পান একটি অর্থকরী ফসল। কিন্তু বিভিন্ন রোগের কারণে ফলনে প্রভাব পড়ে। ফলন কম হওয়ায় কৃষকও পানচাষে আগ্রহ হারান। পানে রোগের প্রাদুর্ভাব প্রাক-বর্ষাকাল থেকেই শুরু হয়। বর্ষাকালে যা চরমে পৌঁছয়। পানকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে আগাম প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গৌতম মণ্ডল।
পান একটি অত্যন্ত লাভজনক অর্থকরী ফসল। প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। বাণিজ্যিকভাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পানকে ভারতের ‘সবুজ সোনা’ হিসাবে গণ্য করা হয়। ভারতবর্ষে পান চাষের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ আগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গে পান প্রধানত ‘বরোজ’-এ চাষ করা হয়। বরোজ অধিক আর্দ্রতা এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। যা পানের উপযুক্ত বৃদ্ধি এবং গুনগতমান সঠিক রাখার জন্য উপযোগী। তাছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে বরোজের ছাউনি ও চারদিকের বেড়ার দেওয়ালের পুরুত্বে কম-বেশি করে আপেক্ষিক আর্দ্রতা, গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রা এবং রোদ, শীতকালে নিম্ন তাপমাত্রা এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষিত রাখা হয়। বর্তমানে পান চাষিরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।
ফলে, দিন-দিন চাষের জমির পরিমাণ কমে যাছে। এর মধ্যে, রোগের সমস্যাও অন্যতম। যা প্রায় প্রাক-বর্ষাকাল থেকে শুরু হয় এবং তা বর্ষাকাল থেকে চরম মাত্রায় ধারণ করে। তাই প্রাক-বর্ষাকাল থেকেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও আগাম সতর্কতা গ্রহণ করতে না পারলে চাষিভাইদের সমূহ বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। যা পরে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।মূলত যে রোগ সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে হয় তা হল, ছত্রাকজনিত পাতা পচা, কাণ্ড পচা (ঢলে পড়া) ও পাতায় চাকা-দাগ এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতায় দাগ (অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যায় ছোট দাগ)। এই সমস্ত রোগের জীবাণু জমিতে ও গাছের গোড়ার মাটিতে থাকে।
তাই বর্ষা আসার আগে থেকে যে যে সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে তা হল:
(১) জমিতে জল দাঁড়ানো চলবে না। (২) জমির মাটি বিশেষত গাছের গোড়ার মাটি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি ওষুধ বোর্দু-মিশ্রণ (১.০ শতাংশ) দিয়ে ভিজিয়ে এক মাস অন্তর বিশুদ্ধ করতে হবে। (৩) বোর্দু-মিশ্রণ (০.৫ শতাংশ) দিয়ে ২০ থেকে ৩০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ধুয়ে দিতে হবে। (৪) জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করার সময় অথবা অন্তত এক মাস অন্তর জৈব ওষুধ, ট্রাইকোডার্মা কিছু পরিমাণ জৈব সারের সঙ্গে মিশিয়ে (মোটামুটি ২-৫ গ্রাম জৈব ওষুধ প্রতি কেজি জৈব সারের জন্য) প্রয়োগ করতে হবে। (৫) পান ফসল তোলা এবং লতাকে নামানোর পর বোর্দু-মিশ্রণ (০.৫ শতাংশ) দিয়ে গাছেকে স্প্রে করে ধুয়ে দিতে হবে। (৬) যাঁরা নতুন লতা লাগাবেন, তাঁরা অবশ্যই লতাকে বোর্দু-মিশ্রণ (০.৫ শতাংশ) দিয়ে ৩০ মিনিট শোধন করে লাগাবেন। (৭) বরোজের বাইরের চারদিকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষত কচু জাতীয় গাছ নির্মূল করতে হবে। (৮) বরোজের চারিদিকের ও ছাদের আচ্ছাদন বা ছাউনি সময়মতো ঘন এবং পাতলা করে দিতে হবে।
বোর্দু-মিশ্রণের বদলে ম্যাঙ্কোজেব (০.২৫ শতাংশ) বা ওই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তুলনামূলকভাবে কার্যকারিতা কম এবং খরচও বেশি। স্প্রে করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি না হয়। রাসায়নিক সার ও ওষুধ ব্যবহার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.