ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শীতের বেলা এল বলে। আলমারি-দেরাজ থেকে শীতপোশাক, লেপ-কম্বল বের করার পালা। এখন সোয়েটার-জ্যাকেটের চল বেশি। কিন্তু শালের আভিজাত্যই আলাদা। সেই আভিজাত্য এবারের শীতে নিজের পরনে ফিরিয়ে আনুন। কোন শাল কেমন? কী তার মাহাত্ম্য? রইল খবরাখবর।
নাগা শাল
নাগাল্যান্ডে তৈরি এই শালের বিশেষত্ব লাল-কালো ও নীল রঙের আধিপত্য। শালে ব্যবহৃত নকশাও এসেছে সেখানকার লোককথা থেকে। জিআই (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন) প্রাপ্ত এই শাল চাকশেশাং নামেও পরিচিত। এছাড়া এখানকার সুংকোপেটসু শালে দেখা মেলে বাইসন, বাঘ, হাতি, মানুষ, মুরগি ও বল্লমের মতো নানান মোটিফের। এই শাল নাগাল্যান্ডের পুরুষদের গায়ে শোভা পায়। শালে বর্ণিত নানান গল্পগাথা নাগা সৈনিক ও শিকারিদের এক অন্যতম গর্বের বস্তু। এই শালে লাল-কালোর সঙ্গে ব্যবহৃত হয় সাদা রং।
রাবাড়ি শাল
গুজরাটের এমব্রয়ডারি করা এই শাল এককথায় ‘পিস অফ আর্ট’। হাতে বোনা সুতির এই শালে থাকে সিল্কের সুতোর এমব্রয়ডারি ও কাচের কাজ। চেন স্টিচ করা এই শালে রঙের ব্যবহারেও থাকে বৈচিত্র্য।
কুলু শাল
হিমাচল প্রদেশের এই শাল চেনার উপায় এর প্যাটার্ন ও খসখসে টেক্সচার। স্লিট ট্যাপেস্ট্রি টেকনিকে তৈরি এই শাল। দেশকর, বিহাং, অস্ট্রেলিয়ান মেরিনো টপস ও অ্যাংগোরা ছাগলের পশম ব্যবহার হয় শালে। জ্যামিতিক প্যাটার্ন, উজ্জ্বল রং এই শালের একটি বিশেষত্ব। পুরুষদের জন্য তৈরি শাল ‘লোই’ বা ‘পট্টু’ নামে পরিচিত। সাধারণত পুরুষদের শালে ব্যবহৃত হয় ফিকে রং ও দুদিকে থাকে সরু প্যাটার্ন। মহিলাদের শালে উজ্জ্বল রঙের দাপট অনেক তীব্র। প্রতিটা শালে প্রায় আটটি উজ্জ্বল রং ব্যবহার হয়।
পশমিনা শাল
ক্যাশমিয়ার ছাগলের পশম থেকে তৈরি এই শাল। ভেড়ার পশমের তৈরি পোশাকের চেয়ে ক্যাশমিয়ার অনেকাংশে বেশ পাতলা, হালকা, মজবুত, নরম এবং তিনগুণ বেশি গরম। ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ইউরোপিয়ানদের মুখে পশমিনা পশমের নাম ক্যাশমিয়ার। কাশ্মীর ও নেপালে হাতে বোনা আরেক ধরনের শাল তৈরি হয় পশমিনা পশম থেকে, যা শাহমিনা নামে পরিচিত। পশমিনা শালের জমিতে ফুটে ওঠে হাতে এমব্রয়ডারি করা ফুল ও কলকা। হালকারঙা বা গাঢ়রঙা শালের ওপর নকশা হয় ভিন্ন উজ্জ্বল রঙের, শালের সারা জমিতে হাতের কাজ থাকলে পশমিনা তখন নাম বদলে হয় জামেওয়ার।
দোরুখা শাল
কাশ্মীরি শালের দু’পিঠে কারুকাজ করা এই শালের কথা উল্লেখ রয়েছে ‘আইন ই আকবরি’তে। সেখান থেকে জানা যায় সম্রাট আকবরের দোরুখা শালের প্রতি বিশেষ দুর্বলতার কথা। শালের দুদিকে থাকে দুই রং ও দুধরনের নকশা। ট্র্যাডিশনাল ফুলেল মোটিফ ‘বোটেহ’ এই শালে চোখে পড়ে বেশি। দোরুখার জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র শালেই সীমিত নেই। কাশ্মীরি কারিগরের হাতে তৈরি হয় বেডকভার, টেবিল কভার, পিয়ানো কভার, ওয়েস্ট কোট, স্টোল, স্কার্ফের মতো সামগ্রী। শাহতুশ দিয়ে তৈরি দোরুখা শালের দাম হতে পারে মার্কিন ডলার ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ পর্যন্ত। দুদিকে দুই রং ও দুটি ভিন্ন নকশা থাকা শাল দোরঙা-দোরুখা নামে পরিচিত। আবার শালের একদিকে নকশা ও অন্যদিকে প্লেন থাকলে তা আকশি দোরুখা নামে পরিচিত।
শাহতুশ
শালের তালিকায় অন্যতম দামি এই শাল ‘রিং শাল’ নামেও পরিচিত। শাল এতটাই নরম যা একটি আংটির মধ্যে দিয়ে বের করে নেওয়া যায় অনায়াসে। শাহতুশ শালের দামের পিছনে রয়েছে বোনা ও পশম জোগাড় করার হাড়ভাঙা খাটনি। তিব্বতের সুউচ্চ উপত্যকা ও লাদাখের পূর্বদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উচ্চতায় বাস করে তিব্বতি অ্যান্টিলোপ। ঘাসজমিতে চড়ার সময় তাদের গলার কাছ থেকে যে সুক্ষ্ম পশম ঝরে পড়ে, তা জোগাড় করে তৈরি হয় শাহতুশ শাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.