সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বর্ষাকালে টমেটো চাষ। টমেটো উৎপাদনকে বিকল্প চাষের জীবিকা হিসেবে লাভের মুখ দেখতে চাইছে কাঁকসার বিস্তীর্ণ এলাকা। পঞ্চায়েত ও উষরমুক্তি প্রকল্পের সাহায্য নিয়ে কাঁকসায় চলছে বর্ষাকালীন টমেটো চাষ৷ বনকাঠি, বিদবিহার, মলানদিঘিতেও চলছে বর্ষাকালীন টমেটোর চাষ। কাঁকসার বনকাঠি এলাকার তেলিপাড়ায় প্রায় একবিঘা জমিতে এবার বর্ষার টমোটো চাষ হয়েছে। মূলত, ‘রোহিত-চ’ প্রজাতির টমেটো চাষেই হাত পাকাচ্ছেন চাষিরা।
শীতকালের ফসল টমেটোর চাহিদা সারা বছরই থাকে। তবে বর্ষাকালে প্রায় আকাশছোঁয়া দামকে মেনে নিয়েই টমেটোকে রান্নাঘরে জায়গা দিতে হয়। সেই দামে রাশ টানতেই বর্ষাকালে টমেটো চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্ষাকালের ফসলকে যত্নআত্তি না করলে তা টিকিয়ে রাখা মুশকিল। তাই ‘রেইন শেল্টার’ গড়ে টমেটোর চারা রোপন করা হয়েছে৷ এই প্রজাতির টমেটো চাষে জল কম লাগে৷ তাই সেচের জল সিঞ্চনের প্রয়োজন নেই। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্ষার জলকে ধরে রেখে সেচের কাজ করা হচ্ছে৷ একটি বড় ট্যাঙ্কারে জল ধরে রাখা হয়৷ সেই ট্যাঙ্কার থেকে ছিদ্রযুক্ত পাইপের মাধ্যমে জল দেওয়া হচ্ছে গাছে৷ এই ‘বিন্দু সেচ’ পদ্ধতিতে সেচের জলকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়৷এই ‘রোহিত-চ’ প্রজাতির টমেটো গাছ ছয় থেকে সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়৷ বড় হয়ে লতানো প্রকৃতির হয়ে যায় এই গাছ৷ উপরে থাকা ‘রেইন শেল্টার’এর শেডের উপর বাড়তে থাকে গাছ৷ এক একটি শেডে দু’শোটি করে চারা লাগানো হয়৷ মাত্র ৪৫ দিনেই ফল ধরবে টমেটো গাছে৷ গাছ প্রতি ৩০ কিলো টমেটো হবে বলে প্রশাসনের আশা৷ আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ফলন হবে এই গাছগুলিতে৷
জানা গিয়েছে, স্থানীয় দুই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কুড়ি জন সদস্য টমেটো চাষ করছে৷ আগে কৃষকরা বৃষ্টির জলের ভরসাতেই মরশুমী ধান বা সবজি চাষ করতেন৷ কিন্তু বৃষ্টি কম হলে চাষও বন্ধ হয়ে যেত৷ তাই ব্লক থেকে বিকল্প চাষের জন্যে জোর দিতে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। একশো দিনের প্রকল্পে ‘উষরমুক্তি’র সহযোগিতায় শুরু হয় বর্ষকালীন টমেটো চাষের প্রশিক্ষণ৷ বনকাঠি পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করে৷ একশো দিনের প্রকল্পে এই টমেটো চাষে ১৫০টি কর্মদিবসের সৃষ্টি হয়েছে৷ খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা৷ এখনও পর্যন্ত প্রায় সাতাশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় বাজার-সহ শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরেও পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে৷ বর্ষার সময় টমেটোর দামও থাকে চড়া। এই বিশেষ জাতের টমেটো বাজারে এলে সেই দাম কমবে বলেই মনে করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা৷ আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ করা হচ্ছে।
কাঁকসায় টমেটো চাষে লাভের মুখ দেখলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যত্রও ভাবনাচিন্তা শুরু হবে। ‘উষরমুক্তি’ প্রকল্পের অধীনেই হবে চাষ। দু’শোটি চারা পিছু প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁকসা ব্লকের বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস জানান,“বিকল্প চাষের জন্যে কৃষকদের উৎসাহিত করছে রাজ্য সরকার। বিকল্প চাষ হিসাবেই বেছে নেওয়া হয়েছে বর্ষাকালীন টমেটোকে৷ শুধু টমেটোই নয় এই রেইন শেডের ভিতরে পেঁপে, ধনেপাতা, পালংশাক-সহ শীতকালীন সবজিরও চাষ হচ্ছে৷ স্থানীয় কৃষকরা এই চাষ নিয়ে বেশ উৎসাহিত। আগামিদিনে আরও বিভিন্ন ধরনের বিকল্প চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.