সম্যক খান, মেদিনীপুর: প্রায় ২১ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি থাকলেও আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সাফল্য পেতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। জেলা কৃষিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গড় লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে প্রকৃত বর্ষার অভাবে যা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে বর্ষা থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে কোনও সমস্যা হবে না বলেও মনে করছেন কৃষিদপ্তরের কর্তারা।
জুন ও জুলাই মাসকে বর্ষাকাল বলেই সকলে জানে। কিন্তু ওই দুই মাসেই বৃষ্টিপাত হয়েছে সবথেকে কম। জুন মাসে বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ২৩৯ মিলিমিটার। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে মাথায় হাত পড়েছিল চাষিদের। মাঝে মাঝে নিম্নচাপ দু-একদিনের জন্য কিছুটা আশা জাগালেও আদৌ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কিনা তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। ভরসা জোগাতে পারছিল না কৃষিদপ্তরও। জেলা কৃষিদপ্তরের সহ অধিকর্তা দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “ওইসময় বৃষ্টির জলের পাশাপাশি সেচ দিয়েও বেশ কিছু এলাকায় চারা রোপনের কাজ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে আগষ্ট মাসের ভারী বর্ষণ অনেকটাই সামাল দিয়ে দিয়েছে।”
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আগষ্ট মাসে ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। এবছর এখন পর্যন্ত গড় যেখানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৯৯৬ মিলিমিটার সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৮৮ মিলিমিটার। ফলে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতি প্রায় ২১ শতাংশ। গত দু’বছর আগে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সর্বনাশ হয়েছিল কৃষকদের। প্রায় তিনবার বন্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বেশ কিছু এলাকাকে।
প্রতি বছর বর্ষাকালে গড় বৃষ্টিপাত যেখানে ১৫০০ মিলিমিটার হয়ে থাকে সেখানে গত ২০২১ সালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৩০০ মিলিমিটার। বন্যার কবলে পড়ও কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার পুরোপুরি বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে। জুন ও জুলাই দুমাসে যেখানে ৬৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা সেখানে এবছর ওই দুই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৪৮৬ মিলিমিটার। ফলে বহু জায়গাতেই চারা রোপনের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে।
আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কৃষকরা। গোয়ালতোড়ের শৈবাল বণিক, আনন্দপুরের মহম্মদ ঈশা, মেদিনীপুর সদর ব্লকের পলাশ চালকরা বলেন, “প্রথমদিকে বারবার ধান রোয়ার চেষ্টা করেও বৃষ্টির অভাবে তা করতে পারেননি। বিশেষ করে যাদের জমি একটু উঁচুতে বা যেখানে সেচের সুবিধা নেই সেখানে এই সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু এখন সেই সমস্যা মিটেছে। নিজ নিজ জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। এবছর এখন পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার হেক্টর জমি চাষ হয়েছে। কৃষিদপ্তরের সহ অধিকর্তা দুলালবাবু বলেন, “এখনও কিছুটা সময় আছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.