টমেটো কেবল দর্শনধারী নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের কাজ করতেও পারে। বিভিন্ন রোগ, যেমন ক্যানসার, হৃদরোগ, রিওম্যাটিজম ইত্যাদির উপশমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সহজেই চাষ করে ভাল আয় করা যায় পুষ্টিতে ভরপুর এই সবজি। টমেটোর পুষ্টিগুণ নিয়ে লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন বিভাগের পোস্ট-হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্টের গবেষক পিঙ্কি মাইতি ও অধ্যাপক আইভি চক্রবর্তী।
যেহেতু সারা পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে টমেটো (Tomato) চাষ হয়। বাজারে সারা বছরই এর অল্প বিস্তর আনাগোনা এবং সব জায়গার অধিবাসীদের মধ্যেই এর ব্যবহার ব্যাপক প্রচলিত। তাই এতে উপস্থিত ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উদানগুলির প্রাপ্তি মানবদেহে নিছক কম নয়। আর একটি মজার ব্যাপার হল বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি করার পর এই সস, পেস্ট, পিউরি, কেচাপ ইত্যাদি টমেটোজাত দ্রব্যগুলি থেকে দেহে প্রাপ্ত লাইকোপেন বা বিটা ক্যারোটিন ও ফেনলের পরিমাণ অনেক বেশি। কারণ, তাজা সবজিতে এই উপাদানগুলি অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে থাকলেও সেটি পুরো মাত্রায় আমাদের ক্ষুদ্রান্তে শোষিত হতে পারে না। বরং রান্না বা প্রক্রিয়াকরণ করার পর মানবদেহে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
সম্প্রতি নরওয়ের জন ইনেস সেন্টার এবং ইনস্টিটিউট অফ ফুড রিসার্চের খাদ্যবিজ্ঞানীর এইচ কিউ টি (HQT) নামক একটি জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। এই জিনটি আবার ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড (CGA) নামে একটি শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্তুত করতে সক্ষম। পরবর্তীকালে এই বিজ্ঞানীরা টমেটোতেও এই জিনটি উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। এখানেই থেমে যায়নি, টমেটোতে এই HQT জিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করিয়ে দিয়ে ক্লোরোজেনি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে সমর্থ্য হয়েছেন। এর ফলে CGA সমৃদ্ধ টমেটো গাছ যেমন একদিকে নিজেদের দেহে রোগ প্রতিরোধ করতে সমর্থ্য হয় (বিশেষত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ) আবার গাছ থেকে পেড়ে নেওয়ার পরও বহুদিন রোগমুক্ত থাকতেও সক্ষম হয়।
আজকের দিনে ক্যালোরি সচেতন মানুষের জন্য টমেটোর আর একটি বিশেষ গুণ হল পাকা টমেটোতে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে dry matter ও ফ্যাট জাতীয় দ্রব্য থাকার দরুন এটি আমাদের দেহে সীমিত পরিমাণে ক্যালোরি যোগ করে। একটি বয়সের পর সঠিক স্বাস্থ্যরক্ষায় এটি একটি অপরিহার্য দিক। টমেটো সম্বন্ধে দু’টি প্রচলিত ধারণা হল যে, টমেটো খেলে রক্তে ইউরিক আ্যসিডের সমস্যা দেখা এবং গাউটজনিত রোগের আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয়টি হল কিডনিতে পাথরের সমস্যা হয়। প্রথমে আসি টমেটো ও কিডনিতে পাথরের সংক্রান্ত তথ্যে। কিডনিতে পাথর হওয়ার জন্য দায়ী মূলত ক্যালসিয়াম অক্সালেট মনোহাইড্রেট যৌগটি। যেহেতু টমেটোতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে তাই এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
তবে শুধু টমেটো নয়, দৈনন্দিন ব্যবহৃত বেশিরভাগ সবজি ও ফলে কম বেশি ক্যালসিয়াম অক্সালেট বিদ্যমান। আর টমেটোকে ভালভাবে রান্না করে খাওয়া হলে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের পরিমাণ কমে যায় এবং নিরাপদেই গ্রহণ করা যেতে পারে। আর একটি ব্যাপার হল যদি কোনও ব্যক্তির কিডনির সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে এই ধরনের অক্সালেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণে বিধিনিষেধ চলে আসে। তা না হলে প্রত্যহ টমেটো খেলে অনেকেরই কিডনির সমস্যা নাও হতে পারে। টমেটোর সঙ্গে রক্তে ইউরিক আ্যাসিডের একটি সম্পর্ক থাকলেও দেখা গেছে টমেটোর দৈনন্দিন খেলেও সবারই গাউট এর (ইউরিক আ্যসিড জনিত সমস্যা যাতে হাড়ের জয়েন্টে ফুলে যাওয়া, Inflammation দেখা দেয়) সমস্যা হবে এমন কোনও প্রমাণ নেই। উপরন্তু প্রয়োজন মতো টমেটো খেলে Inflammation কমার সম্ভাবনা প্রচুর রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.