ফাইল ছবি
অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে তৈরি করা হল চা বাগান। পর্বতের মতো জমি তৈরি করে ও সেখানে ঢাল তৈরি করে প্রায় ১ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ লাগানো হয়েছে। ৫ থেকে ৬ রকমের চা গাছ লাগানো হল এখানে। টিবি ২৫, টিবি ২৬-এর মতো প্রজাতির চা গাছ লাগাল বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বি গার্ডেনে চা বাগান তৈরি করা হল। এমনটাই দাবি গার্ডেন কর্তৃপক্ষের। ব্রিটিশ আমলে চা বাগান তৈরি করা হলেও পরে অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে তা নষ্ট হয়ে যায়।
বি গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দর সিং জানালেন, ইংরেজ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় বি গার্ডেনে চা বাগান তৈরি করা হয়েছিল। সেসময় চা গাছ লাগানোও হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে পরিচর্যার অভাবে তা নষ্ট হয়ে যায়। তার পর ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনে চা বাগান তৈরি করা হল। দার্জিলিংয়ের চা বাগানের মতো না হলেও ওই ধাঁচেই এখানে চা বাগান তৈরি করা হয়েছে। এই চা বাগান তৈরির জন্য প্রথমে মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাটি চা গাছ রোপণের উপযুক্ত কি না তা খতিয়ে দেখা হয়। তারপর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রায় ৩ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটি চা গাছের উপযুক্ত করা হয়। এরপর ওখানে অ্যালুমিনিয়াম সালফেট ও অ্যালুমিনিয়াম প্যারালাইট দিয়ে চা গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে চা গাছগুলি সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষের আশা, চা বাগানটি আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে তবেই বোঝা যাবে চা গাছগুলি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। গার্ডেনে এই চা বাগান তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, তরাই, ডুয়ার্স অঞ্চলে গিয়ে চা বাগান নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছেন। তার পর শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসে তাঁরা চা বাগান তৈরির পরিকল্পনা করেন। কোন কোন প্রজাতির চা গাছ পোঁতা হবে তা নির্ধারণ করে এখানে সেই প্রজাতির চা গাছ লাগানো হয়।
এই প্রসঙ্গে জয়েন্ট ডিরেক্টর আরও বললেন, “দার্জিলিংয়ের মতো না হলেও আমরা এখানে চা বাগান তৈরির চেষ্টা করেছি। এখানে এখন গরম, চা গাছের জন্য পরিবেশ বর্তমানে অনুকূল নয়। তাও আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে জল দিয়ে চা গাছগুলির পরিচর্যা করছি। আশা করছি, বৃষ্টি পড়লে এই চা বাগান আরও সুন্দর হবে।” তাঁর কথায়, চা গাছের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া ও বৃষ্টির প্রয়োজন। পাশাপাশি জমি এমন হতে হবে যাতে চা গাছের গোড়ায় জল না জমে।
সেজন্য আমরা জমিকে ঢালু করে দিয়েছে। একটি ঝিলের ধারে উঁচু ঢিপি করে চায়ের বাগান করা হয়েছে। যাতে জল চা বাগানে দাঁড়াবে না। বৃষ্টির জল জমিতে পড়ে গড়িয়ে গিয়ে ঝিলে পড়বে। বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত বর্তমানে বি গার্ডেনের বিজ্ঞানীরা চা গাছে জল দিয়ে এর পরিচর্যা করছেন। এমনকী এখানে অটো স্প্রিঙ্কলার লাগানো হয়েছে। যার সাহায্যে ১০ মিনিট ছাড়া ছাড়া চা গাছে জল দেওয়া হচ্ছে। জয়েন্ট ডিরেক্টরের কথায়, “চায়ের চারাগাছ পোঁতার পর থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম, এই আবহাওয়াতে প্রায় ৭০ শতাংশ গাছ বেঁচে গিয়েছে। ফলে এতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে বি গার্ডেনে প্রতিকূল পরিবেশেও চায়ের বাগান তৈরি করা যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.