Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bengali Ghost

মানুষ জন্মের প্রেম ভেঙেই আত্মঘাতী, শিউলির ডালে উলটো ঝুলে বলছে গেছো

গাছের অভাবে বিপন্ন গেছোরা, দুঃখের শেষ নেই বাংলার ভূতেদের।

A funny write up on Bengali Ghost Gechho

অঙ্কন: অর্ঘ্য চৌধুরী।

Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 28, 2024 7:50 pm
  • Updated:October 29, 2024 11:42 am  

বামুন সমাজের ঢিলে হালে মনখারাপ ব্রহ্মদত্যির! ডেকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছে না বেচারা নিশি! বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। ভূত চতুর্দশীতে মনের কথা থুড়ি  ‘আত্মাকথা’ জানালেন বাংলার ভূতেরা। আজ গেছোর পালা। ভূতের ভাষাকে মনুষ্য পাঠযোগ্য করলেন কিশোর ঘোষ 

ভূত নিয়ে বলব, ভবিষ্যত নিয়েও, তার আগে খানিক বর্তমান সালটে নিই। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার—‘ভূতের বর্তমান!’ এই যেমন এখন, সন্ধেবেলা, শিউলির ডালে উলটোমুখো লটকে আছি। আহা কী খুসবু… শিউলির। কী স্নিগ্ধ! আমার প্রিয় ফুল জানেন। এমনিতে কার্তিক মাস পড়ে গেছে, তবু কিছু গাছে শিউলি আছে এখনও। তার চেয়ে বড় কথা, মাচাউঁচু পর্বত লাগোয়া ভূতেদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘অনামুখো রিজার্ভ ফরেস্টে’র ভিতর কুলকুল করে বয়ে চলা ভয়ংকরী নদীর তীরে এই শিউলিগাছ হেব্বি স্পেশাল। কেন?

Advertisement

উত্তর দিতে ভূতের অতীত, অর্থাৎ মানুষ জন্মে যেতে হবে। তখন প্রেম করতাম। নেকা প্রেম না, ডেয়ারিং টাইট কেস। লতাপাতা সেন ওর বরকে না, আমাকেই ভালোবাসত। বুকের নরমে ট্যাটু করিয়েছিল ‘মহানন্দ দাস’। আট পরের একদিন ভিলেন বরটা দেখে ফেলে। এমন অবস্থায় হয় লতাকে, নয় আমাকে মরতে হত। পেয়ার কিয়া তো মরনা কেয়া… যে শিউলিগাছের ফুল উপহার দিতাম প্রেমিকাকে, এক জ্যোৎস্না রাতে আমার বাড়ির কাছের সেই গাছের ডালে গলায় দড়ি দিলাম। সভ্য মানুষের উৎপাতে সে গাছ কবেই গত হয়েছে। বাধ্য হয়ে এখন থাকি পুনর্বাসন কেন্দ্রে, মাচাউঁচু পর্বতের লাগোয়া অনামুখো রিজার্ভ ফরেস্টে, ভয়ংকরী নদীর তীরের এই শিউলি গাছে। জানি জানি, অনেকেই এক পিস গোলমাল টের পাচ্ছেন তো? বাংলা ভূত সাহিত্যে গেছো ভূতের পরিচয়ে শিউলিগাছ নেই। কী বলছে সেই পরিচয়?

বলা হয়েছে—যে মানুষ গলায় ফাঁস দিয়ে, গাছ থেকে ঝুলে মারা যায়, তারাই গেছো ভূত হয়। গেছোদের দেখতে নাকি অনেকটা ঠিক বাঁদরের মতো। একটি মত বলছে—বাঁদর নয়, টিকটিকির মতো। মাথা নিচে, পা উপরে… এভাবে সার্কাস বা অলিম্পিক কায়দায় গাছ থেকে ঝুলে থাকে তেঁনারা। তালগাছ নাকি এদের প্রিয় বাসস্থান। এই শেষ কথায় রয়েছে গোলমাল। তালগাছ পছন্দ গেছোদের, এই ভাবনা ভুল। সত্যিটা হল, গেছোরা তাদের পছন্দের গাছে ঝুলতে এবং দুলতে ভালোবাসা। আমার ক্ষেত্রে যেমন শিউলি।

