Advertisement
Advertisement

Breaking News

Tulaipanji

তুলাইপাঞ্জিকে টেক্কা দিতে হাজির দুই ধান, বীজ পাঠালেন গবেষক

‘কেমা’ ও ‘লালমিহি’র বীজ জিন ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছে।

Two paddy come to ace Tulaipanji

প্রতীকী ছবি

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:December 31, 2024 4:27 pm
  • Updated:December 31, 2024 4:27 pm  

শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: তুলাইপাঞ্জি চালের সুগন্ধিকে অনায়াসে হারিয়ে আগামীতে বাজার বাজিমাত করতে নিঃশব্দে উৎপাদন চলছে ‘কেমা’ ও ‘লালমিহি’। কিন্তু মজার ঘটনা হল, অধিকাংশের আড়ালে রয়ে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরের গোলাপি বাদামী রঙের ঐতিহ্যশালী এই দুটি চাল। এই জেলার একেবারে বিহার ঘেঁষা কৃষিজমিতে স্বল্প পরিসরে চাষ হচ্ছে এই অতুলনীয় দেশি প্রজাতির আমন ধান। স্বাদে-বর্ণে-গন্ধের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের জোরে ‘জিআই’ (ভৌগলিক নির্দেশক) প্রাপ্ত রায়গঞ্জের নিজস্ব তুলাইপাঞ্জী ধানকে সহজেই পিছনে ফেলে ইসলামপুরের প্রত্যন্ত এলাকার ‘কেমা’ ও ‘লালমিহি’ ধানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসেছেন এক গবেষক । 

আকারে হুবহু এক দেখতে হলেও তুলাইপাঞ্জি ধানের দানার থেকে কিঞ্চিৎ ভিন্ন ‘কেমা’ ও ‘লালমিহি’ ধান। মিলছে উত্তরের ইসলামপুরের বিহার লাগায়ো আগডিমটিখন্তি পঞ্চায়েতের পোথিয়া গ্রামের কৃষিখেতে। খোসার ভিতরের আকার অবিকল তুলাইপাঞ্জি। তবে সুগন্ধের মহারাজ। এই বিরল দেশি ধান স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংরক্ষণের জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচারাল রির্সাচ বা আইসিএআরের অনুমোদিত সংস্থার দিল্লির জাতীয় জিন ব্যাঙ্কে (ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল‌্যান্ট জেনেটিক রিসোর্সেস) নথিভুক্ত করতে এবছর পাঠিয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার গবেষক অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায়।

Advertisement

অধ্যাপক সুভাষচন্দ্রর দাবি, ‘‘ইসলামপুরের কেমা ও লাল মিহি ধান তুলাইপাঞ্জির চেয়ে অনেকগুণ বেশি সুগন্ধ। কিন্তু তুমূল জনপ্রিয়তার কারণে রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাষ অনেক বেশি। কিন্তু ইসলামপুরের কেমা কিংবা লালমিহি চাষ কম হওয়ায় প্রচারের আড়ালে। অধিকাংশ চাষির না জানার কারণে এই অভাবনীয় গন্ধের চিকন সরু ধানের আবাদ করতে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। অথচ ঠিকঠিক ভাবে আবাদ করলে তুলাইপাঞ্জিকে টেক্কা দেওয়ার পর্যাপ্ত গুণ লুকিয়ে আছে এই সম্পদপূর্ণ শস্যের দানায় দানায়।’’ সুভাষবাবু আরও বলেন, ‘‘তুলাইপাঞ্জির মতো ভবিষ্যতে জিআই (জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পেয়ে ভুবনখ্যাত হতে পারে জেলার সোনালী সম্পদ শস্যটি।’’

তবে কয়েক দশক ধরে রায়গঞ্জের মোহিনীগঞ্জের নাগর নদীর দুই পাড়ে উৎপাদিত তুলাইপাঞ্জি এখন জেলার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে আবাদে নজর কেড়েছে আপামর কৃষকের। ফলে আগ্রহ বেড়েছে তুলাইয়ে। কিন্তু সেইক্ষেত্রে জেলার অধিকাংশ চাষিদের অজানা কেমা ও লালমিহির মোহিমা। ফলে ইসলামপুরে হাতেগোণা কয়েকজন কৌতুহলী চাষি প্রায় ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এলেও অধিকাংশ কৃষক কেমো ও লাল মিহিতে আগ্রহ এখনও কার্যত জমাট বাঁধেনি। অথচ নিয়ম মেনে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় আবাদ একবার শুরু করলে বাতসাভোগ, কামিনিশাল কিংবা তুলাইপাঞ্জি প্রভৃতি সুগন্ধি চিকন চালকে অবধারিতভাবে ছাপিয়ে ফেলবে অখ্যাত গ্রামের লাজুক ফলনটি।
কয়েকবছর আগে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অফ রাইস ইন্সটিটিউশন (আইআরআরআই) এ মলিকিউলার ব্রিডিং অফ রাইসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষক সুভাষবাবু আরও বলেন, ‘‘কেমা ও লালমিহি পুষ্টিগুণ ও প্রোটিনের মাত্রা অনেকবেশি।’’

রায়গঞ্জের উদয়পুরের বাসিন্দা সুভাষবাবু দেশি ধানের প্রতি ভালোবাসা অগাধ। ছুটি পেলেই কালিয়াগঞ্জের ডালিমগাঁও এলাকার পৈতৃক বাড়িতে ফিরে গিয়ে স্থানীয় কৃষিজমিতে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন ধানের চাষের মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেছেন। রায়গঞ্জের কাশিবাটি এলাকায় ভারতীয় জঙ্গি ধানের সঙ্গে উচ্চফলনশীল ধানের সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন ধানে তৈরির গবেষণায় ব্যস্ত এখন এই অধ্যাপক। তবে ব্যাপারে উত্তর দিনাজপুর জেলা কৃষি দপ্তরের উপ কৃষি অধিকর্তা প্রিয়নাথ দাস বলেন, উৎপাদন যদি ভালো হয়,তাহলে রাজ্য কৃষি বিভাগে ধান পাঠানো হবে। সেখানকার নির্দেশ মতো পরবর্তী কাজ করা হবে। তবে গবেষক অধ্যাপক দপ্তরে যোগাযোগ করলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement