Advertisement
Advertisement

Breaking News

Take a look at ways to protect jackfruit from pests

কাঁঠালকে বিভিন্ন পোকা থেকে দূরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ, জেনে নিন প্রতিকারের উপায়

পোকা থেকে বাঁচাতে পারলে হতে পারে বিপুল লক্ষ্মীলাভ।

Take a look at ways to protect jackfruit from pests । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:April 5, 2023 2:43 pm
  • Updated:April 5, 2023 2:43 pm  

রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাগান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা এবং রোগগ্রস্ত ডাল, মুচি, শুষ্ক ফলের ডাঁটি নিয়মিত ছেঁটে ফেলা দরকার। শিম্বি জাতীয় ফসলের চাষ করে কাঁঠাল একটি বহুমুখী প্রজাতির খাদ্য, কাঠ, জ্বালানি, পশুখাদ্য, ঔষধি ও শিল্পজাত পণ্য। এই ফলের আঠা বার্ড লাইম হিসাবে, গাছের ছাল দড়ি ও কাপড় তৈরিতে, কাষ্ঠল অংশ দিয়ে আসবাবপত্র ও সংগীতের সরঞ্জাম প্রস্তুত হয়। কাঁচা ফল (এঁচোড়) রান্না করে ও আচার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। পাকা অবস্থায় সরাসরি ফল হিসাবে খাওয়া যায়। পাকা ফলের শাঁস থেকে জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, মার্মালেড এবং আইসক্রিম তৈরি হয়। বীজ শুকিয়ে ভেজে বা রান্নায় সবজি হিসাবেও খাওয়া যায়। ফল, পাতা এবং বাকল-সহ গাছের বিভিন্ন অংশ ওষুধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক তন্ময় মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. ফটিককুমার বাউরি। পড়ুন শেষ পর্ব। 

কাঁঠালের ছাল খাওয়া পোকা (ইন্ডারবেলা কোয়াদ্রিনোটাটা):
চেনার উপায়: পূর্ণাঙ্গ হালকা হলদে বা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। ডানায় ছোট ছোট বিন্দু দেখতে পাওয়া যায়।
ক্ষতির লক্ষণ: এই কীটের লার্ভাদশাই ক্ষতিকর। ছোট ছোট হালকা রংয়ের এই শুককীট গাছের ছালের নীচে বাসা বাঁধে এবং দলবদ্ধ অবস্থায় ছালের ভিতরের অংশ খেয়ে গাছ ও ছালের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি করে। এই গর্তগুলি প্রায় ১৫-২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে। সাধারণত দিনের বেলায় এরা লুকিয়ে থাকে এবং রাত্রে এরা কাণ্ডের মধ্যে ঢুকে খেতে থাকে ও গর্তগুলি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। পরবর্তীতে কান্ডের ভিতর প্রবেশ করে খেতে থাকে। গাছের সরস ভাব কমে যায়। গাছ থেকে ছাল আলগা হয়ে যায় এবং গাছটি শুকিয়ে মারা যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: গাছের অবাঞ্ছিত ছোট ছোট ডাল পালা এবং ফলের বোঁটার অংশবিশেষ নিয়মিত ছেঁটে গাছ পরিষ্কার রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত মোবিল বা আঁঠালো পদার্থ লাগালে এর পোকার কীড়া গাছ বেয়ে উঠতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে দিতে হবে। মঞ্জরী আসার সময় থেকে প্রতি লিটার জলে ৫ মিলি হারে নিমতেল ব্যবহার করতে হবে। মনোক্রোটোফস ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার জন্য ক্ষতছিদ্রের ভিতরে লোহার নরম শলাকা প্রবেশ করিয়ে পোকা মারতে হবে।