বলছি বটে, কিন্তু পছন্দ-অপছন্দ দেখার দিনকাল কি আর আছে রে ভাই! এমনি এমনি কি ভূত পুনর্বাসনের প্রয়োজন পড়ে। মাথার ভিতরে যে বোধ কাজ করে সে বলে—‘গেছো’ মানেই তো এখন ভূত। তার উপর গাছ কোথায় যে ‘গেছো’ থাকবে! উলটো লটকে এই বাংলার নক্ষত্রের রাত দেখবে, হাওয়া খাবে, শিশির ভিজে হাড়েমজ্জায় ঠান্ডা স্রোত বওয়াবে… আহা…কী সুখ কী সুখ! দুই কুড়ি মানুষ জন্ম আর পাঁচ কুড়ি ভূত জন্মে শিক্ষা পেয়েছি—গেছো ব্যাপারটা না থাকে রক্তে। যেমন আমার বাপ-ঠাকুরদাও ছিল গেছো। বাবা ছিল জঘন্য গরিব, কেরানি, ছুটির দিনে বড়লোক। গাছ লাগানোর নেশা! আমার যেমন শিউলি বাবার তেমন কাঠচাঁপা। অনামুখো রিজার্ভ ফরেস্টে একটা কাঠচাঁপা গাছে সারাদিন ঝুলে থাকে বাবা আর ভয়ে কাঁপে। ভূত হয়েও ভয়… পাছে এই রিজার্ভ ফরেস্টেও উন্নয়নের কুড়ুল, করাত আছড়ে পড়ে। দূরের ছাতিমে ডালে ঝুলে ফোকলা দাঁতে হাসে আমার ঠাকুরদা , ইশারায় বাবাকে শান্ত হতে বলে।

যদিও শান্ত হওয়া সোজা কথা না। পৃথিবীর গভীর অসুখ সকলেই টের পাচ্ছেন, সে আপনি মানুষ হোন বা গেছো। বসতির নামে, রাস্তাঘাটের অজুহাতে, খনিজ তোলার লোভে, চোরাই কাঠের ব্যবসায় সবুজ পৃথিবী কালচে নীল মেরে যাচ্ছে দিনকে দিন। আসল কথা, একটা সমাজে গাছ নেই মানে তো শুধু গাছ নেই নয়, ফুল-ফল-ছায়া-মায়া নেই, পাখির বাসা, পিঁপড়ে-পোকা নেই, পাতার ফাঁক দিয়ে দেখা চাঁদ-তারা নেই, গাছের ডালে ঘুড়ি লটকানো নেই, সবচেয়ে বড় কথা, ঠিক দুপ্পুরবেলা পেয়ারা গাছে বসে পেয়ারা, আমগাছে বসে আম, লিচুগাছে বসে লিচু খাওয়া ছোটবেলা ভ্যানিশ, অর্থাৎ গেছো দাদা ও দিদিদেরও অপমৃত্যু! কদিন আগেই ঠাকুরদা বলছিল, সেদিন আর দূরে নেই রে বাপ, যখন গাছ বলতে ফার্নিচার দেখাবে মানুষ। এটাই তো মানুষ এবং ভূতের শাল কাঠ মার্কা কঠিন ভবিষ্যত। তবে কিনা এই কালবেলাতেও আশার কথায় শেষ হওয়া উচিত আত্মাকথা। অতএব, টেম্পোরারি ‘গেছো’র কথা বলতে হয়, কদিন আগে পার্মানেন্ট ‘গেছো’ হয়েছেন যিনি। তিনিও ভালো কবি, পাহাড়ের বৃক্ষনাথ, কমল চক্রবর্তী। ৩০ একরে গাছের, গেছোদেরও ‘পুনর্বাসন কেন্দ্র’ তৈরি করে গেছেন। আপাতত নিশ্চিন্তি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement