Advertisement
Advertisement
Lemon Grass

লেমন গ্রাস চাষে বাজিমাত, ২ টাকা বিনিয়োগে হোন লাখপতি!

লেমন গ্রাস চাষে কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কা কম।

Ways of lemon grass cultivation
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 12, 2024 10:05 pm
  • Updated:June 12, 2024 10:13 pm  

লেমন গ্রাস খুব বেশি যত্ন ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারে। গাছের চারার খরচ খুবই কম। লেমন গ্রাসের এক একটি চারার দাম মাত্র ২-৩ টাকা। এছাড়া অন্য ফসলের তুলনায় এই ফসলে তেমন রোগ হয় না। ফলে কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কাও কম। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে এই চারাগাছ বড় হয়ে যায়। প্রতি ৮০ থেকে ৯০দিন পর এই গাছ তোলা যায়। প্রথম বছরের পর কৃষকরা এক হেক্টর জমি থেকে ৯০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করতে পারেন। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানবিদ্যা অনুষদের আবাদি, মশলা, ঔষধি ও সুগন্ধী শস্য বিভাগের গবেষক অনসূয়া শীল।

বর্তমানে ভারতে লেবু ঘাসের (Lemongrass) চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কৃষকরা লেমনগ্রাস চাষে তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন কারণ এই গাছটি খুব বেশি যত্ন ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারে, গাছের চারার খরচ খুবই কম এবং এই গাছের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। লেমন গ্রাসের এক একটি চারার দাম মাত্র ২- ৩ টাকা। এছাড়া অন্য ফসলের তুলনায় এই ফসলে তেমন রোগ হয় না। ফলে কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কাও কম। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে এই চারাগাছ বড় হয়ে যায়। প্রতি ৮০ থেকে ৯০দিন পর এই গাছ তোলা যায় । তাই, কৃষকরা যদি বাণিজ্যিক চাষের জন্য অথবা আন্তঃফসল হিসাবে এই চমৎকার ঘাস বেছে নেয়, তাহলে তারা খুব কম সময়ে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারে। বর্তমানে, ভারতে এই ফসলটি ৩০০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে, মূলত কেরালা, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও আসাম রাজ্যের কিছু অংশে এবং বার্ষিক উৎপাদন ৩০০-৩৫০ টন। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই চাষটি এখনও তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

Advertisement

লেমন গ্রাস সরু এবং দীর্ঘ পাতা বিশিষ্ট একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং এটি ভারত সহ অন্যান্য অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। লেমনগ্রাস হল ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুগন্ধি ফসলগুলির মধ্যে একটি যা Poaceae পরিবারের অন্তর্গত। এটি প্রধানত ভারতে পশ্চিমঘাট (কেরালা, মহারাষ্ট্র), তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, আসাম এবং কর্ণাটক ছাড়াও সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের পাদদেশে জন্মায়। লেমন গ্রাসের প্রচুর ঔষধি গুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে । সর্বোত্তম সুগন্ধি গন্ধের জন্য অনেকেই চা বানানোর সময় এই ভেষজটি নিয়মিত ব্যবহার করেন ।

[আরও পড়ুন: তীব্র গরমে চা চাষে বিপুল ক্ষতি! পুজোতে বাগান বন্ধের হিড়িক পড়ার আশঙ্কায় চাষিরা]

লেমন গ্রাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
লেমন গ্রাসের তেল এর পাতা এবং ফুলের শীর্ষ থেকে পাতিত হয়। তেলে সিট্রাল নামক রাসায়নিক যৌগের অধিক উপস্থিতির কারণে তেলটিতে লেবুর মতো একটি শক্তিশালী গন্ধ রয়েছে। তেলের এই সিট্রাল গন্ধ ভেষজ পণ্য, ডিটারজেন্ট, সুগন্ধযুক্ত সাবান এবং পোকামাকড় প্রতিরোধক তৈরিতে ব্যবহার করে। লেমন গ্রাস তেলের প্রধান ব্যবহার সুগন্ধি, প্রসাধনী এবং পানীয় শিল্পে।
লেমন গ্রাসের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

  • পেশী ব্যথার জন্য অ্যারোমাথেরাপিতে লেমন গ্রাস তেল ব্যবহার করা হয়।
  • লেমন গ্রাস জ্বর, সর্দি-কাশি, মানসিক চাপ, মাসিক সমস্যা, ব্রণ এবং উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি মোকাবিলায় সাহায্য করে।
  • লেমন গ্রাসের কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা রয়েছে ।
  • লেমন গ্রাস বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে পরিষ্কার করে এবং পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি করে।
  • লেমন গ্রাস তেল মশা তাড়ানোর কাজ করে।