Advertisement

সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্রের ভিতরে পেট্রোল ঢেলে কাদামাটি দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। নুভান ১ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশয়ে প্রয়োগ করেও এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কান্ডে ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% এসএল @ ১ মিলি/৫ লিটার বা অ্যাসিটামিপ্রিড ২০% এসএল @ ১ গ্রাম/১০ লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। কার্বারিল ৫০% ডাব্লুপি @২.৫ গ্রাম/লিটার বা কুইনালফস ২০% ইসি @ ২ মিলি/লিটার জলে গুলি স্প্রে করার করা যেতে পারে।
দয়ে পোকা (সিউডেককাস ব্রেভিপেস)
চেনার উপায়:
পূর্ণাঙ্গ (স্ত্রী): ডানাহীন, একটি চ্যাপ্টা শরীর, পুরুষ: ডানাযুক্ত, ডাঁশের মত মুখোমণ্ডল বিহীন দীর্ঘ অ্যান্টেনা। নিম্ফ: অম্বর রঙের সাদা মোমের মতো প্রলেপ এবং ডানা।
ক্ষতির লক্ষণ: দয়ে পোকা একটি প্রধান কীটশত্রু যা পাতার গোড়ায়, খাঁজে, মঞ্জরী দণ্ডে একসাথে রস চুষে গাছকে বিবর্ণ করে। পাতা ঢলে পড়ে এবং ঢলে পড়া পাতা লালচে হলুদ বর্ণের হয়।
প্রতিকার ব্যবস্থা:
পরিচর্যা: আক্রান্ত জমি থেকে চারা সংগ্রহ করা চলবে না। রোপণের সময়, নিরাময় রোপণ উপকরণ মূলগত বাদামী পাতার অপসারণ করা উচিত নয়।যান্ত্রিক: কাণ্ডের উপর আঠালো পদার্থ বেড় দেওয়া হয়। (৫ সেমি লম্বা)।রাসায়নিক: প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে চারার কন্দকে মিথাইল প্যারাথিয়ন ৫০% ইসি. ০.০২-০.০৪% দ্রবণে ডোবাতে হবে। আক্রান্ত জমিতে ফোরেট ১০% জি @ ৪ কেজি/একর ১০০-১২৫ দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৫ % এসএল @ ১ মিলি/৫ লিটার বা বুপ্রোফেজিন ২৫% এসসি@১.৫ মিলি/লিটার গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ, গভীর সমুদ্রে কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর তৈরির ভাবনা]

