দেবব্রত দাস, খাতড়া: কোথাও ফুল-ফল হওয়ার পরেই গাছ শুকিয়ে মরতে বসেছে। আবার কোথাও গাছ আচমকা শুকিয়ে মরে গিয়েছে। ফলনের ভরা মরশুমে গাছ শুকিয়ে জমিতেই এভাবে নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ বাঁকুড়ার (Bankura) রানিবাঁধ ব্লকের পুড্ডি পঞ্চায়েত এলাকার তরমুজ চাষিরা। প্রায় ৫০ বিঘা জমির তরমুজ গাছে ফল আসার পরে গাছ মৃতপ্রায়। আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত ওই এলাকার তরমুজ (Watermelon) চাষিদের। কৃষি দপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
ডাঙা জমিতে বোরো ধানের বদলে বিকল্প চাষ হিসাবে তরমুজ চাষ করছেন দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের কৃষকরা (Farmers)। বিকল্প এই তরমুজ নতুন করে আয়ের দিশা দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর এই তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু এবার তরমুজ চাষে নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে। রানিবাঁধ (Ranibandh) ব্লকের পুড্ডি পঞ্চায়েতের ধানাড়া এলাকায় জমিতে ফুল-ফল আসার পরে তরমুজ গাছ হঠাৎ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফল হওয়ার পরে গাছ মরে যাওয়ায় চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মোটা টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার তরমুজ চাষিরা।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের বারিকুল, রাওতোড়া, অম্বিকানগর, কতরো, পুনশ্যা, দুবরাজপুর,ধডাঙ্গা, তুংচাঁড়র, হাকিমসিনান, পুড্ডি, ধানাড়া এলাকায় চলতি বছরে ব্যাপক হারে তরমুজ চাষ হয়েছে। খাতড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমি ভরে গিয়েছে তরমুজে। ওইসব এলাকার উঁচু জমিতে উন্নত মানের তরমুজ ফলছে।
গত কয়েক বছর ধরেই এই তরমুজ চাষ হচ্ছে। ফলনও ভালই হয়েছে। পুড্ডি পঞ্চায়েতের ধানাড়া এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, গাছে ২০০-২৫০ গ্রাম সাইজের তরমুজ হওয়ার পরে আচমকা গাছ শুকিয়ে মরতে বসেছে। ধানাড়া এলাকার চাষি স্বপন মাহাতো বলেন, “আমি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এবার তরমুজ চাষ করেছি। তারমধ্যে প্রায় চার বিঘা জমির তরমুজ গাছ আচমকা শুকিয়ে মরে গিয়েছে। ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের তরমুজ হওয়ার পরে গাছ মরে যাচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে তরমুজ চাষের জন্য ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কীটনাশক ওষুধ, স্প্রে করা হয়েছে। তারপরেও গাছ মরে যাচ্ছে। এইভাবে গাছ মরে গেলে লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হব।” সারেসডাঙা গ্রামের বাসিন্দা অশ্বিনী পালের বক্তব্য, “প্রায় ২০ বিঘা জমিতে এবার তরমুজ লাগিয়েছি। তারমধ্যে প্রায় তিন বিঘা জমির তরমুজ গাছ ইতিমধ্যে মরে গিয়েছে। পুরো জমির গাছ মরে যায় তাহলে অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না।”
কৃষকদের এসব সমস্যার কথা শুনে রানিবাঁধ ব্লকের কৃষি আধিকারিক স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রানিবাঁধ ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু জমিতে তরমুজ গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। কী কারণে এটা হচ্ছে তা দেখা হবে। গাছে ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট না ফুসারিয়াম উইল্ট হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হবে। আপাতত শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলিকে জমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.