ভারতে লেমন গ্রাসের স্থানীয় নাম
কোচিন গ্রাস বা মালাবার গ্রাস বা ভাসানা পুল্লু (মালায়ালম), গান্ধাত্রিনা (হিন্দি) ।
লেমন গ্রাসের বাণিজ্যিক জাত
সুগন্ধি, প্রামান, PRL-16, CKP-25, OD-408, RRL-39, প্রগতি এবং কাবেরি।
লেমন গ্রাস চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু
তাপমাত্রা
লেমন গ্রাস চাষের জন্য উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু এবং ভাল রকম সূর্যের আলোর প্রয়োজন। লেমন গ্রাসের চারা বপনের সময় সাধারণ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর বেশি এবং ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম হওয়া উচিত নয়। মাঝামাঝি বয়সের সময় তাপমাত্রার পরিবর্তন তেমন কোনও প্রভাব ফেলে না গাছের উপর, তবে ফসল তোলার সময় তাপমাত্রা অবশ্যই মাঝারি হতে হবে।
বৃষ্টিপাত
উদ্ভিদের জন্য সারা বছর ২০০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার ভালভাবে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের সময়, যদি আর্দ্রতা খুব বেশি হয় তবে শীঘ্রই সেচের জলের কোনও অতিরিক্ত প্রয়োজন নেই, তবে আপনি যদি অফসিজনে লেমনগ্রাস কাটিংয়ের বীজ বপন করেন তবে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে সেচের জল দিয়ে তা করতে হবে।
মাটির ধরন এবং pH:
লেমনগ্রাস চাষের একটি বড় সুবিধা হল এটি উর্বর দোআঁশ থেকে অনুর্বর ল্যাটেরাইট পর্যন্ত প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। তবে ভাল নিষ্কাশন এবং ভাল জৈব পদার্থ সহ বেলে দোআঁশ এবং লাল মাটি এর চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। জলাবদ্ধ মাটি চাষের জন্য বিবেচনা করা উচিত নয়। লেমনগ্রাসের জন্য, মাটির pH ৬.৫ থেকে ৭.৩ এর মধ্যে হতে হবে।
বংশবিস্তার
লেমনগ্রাস স্লিপের দ্বারা উদ্ভিজ্জভাবে বংশবিস্তার করে। ৪০×৬০ সেমি জায়গা রেখে এগুলি রোপণ করা হয়। এক হেক্টর জমির জন্য প্রায় ২৫,০০০ স্লিপের (চারা) প্রয়োজন। কৃষকরা এই লেমনগ্রাসের স্লিপ (চারা) স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK) বা অনলাইন বিক্রেতার কাছ থেকে এর চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
জমি প্রস্তুতি:
খনন বা লাঙল এবং তারপর সমতলকরণের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করুন। ভালভাবে পচা গোবর সার অথবা কেঁচোসার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বর্ষাকালে উঁচু বেডে রোপণ করতে হবে। ৬×৬ মিটারের ১৫- ২০ সেমি উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। তারপর শিকড়যুক্ত স্লিপগুলি ৪০×৬০ সেমি ব্যবধানে রোপণ করতে হবে।
রোপণ
লেমন গ্রাস রোপণ মে মাসের শেষ সপ্তাহে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে করতে হবে। মাটি প্রস্তুত করার সময় গোবর স্যারের সাথে সাথে সম্পূর্ণ পরিমাণ পটাশ আর ফসফরাস দিতে হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ব্যতিত বছরের যে কোনও সময় সেচের দ্বারা লেমনগ্রাস রোপণ করা যেতে পারে। নাইট্রোজেন ৬ টি সমান ভাগে প্রয়োগ করা হয়, প্রথম ডোজ রোপণের সময়, অন্যটি 8 সপ্তাহ পরে এবং বাকিটি প্রতিটি ফসল কাটার পরে হওয়া উচিত। সমস্ত পুরানো শিকড় পাতাগুলি ছাঁটাই করার পরে স্লিপ প্রস্তুত করতে হবে তারপরে ৪০×৬০ সেমি ব্যবধানে রোপণ করতে হবে।
সার এবং রোপণ উপকরণ
ফসলে রাসায়নিক সার খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব কম্পোস্ট বেশি ব্যবহার করা ভাল।
সেচ: গাছ রোপন করার পর জমিতে প্রতি একদিন অন্তর প্রায় ৪ সপ্তাহের জন্য জল দিতে হবে এবং তারপরে আবহাওয়া ও মাটির ধরণের উপর নির্ভর করে সপ্তাহে একবার জল দেওয়া উচিত। বর্ষাকালে সেচের প্রয়োজন হয় না এবং মাটির সঠিক নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নিড়ানি: রোপন করার পর প্রথম ৩ থেকে ৪ মাস মূল ক্ষেতকে আগাছামুক্ত রাখা হয়। প্রতিবার ফসল কাটার পর অন্তত ১ মাস জমিকে আগাছা মুক্ত রাখার জন্য নিড়ানোর প্রয়োজন । সাধারণত বছরে ২ থেকে ৩ বার আগাছা নিড়াতে হয়।
লেমন গ্রাসের কীটপতঙ্গ ও রোগ:
এই লেমন গ্রাস ফসলে কোন মারাত্মক পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।
ফসল কাটা: লেমনগ্রাস সংগ্রহ করা সুপার নেপিয়ার ঘাস কাটার অনুরূপ। মাটির ঠিক উপরে গাছের সবুজ অংশ কেটে ফেলতে হবে। একটি গাছ ৩ ফুট লম্বা হয়, তাহলে মাটি থেকে ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার ছেড়ে উপরের সবুজ অংশটি কেটে ফেলুন। রোপণের প্রায় ৩ মাস পরে এবং পরবর্তীতে ৪৫ ​​থেকে ৬০ দিনের ব্যবধানে ফসল কাটা হয়। ফসল কাটার পর, গাছের অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হতে দিন।
ফলন: পাঁচ বছর পর্যন্ত ফসল দিতে পারে। রোপণের ১ম বছরে ৩টি কাটিং এবং পরবর্তী বছরে ৩-৪টি কাটিং পাওয়া যায়।

[আরও পড়ুন: দেশের বাইরে বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা ঢ্যাঁড়শের, কীভাবে করবেন চাষ?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement