওপর আউটসোর্সিংয়ের পৃথিবীতে লোকে কাজে মত্ত। আমেরিকায় তখন সকাল। সাহেবসুবোরা এপারের দুনিয়ার লোকগুলোকে তাই রাতভর জাগিয়ে রাখে। সেখানকার ব্যস্ততায় আমি আর কী করে পাত্তা পাব?

রাত বাড়লে আজকাল নস্ট্যালজিয়া জাগে। হ্যাঁ, হ্যাঁ আমাদেরও ওসব হয়। তবে পূর্বজন্মের চেয়েও বেশি মনে পড়ে ভূতজন্মের পুরনো দিনের কথা। আগে চারপাশ থাকত নিস্তব্ধ। রাত বাড়লে শব্দেরা মিলিয়ে যেত শূন্যে। হ্যারিকেনের ম্লান হলদে আলো নিভে যেত একটু রাত গড়াতে না গড়াতেই। সেই ঝুঁজকো অন্ধকারে একবার ডাকলেই লোকে ঘুম ভেঙে উঠে বসত। তার পর… আজকাল অন্ধকারই হারিয়ে গেছে। শব্দেরা পাক খায়। দিবারাত্র মানুষ রাত জেগে গান শোনে। গল্প করে ফোনে। কেবল কথা আর কথা। এত কথা আর আলোর গমগমে ভিড়ে কে আর আমার ডাক শুনতে পাবে? সবার নামের পাশে সবুজ আলোর অনলাইন নিশানা। নিশিকে ওরা ‘না’ করে দিয়েছে। বরাবরের জন্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement