Advertisement
Advertisement
Corona

কোভিড পরিস্থিতিতে গবাদি পশু-পাখির অতিরিক্ত যত্ন নিন, জানুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

COVID মূলত মানুষের একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ যা এখনও পর্যন্ত গবাদি পশুপাখিতে ছড়ানোর কথা জানা যায়নি।

Take extra care of cattle and poultry as corona pandemic is far from over । Sangbad pratidin
Published by: Abhisek Rakshit
  • Posted:March 22, 2021 8:10 pm
  • Updated:March 22, 2021 8:10 pm  

COVID মূলত মানুষের একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ যা এখনও পর্যন্ত গবাদিপশু ও পাখিতে ছড়ানোর কথা জানা যায়নি। অনেকেই সাবধানতা বশতঃ গবাদি পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন। তা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইন্দ্রনীল সামন্ত ও প্রদীপ কুমার দাস।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও আবহাওয়ার সামগ্রিক পরিবর্তনের ফলে আজ আমরা প্রলম্বিত গরম কাল ভোগ করি। সেই গরম কালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমরা এখন। প্রতি বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মশামাছি ও নানা কীট পতঙ্গের (Insect)সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ে পতঙ্গবাহিত রোগের সংখ্যা যা আজকের COVID পরিস্থিতিতে আরও জটিল ও ভয়ংকর। আজকের আলোচনা এই সব রোগ, তার প্রতিকার (Remedy) ও COVID পরিস্থিতিতে গবাদি পশুপাখির অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার উপায় নিয়ে।

Advertisement

গবাদি পশুপাখির পতঙ্গবাহিত রোগের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল ঠিলেরিয়াসিস (Theileriasis)। এই রোগের কারণ হল ঠিলেরিয়া নামক একটি পরজীবী। এই পরজীবী একটি বিশেষ উকুনের মাধ্যমে ছড়ায়। গ্রীষ্মকালে উকুনের সংখ্যাবৃদ্ধি এই পরজীবীর বিস্তারে সাহায্য করে। এই রোগে আক্রান্ত গরুর জ্বর, শরীরের উপরিভাগের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, অ্যানিমিয়া (Anemia), লাল রঙের প্রস্রাব দেখা যায়। শূকরের দেহে ‘জাপানিস এনসেফালাইটিস’ ও ভেড়ার শরীরে ‘ব্লু টাং’ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। দুটি রোগের বিস্তারে মশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

[আরও পড়ুন: গরমেই ফলের চাষে মাছির উপদ্রব বেশি হয়, কীভাবে মোকাবিলা করবেন? জেনে রাখুন]

মানুষের মতোই গবাদি পশু পাখিরাও হোমেওথার্মিক , অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়া  কমার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রার কোনও পরিবর্তন হয় না। এই পরিবর্তন শুধু দেখা যায় সরীসৃপের দেহে। শরীরের তাপমাত্রা স্থির রাখতে গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপ বার করতে হয় ঘামের মাধ্যমে। ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার সময়ে শরীর শীতল হয়। আমাদের রাজ্যে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে ঘাম শুকোতে পারে না। ফলে তৈরি হয় উষ্ণতাজনিত স্ট্রেস। অন্যান্য গৃহপালিত পশুপাখির তুলনায় স্ট্রেসের সর্বাধিক প্রভাব দেখা যায় ক্রসব্রিড গরুর মধ্যে। যে ক্রসব্রিড গরুতে জার্সি বা হোলস্টাইন নামক বিদেশি গরুর বীজ ব্যবহার করা হয়েছে তার উপরে স্ট্রেসের প্রভাব পড়ে মারাত্মক। তাই আজকাল সরকারি প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে গির, শাহিওয়াল, থারপারকার নামক দেশি উন্নত প্রজাতির গরুর বীজ পাওয়া যায়। স্ট্রেসের প্রভাবে গবাদি পশুর খাওয়া ও দুধের পরিমাণ কমে যায়। গর্ভধারণের এবং গাভী গরুর বাচ্চার ওজন কমে যায়। অতিরিক্ত উষ্ণতাজনিত স্ট্রেস থেকে জলশূন্যতা বা dehydration তৈরি হয়। ফলে রক্তচাপ কমে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গে রক্তসরবরাহ কমে যায়। প্রাণীটি আক্রান্ত হতে পারে ‘হিটস্ট্রোক’এ। খিঁচুনি, চলাফেরায় অসুবিধা দেখা যায় এবং চিকিৎসার অভাবে গরুর মৃত্যু অবধি হতে পারে। এছাড়া সারা বছরের মতোই গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় পালান প্রদাহ বা mastitis রোগের জন্য। 

