নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: উর্বরা শক্তি বজায় রাখতে এবং যেকোন চাষে অধিক ফলন পেতে জৈব কেঁচো সারের চাহিদা বাড়ছে। কৃষকদের কেঁচো সারের চাহিদার জোগান দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। গোষ্ঠীর একনিষ্ঠ সদস্য কালীপদ বসু বলেন, ‘‘আজ থেকে ১৬ বছর আগে ব্লক প্রশাসনের প্রচেষ্টায় গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন সদস্য জৈব কেঁচো সার তৈরি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে পরীক্ষামূলকভাবে তেহট্ট থানার বেতাই সাধুবাজার গ্রামে নিজের বাড়িতে পাঁচ কাঠা জমির উপরে অর্ধেক জায়গায় মাথার উপরে আচ্ছাদন দিয়ে কেঁচো সার তৈরি শুরু করি। সেই থেকে একইভাবে চলে আসছে কেঁচো সার তৈরির কাজ।’’
এই জৈব সার তৈরি করতে কাঁচামাল হিসেবে কৃষকদের ফেলে দেওয়া কলাগাছ, বিভিন্ন খালে জন্মানো কচুরিপানা, জঙ্গলের লতাপাতা, গোবর অবশ্যই লাগবে। এছাড়াও গৃহস্থের বাড়ির শাকসবজির উচ্ছিষ্টও সার তৈরিতে কাজে লাগে৷ গ্রামবাংলায় এই সমস্ত উপকরণ বিনামূল্যে হামেশাই পাওয়া যায়৷ সংগ্রহের জন্য বিশেষ পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয় না৷ গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ হয় না এক পয়সাও। এই সমস্ত কাঁচামাল সংগ্রহের পরে আনুপাতিক হারে একটি পাত্রে তা কয়েকদিন পচাতে হয়। এরপর ওই কলাগাছ, কচুরিপানা, পচা লতাপাতা তুলে এনে ছাউনি দেওয়া ঘরে ছয় ইঞ্চি উঁচু করে বিছিয়ে রাখা হয়৷ তার মধ্যে নির্দিষ্ট প্রকৃতির কিছু যথেষ্ট পরিমাণে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্রুত চলাচল করতে পারা কেঁচো দিয়েই তৈরি সারই সবচেয়ে ভাল৷ এই অবস্থায় বিশেষ পচানো মণ্ড ওলটপালট করে দিতে হয়। প্রথম থেকে ঠিক ৩০ দিনের মাথায় চালনের সাহায্য ছাড়াই করে কেঁচোগুলিকে আলাদা রেখে বস্তাবন্দি করতে পারলেই জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ৷
কালীপদ বসু বলেন, ‘‘এই সার ব্যবহারে জমির উর্বরাশক্তি ঠিক থাকে৷ ফলন বৃদ্ধি পায়৷ মাছ চাষের পক্ষেও এই সার খুবই উপকারী৷ কেঁচো সার ব্যবহার করেলে যেকোন সবজি বা মাছ উৎপাদনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।’’ কৃষকরাও এই সার ব্যবহারে যথেষ্ট উপকার পেয়েছেন৷ তাঁদের দাবি, গাছের রং থাকছে সব সময় সবুজ, থাকছে সতেজ। পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। চাহিদার তুলনায় জোগানের প্রসঙ্গে যদিও কিছুটা হতাশ কালীপদ বসু৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার ধারণা চাহিদার তুলনায় জৈব সারের জোগান কম৷ তাই অনেক সময় কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারের আগ্রহ থাকলেও উপায় নেই।’’ সহ কৃষি অধিকর্তা (ইক্ষু) জেসমিন হক বলেন, ‘‘জৈব কেঁচো সার দিয়ে আখ চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়৷ তাছাড়াও যেকোন চাষে জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন প্রায় দ্বিগুণ পাওয়া যেতে পারে। এই সার ব্যবহারে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়বে। রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত ফসলের বাজারদরের চাইতে জৈব সারে উৎপন্ন ফসলের বাজারদর অনেকটাই বেশি৷’’ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কেঁচো সার ব্যবহারে চাষ করা সবজি বা ফল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকরও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.