কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: স্ট্রবেরি এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেরি ফল। নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে রক্তচাপ যেমন কমে তেমনি ক্যানসারের আক্রমণ থেকে রেহাইও মেলে। ফলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মিষ্টি সুবাস ও উজ্জ্বল লাল রং। পাকলে খেতে খুব মিষ্টি লাগে। স্ট্রবেরির রস প্রধানত আইসক্রিম, দুধশিল্প, এবং চকোলেটে ব্যবহার করা হয়। ১৭৫০ সালে ফ্রান্সে প্রথম উৎপাদিত হয় স্ট্রবেরি৷ এই রসালো ফলটি এখন গোটা বিশ্বে চাষ হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উদ্যোগে বেলডাঙার খিদিপুর গ্রামে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ শুরু করা হয়েছে।
বেলডাঙা-১ নম্বর ব্লকের খিদিরপুরে এক বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছে জেলা উদ্যান পালন দপ্তর৷ মুর্শিদাবাদের মাটি ও আবহাওয়া ‘উইন্টার ইন’ এবং ‘সুইট চার্লি’ প্রজাতির স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী। এই জাতগুলির ফলনও খুব তাড়াতাড়ি হয়। জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উপ অধিকর্তা গৌতম রায় জানান, বীজ বপনের মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই জেলায় স্ট্রবেরির উৎপাদন শুরু হয়ে গিয়েছে। উৎপাদিত স্ট্রবেরি ৩০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে বেলডাঙার খিদিরপুর গ্রামের উপৎপাদিত স্ট্রবেরি খুচরো বিক্রি হতে শুরু করেছে। গৌতমবাবু জানান, দু’টি জাতের উপর প্রথম পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে ভালভাবে চাষ করতে পারলে বিঘা প্রতি দেড় টন পর্যন্ত স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। এক বিঘা জমিতে ছ’মাসে প্রায় দুই-তিন লক্ষ টাকা লাভ করতে পারবেন চাষিরা। তবে এক্ষেত্রে বাজারের একটি বড় ভূমিক রয়েছে। কাঁচা অবস্থাতেও স্ট্রবেরি খাওয়া যায়। তবে মূলত বিভিন্ন ফুড প্রসেসিংয়ে কাঁচা স্ট্রবেরি ব্যবহার করা হয়। আগামী বছর এই চাষ কৃষকদের জমিতেই যাতে করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করছে মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন দপ্তর। শুরুর দিকে তিন বা চার কাঠা জমিতে চাষ করা হবে। উদ্যান পালন দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রদর্শনীর পাশাপাশি কৃষকদের সাহায্য করার কিছু প্রকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা গৌতম রায়।
স্ট্রবেরি চাষ করে ভালই লাভ হচ্ছে বলে স্বীকার করছেন জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক। অল্প সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে লাল রঙের টুকটুকে স্ট্রবেরি যেমন ফলানো সম্ভব তেমনি বাজারেও এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। জমিতে জৈব সার দিয়ে পুনে থেকে নিয়ে আসা স্ট্রবেরির চারা পুঁতে অল্প সময়েই উৎপাদন হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা। বেলডাঙার খিদিরপুর গ্রামের কৃষক রামপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বল্প পুঁজি ব্যবহার করে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভের মুখ দেখা যে সম্ভব তা জেলা উদ্যান পাল দপ্তর হাতেকলমে দেখিয়ে দিচ্ছে। উদ্যান পালন দপ্তরের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা নিজেরাই এখন নিজ নিজ জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করছেন। এক লক্ষ টাকা খরচ করে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা লাভের মুখ দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করেন রামপ্রসাদবাবুরা। প্রোটিন জাতীয় খাবার স্ট্রবেরি আগামিদিনে মুর্শিদাবাদে আমের পরই সেরা ফলে পরিণত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.