আজ গোটা বিশ্ব একটি আণুবীক্ষণিক জীবের দাপাদাপিতে সন্ত্রস্ত। প্রতিনিয়ত মানুষ ধেয়ে চলেছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। উপার্জনের পথগুলি বন্ধ হতে চলেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি আজ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। এরকম পরিস্থিতিতে গবাদি পশুপাখি পালন খুঁজে দিতে পারে বিকল্প আয়ের পথ। প্রাচীন যুগ থেকেই এই কারণে কৃষির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পথ চলা গবাদি পশুপাখি পালনের। COVID পরবর্তী পরিস্থিতিতে পশুপালন হতে চলেছে প্রধান আয়ের উৎস, কারণ বহু শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়েছেন নিজের রাজ্যে বা প্রতিবেশী রাজ্যে।

[আরও পড়ুন: কৃষিক্ষেত্রে আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, DGPS প্রযুক্তিতে জমির মান নির্ধারণে তৈরি যন্ত্র]

পশুপাখি পালনের অন্যতম শর্ত হল একটা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রাণীগুলোকে রাখা, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মশা- মাছি- কীট- পতঙ্গ থেকে রক্ষা করা, সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা এবং যথাসময়ে টিকাকরণের মাধ্যমে রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করা। অনেকে ভাবেন অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে যা সর্বৈব মিথ্যা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, COVID মূলত মানুষের একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ যা এখনও পর্যন্ত গবাদি পশুপাখিতে ছড়ানোর কথা জানা যায়নি। অনেকেই সাবধানতাবশত গবাদি পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন COVID থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকারি প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনওই এই জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন না। এই প্রবণতা ক্ষতি করে প্রাণীটির , ক্ষতি করবে আপনার, পরিবারের এবং সমগ্র পরিবেশের।

প্রতিকারের উপায় কী?
• পশুটিকে মাঝে মাঝে ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা, গলা ধুয়ে দেওয়া দরকার।
• ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে পশুপাখি রাখা।
• দুধ দোয়ানোর আগে ও পরে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধোয়া।
• পালান ভাল করে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধোয়া।
• কীটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। ফাইলেরিয়া রোগ সংক্রমণকারী কীটটি গবাদি পশু ছাড়াও ইঁদুর ও বন্যজন্তুর মাধ্যমে ছড়ায়। কাজেই ইঁদুর ও বন্য জন্তুর নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
• মশার সংখ্যা কমাতে জল জমতে দেয়া উচিত নয়। জমা জলে ডিডিটির প্রয়োগ যথাযথ মাত্রায় করা উচিত।
• রোগ সারানোর থেকে রোগ যাতে না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

গবাদি পশুর মুখ্য রোগ যেমন খুরাই, গলাফোলা, বাদলা, তড়কা, পিপিআর মূলত বর্ষাকালে দেখা যায়। কাজেই বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই এই সময়ে টিকাকরণ জরুরি। গ্রীষ্মকালে ভোরে বা বিকেলে যখন তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে টিকাকরণ করা উচিত। নিকটবর্তী সরকারি প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই লকডাউনের সময়েও খোলা আছে। কাজেই প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করে টিকাকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। টিকাকরণের পর প্রচুর জল আর ভিটামিন খাওয়াতে হবে। রোগ চলাকালীন টিকাকরণ করা যাবে না। টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ যেন যথাযথ হয়। গর্ভবতী গরু ছাগলকে টিকাকরণ করা উচিত নয়। এই সাধারণ সতর্কতাগুলি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে আমরা গবাদি পশুপাখিকে সুরক্ষিত রাখতে পারব এই দুঃসময়ে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement