বিক্রম রায়: উত্তরবঙ্গ বলতে পাহাড়, জঙ্গল, বন্যপ্রাণ, কমলালেবু, চায়ের সঙ্গে নাম জুড়ে রয়েছে বোরলি মাছের। ডুয়ার্স অথবা কোচবিহারে পা রাখতে এই মাছের রকমারি পদ চেখে দেখার জন্য অনেকেই ছটফট করেন। কিন্তু বেড়ে চলা দূষণ সহ বিভিন্ন কারণে তিস্তা, তোর্সা নদী থেকে এই মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছিল মৎস্য গবেষক মহলে। কিন্তু সব সংশয় দূর করে স্বমহিমায় উত্তরের রুপোলি শস্য বোরলি। তবে নদীতে নয়, পুকুরে। এমনকী বাড়ির ছাদে কৃত্রিম জলাশয়েও দিব্যি বংশ বিস্তার করে বিলুপ্তপ্রায় তালিকা থেকে নিজের নাম মুছে ফেলতে চলেছে এই সুস্বাদু মাছ। মৎস্য দফতরের উদ্যোগে কোচবিহার জেলায় কয়েক বছরের গবেষণায় সাফল্য মিলতে শুরু হয়েছে বোরলির বাণিজ্যিক চাষ। মৎস্য আধিকারিকদের আশা আগামীদিনে দক্ষিণবঙ্গেও হতে পারে উত্তরের এই রুপোলি শস্যের চাষ।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষামূলকভাবে কোচবিহারের ১১টি পুকুরে বোরলির চাষের ব্যবস্থা হয়। রাতদিন নজরদারিতে অভাবনীয় সাফল্য মেলে। এরপরই জেলার ১২০টি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে বোরলির চাষ শুরু হয়। সেটাও মৎস্যজীবীরা নিজেদের উদ্যোগে করছেন। এতকিছুর পরও প্রশ্ন ছিলই নদীর বোরলির মতো স্বাদ মিলবে তো পুকুরে চাষে? মৎস্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গুণগত মান এবং স্বাদে নদীর মাছের সঙ্গে পুকুরে চাষ করা মাছের কোনও পার্থক্য নেই। উলটে সুবিধা বেড়েছে। ইচ্ছে থাকলে এখন অনেকেই বাড়ির ছাদে কৃত্রিম জলাশায় তৈরি করে বোরলির চাষ করতে পারবেন।
কোচবিহারের সহকারি মৎস্য অধিকর্তা অলোকনাথ প্রহরাজ জানিয়েছেন, পুকুরে বোরলি মাছ চাষ এখন আর পরীক্ষামূলক স্তরে নেই। ব্যবসায়িক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে উত্তরের পুকুরে চাষ করা বোরলিতে বাজার ছেয়ে যাবে। নদীতেও এই মাছের সংখ্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও দক্ষিণবঙ্গে একই পদ্ধতিতে বোরলি চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ফার্মে এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা হয়েছিল। এখন দক্ষিণবঙ্গের জলাশয়ে বোরোলির চাষ শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। ভোজন রসিক বাঙালির কাছে এটা অত্যন্ত সুখের খবর।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা জ্যোতি বসু প্রত্যেকের পছন্দের মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে বোরলি। কোচবিহার রাজ পরিবারের অন্দরেও ছিল বোরলির কদর। মহারাণি ইন্দিরা দেবী মুম্বই অথবা কলকাতায় থাকলে বিমানে তোর্সার বোরলি মাছ পাঠানো হত। পর্যটক থেকে উত্তরের বাসিন্দাদের মধ্যেও সুস্বাদু বোরলির ব্যাপক চাহিদা। নদীর ঠিকানা ছেড়ে এবার বোরলির পুকুরে সংসার পাতার উপাখ্যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.