আঁশ পোকা
চেনার উপায়:
স্ত্রী পোকা: ডানাবিহীন ও পুরুষ পোকার থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের।
ক্ষতির লক্ষণ: গাছের ডালে ও কাণ্ডে এরা পুরো ছড়িয়ে থাকে। লালচে বাদামী মোমের আস্তরণ কাণ্ডে দেখা যায়। অধিক আক্রমণে ডাল শুকিয়ে ধীরে ধীরে মারা যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা:
যান্ত্রিক: আক্রান্ত অংশে কেরোসিন ডোবানো কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া জরুরি। রাসায়নিক: কার্বোসালফুরান ২৫% ইসি @ ২ মিলি/লিটার বা ক্লোথিয়ানিডিন ৫০% ডাব্লুপডিজি @ ১ গ্রাম/১০ লিটার বা পাইরিয়াম ২% ইসি @ ১.৫ মিলি/ লিটার জলে গুলে স্প্রে করার সুপারিশ করা যেতে পারে।
কাঁঠালের রোগ শত্রু:
মঞ্জরী পচা, ফল পচা, ঢলে পড়া ইত্যাদি কাঁঠালের প্রধান রোগ। এছাড়া পাতায় দাগ, পরিণত ফল পচা, ডগা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদিও দেখা যায়।
ফল পচা বা মঞ্জরী পচা বা মুচিঝরা রোগ:
কাঁঠালের সবচেয়ে মারাত্বক রোগ সমস্যা হল ফল পচা বা মঞ্জরী পচা। ছত্রাকের আক্রমণের কারণে ছোট অবস্থাতেই কালো হয়ে ঝরে পড়ে। পুষ্পমঞ্জরীতে এই রোগের জীবাণু আক্রমণ করে। ফলের গায়ে কালচে রঙয়ের ছত্রাক সূত্র দেখতে পাওয়া যায়। এই জীবাণু খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত ফলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিকার:
রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাগান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা এবং রোগগ্রস্ত ডাল, মুচি, শুষ্ক ফলের ডাঁটি নিয়মিত ছেঁটে ফেলা দরকার। স্বাভাবিক ভাবে পুরুষ মঞ্জুরী পরাগ মিলনের আগে ও পরে রোগাক্রান্ত হয়ে ঝরে পড়ে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে স্ত্রী মঞ্জরীও আক্রান্ত হয়। ডাইথেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল এমজেড ৭৫, প্রতিলিটার জলে ২.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফল পচা রোগ:
গুদামজাত পাকা ফল এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। রোগাক্রান্ত ফলের ছাল পচে বাদামি রঙ ধারণ করে। ভিতরের অংশে রোগ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ১-২ দিনের মধ্যে ফলটি পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফল কেটে মাটিতে রাখা যাতে পরিণত ফল লম্বা বোঁটাসহ ধার কেটে সাবধানে বাজারে আনতে হবে যাতে ফলের কোনওরকম ক্ষতি না হয়। বায়ু চলাচল করে এমন ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় ফলগুলি ছড়িয়ে রাখতে হবে।
ঢলে পড়া রোগ:
যে কোনও বয়সের ফলন্ত গাছ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। গাছের একদিকে অথবা সম্পূর্ণ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। ডগার দিকে পাতাবিহীন শাখাপ্রশাখা শুকিয়ে যায়। কয়েক মাসের মধ্যে আক্রান্ত গাছটি শুকিয়ে মরে যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
গাছের গোড়ায় সবুজ সার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রতি বছর ফলন্ত গাছে প্রচুর পরিমাণে জৈবসার প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কম হয়। ফুল আসার সময় থেকে প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম ও দুই গ্রাম ডাইথায়োকার্বামে জাতীয় ওষুধ এক মাস অন্তর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
পাতায় দাগ ( ফাইলোস্টিকটা অ্যাট্রোকারপিনা)
ক্ষতির লক্ষণ: ছোট, গোলাকার দাগ পাতার উপরিপৃষ্টে দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা
পরিচর্যা: আক্রান্ত পাতা গাছ থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গ্রীষ্মের সময় চাষ দিয়ে মাটির নিচের জীবাণু মারতে হবে।
রাসায়নিক: ম্যানকোজেব ৭৫% ডাব্লুপি @ ২.৫ গ্রাম/লিটার বা মেটাল্যাক্সিল ৮% + ম্যানকোজেব ৬৪% @ ২.৫ গ্রাম/লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
ম্যাগনেসিয়াম অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা:
অভাবজনিত লক্ষণ: পুরাতন পাতা হলুদ হয়ে যায়। পাতা মধ্যশিরা থেকে কিনারা বরাবর বিবর্ণ হয়ে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা: মাটিতে ডলোমাইট @ ৫ কেজি/গাছ / বছর প্রয়োগ করতে হবে।
বোরন অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা অভাব জনিত লক্ষণ ফল লালচে বেগুনী বর্ণের হয়ে ফেটে যায়। পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। ডগার ডাল দুর্বল হয়ে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা: মাটিতে বোরাক্স ২৫ গ্রাম /গাছ/বছর প্রয়োগ করতে হবে।
আয়রন অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা অভাব জনিত লক্ষণ: নতুন পাতার শিরার মধ্যবর্তী অংশ বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা সবুজ থাকে। গুরুতর ক্ষেত্রে সমগ্র পাতার হলুদ হয়ে যায়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
প্রতিকার ব্যবস্থা: মাটিতে ফেরাস সালফেট ০.৫ কেজি/গাছ/বছর প্রয়োগ করতে হবে।
ম্যাঙ্গানিজ অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা অভাবজনিত লক্ষণ: পাতা হলুদ হয়ে যায় ও শিরা সবুজ থাকে।
প্রতিকার ব্যবস্থা: ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ০.৫% পাতায় স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: মালদহের বাজার কাঁপাচ্ছে ‘থাই আপেল কুল’, লাভের অঙ্কে মুখে হাসি কৃষকদের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement