Advertisement
Advertisement
Lemon farming

পোকার উপদ্রবে লেবু চাষে ক্ষতি? রইল প্রতিকার, লাভই বা কত?

বাজারে লেবুর চাহিদা যথেষ্ট বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Ways to reduce bug attack on lemon farming

ছবি: সংগৃহীত।

Published by: Subhankar Patra
  • Posted:December 4, 2024 8:57 pm
  • Updated:December 4, 2024 8:57 pm  

লিখেছেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের গবেষক ঋত্বিক সাহু ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি জীব রসায়ন বিভাগের গবেষক পার্থ মণ্ডল

শেষ পর্ব
প্রতিকার
রোগমুক্ত ‘বাড উড’ ব্যবহার করা উচিত। প্যারাথিয়ন (০.০২৫%) স্প্রে করলে এই রোগ সংক্রমণকারী ভেক্টর নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও লেবু গাছে ডিপ্লোডিয়া গামোসিস রোগ দেখা যায়। এই রোগের ফলে ছোট ছোট ডালগুলো ডগা থেকে মারা যায়। এবং মৃত ডালের গোড়ায় আঠালো ক্ষরণ দেখা যায়। অপুষ্টি এবং প্রতিকূল পরিবেশ এই রোগের কারণ বলে মনে করা হয়। এই রোগের জন্য দায়ী হল ডিপ্লোডিয়া নাটালেনসিস। এই রোগের নিয়ন্ত্রণের জন্য মরা ডাল ছাঁটাই এবং ০.৩% ফোসেটাইল-এল স্প্রে করা কার্যকরী।
পোকা
লেবু গাছ আক্রমণকারী কয়েকটা পোকা যেগুলো লেবুর উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় সেগুলো হল সাইলিড, লেমন প্রজাপতি, অ্যাফিড, সাদামাছি, ফল চোষা মথ ইত্যাদি।সাইলিডএদের নিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই পাতা থেকে রস চুষে খায়, ফলে পাতা কুঁচকে  শুকিয়ে যায় এবং শেষে পাতা ঝরে পড়ে। নিম্ফগুলো ফ্যাকাসে হলুদ রঙের হয় যাদের বেগুনি রঙের চোখ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক গুলো ছোট হয়, কিন্তু এদের ডানা লম্বা হয় এবং শরীরের উপরে সাদা পাউডারের মতো আস্তরণ থাকে।
প্রতিকার
শুকনো ডালপালা, পাতা, আক্রান্ত গাছগুলোকে তুলে ফেলে দিতে হবে। নিম তেল ১০ লিটার অথবা মিথাইল ডিমিটন ২৫ ইসি ২.৫ লিটার অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড ২০০ এসএল ২৫০ মিলি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে দুইবার স্প্রে করতে হয়, একবার মার্চে এবং আর একবার সেপ্টেম্বরে।
লেমন প্রজাপতি
কচি লার্ভা পাতার উপরিভাগে থাকে এবং পাতার ল্যামিনাকে মার্জিন থেকে মধ্যশিরা অবধি খায়। বড় হওয়া লার্ভা পরিপক্ক পাতা খায়। এবং পুরো গাছের মারাত্মক পচন ঘটায়। বড় হয়ে ওঠা লার্ভা, যা প্রাথমিক অবস্থায় পাখির বিষ্ঠার অনুরূপ হয় তা হলুদাভ সবুজ রঙের হয়। এবং দেহের পৃষ্ঠীয় দিকে শিংয়ের মতো গঠন থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মাথা কালো এবং বুক, পেটের নিচের অংশ কৃমি হলুদ রঙের, ডানা কালো, হলুদ চিহ্ন দিয়ে অলঙ্কৃত থাকে।
প্রতিকার
বিভিন্ন পর্যায়ের পোকা দেখলেই গাছ থেকে তুলে ফেলতে হবে, নিম বীজ নির্যাস ৩% অথবা নিমাটোড ডিডি-১৩৬ ৩% এপ্রিল এবং অক্টোবর মাসে স্প্রে করতে হবে।
অ্যাফিডনিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্করা উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ থেকে রস চুষে খায় যার ফলে কোঁকড়ানো, বিকৃতি ও হলুদ হয়ে যাওয়া এবং কোমল অঙ্কুর কুঁচকে যাওয়া দেখা যায়। যার ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এই পোকার দ্বারা নিঃসৃত মধুর মতো পদার্থ স্যুটি মোল্ড বৃদ্ধির জন্য দায়ী। প্রাপ্তবয়স্করা ডানাহীন এবং চকচকে কালো, নিম্ফগুলো গাঢ় লালচে বাদামী বর্ণের হয়।
প্রতিকার
২.৫ লিটার অক্সিডিমিটন মিথাইল ২৫ ইসি ১৫০০ থেকে ২০০০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে স্প্রে করতে হবে মার্চ এবং সেপ্টেম্বর মাসে।
সাদামাছি
নিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্করা প্রচুর পরিমাণে রস চুষে খায়। এই পোকার দ্বারা নিঃসৃত মধুর মতো পদার্থ স্যুটি মোল্ড ছত্রাকের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ছোট ছোট ফল দেয়। নিম্ফগুলো চ্যাপ্টা, উপবৃত্তাকার, স্কেলের মতো, স্বচ্ছ, পাতার নিচের দিকে ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকে। প্রাপ্তবয়স্করা সাদা পাউডারের মতো আবরণ বিশিষ্ট হয়।
প্রতিকার
নিয়মিত অঙ্গ ছাঁটাই করা জরুরি। নিম তেল ৩% স্প্রে করা যেতে পারে। মিথাইল ডিমিটন ২৫ ইসি ১ লিটার ১৫০০ থেকে ২০০০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে, একবার এপ্রিল থেকে মে মাসে এবং আর একবার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে।
ফল চোষা মথ
প্রাপ্তবয়স্করা ফল ছিদ্র করে, রস চুষে ফেলে যার ফলে ফল পচে যায় এবং ঝরে পড়ে। লার্ভা গুলোর শরীরে কমলা নীল, হলুদ দাগ এবং মখমলে কালো দাগ দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের কমলা রঙের ডানা থাকে। কারোর সামনের ডানায় তিনটি কালো দাগও দেখা যায়।
প্রতিকার
আগাছা (টিনোস্পোরা কার্ডিফোলিয়া এবং কক্কুলস পেন্ডুলস) ধ্বংস করতে হবে। মথ আকৃষ্ট করার জন্য আলোর ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে এবং খাদ্য-প্রলোভনও ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মথ প্রতিরোধের জন্য ধোঁয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। পলিথিন ব্যাগ (৫০০ গেজ) দিয়ে ফল ব্যাগ করা যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মথকে আকৃষ্ট করার জন্য ফাঁদ ফসল হিসেবে বাগানে টম্যাটো গাছ লাগানো যেতে পারে। বিষ টোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও লেবুর বিভিন্ন পোকাগুলো বিভিন্ন রোগের ভেক্টর হিসেবে কাজ করে, যেমন গ্রিনিং-এর ক্ষেত্রে সাইলিড, ট্রিস্টেজার ক্ষেত্রে অ্যাফিড। এছাড়াও ক্যাঙ্কার রোগ বিস্তারে লিফ মাইনার সাহায্য করে, লিফ মাইনারের ক্যাটারপিলারগুলো কোমল পাতায় আক্রমণ করে এবং পাতার নিচের পৃষ্ঠে রূপালী উপস্থিতি তৈরি করে। ফলে পাতা বিকৃত ও কুঁচকে যায় এবং পাতাতে মাইনিং-এর লক্ষণ ছেড়ে যায়। এদের লার্ভা ছোট, হলদে এবং লালচে হয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সামনের ডানার অগ্রভাগে কালো দাগ থাকে। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্যানভেলারেট ০.২ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে অথবা নিম বীগ নির্যাস ৫% স্প্রে করা যেতে পারে। সুতরাং এইভাবে আমরা যদি পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই রোগ পোকাগুলোকে আটকাতে পারি তাহলে আমরা আরও ভাল লেবুর ফলন খেতে পারব।

Advertisement

লেবু চাষের জন্য গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা (ভারতীয় মুদ্রা) প্রতি হেক্টর প্রতি বছর খরচ হয়। এবং ফল তোলার সময় ওই বছরে ৪ হাজার টাকা প্রতি হেক্টর খরচ হয়। পাতি লেবু বা গন্ধরাজ লেবুর ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি প্রায় জমি তৈরি করতে ২৫০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া বাকি অন্তর্বর্তী পরিচর্যা, চারাগাছ ইত্যাদির দরুন ১৫০০০ টাকা খরচ হয়। জৈব ও অজৈব সারের জন্য ৬০০০ টাকা, জল সেচের জন্য ২০০০ টাকা, কৃষিবিষ কীটনাশক ১৫০০ টাকা এবং গাছের অঙ্গ ছাঁটাই,আগাছা জনিত বিভিন্ন অন্তর্বর্তী পরিচর্যার জন্য ১০০০ টাকা, সব মিলিয়ে মোটামুটি ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়।

বর্তমানে লেবুর বাজার মূল্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পাতিলেবুর বাজার মূল্য পাঁচ টাকা প্রতি লেবু, গন্ধরাজ লেবুর বাজার মূল্য পাঁচ থেকে দশ টাকা প্রতিটি, এছাড়া কমলালেবু এবং মুসাম্বি লেবুর বাজার মূল্য যথাক্রমে ৭০ টাকা প্রতি কেজি ও ৬০ টাকা প্রতি কেজি হয়। তবে লেবুর এই দর ঋতু এবং স্থান পরিবর্তনে পরিবর্তন হতে থাকে উপরে দেওয়া বাজার মূল্যগুলো বর্তমান সময়ে  কলকাতার বাজার দর সাপেক্ষে দেওয়া হয়েছে। লেবুর ফলন প্রতি বছর ৮০০০ থেকে ১০০০০ কেজি পর্যন্ত হয়। এই ফলন থেকে প্রতি বছরে হেক্টর প্রতি ৮০ হাজার থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। বাজারে লেবুর চাহিদা এবং তার যোগান অনুযায়ী লেবুর মূল্য যথেষ্টই রয়েছে। লেবু চাষে অচিরেই কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement