Advertisement
Advertisement

Breaking News

বাদাম চাষ

হাতির হানা চিন্তা বাড়াচ্ছে কৃষকদের, ফসল বাঁচাতে ব্রহ্মাস্ত্র বাদাম চাষ

রামশাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অভিনব উদ্যোগে শামিল বহু কৃষক।

Some farmers decides to cultivates almond to save paddy from elephant

ফাইল ছবি।

Published by: Sayani Sen
  • Posted:November 27, 2019 7:58 pm
  • Updated:November 27, 2019 7:59 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ধান পাকতে বুনো হাতির দাপাদাপি শুরু উত্তরের জঙ্গল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায়। রাত জেগে পাহারা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। ধান না পেয়ে বুনোরা অন্য সবজি খেয়ে সাবাড় করছে। খেত থেকে শুঁড় দিয়ে তুলে নিচ্ছে আলু। কৃষকদের এমন বিপদ থেকে রক্ষার ঢাল এখন বাদাম চাষ। রামশাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে বুনো হাতিকে বোকা বানিয়ে ফসল রক্ষার অভিনব লড়াইয়ে শামিল শতাধিক কৃষক। জলপাইগুড়ির গরুমারা জঙ্গল সংলগ্ন ময়নাগুড়ি ব্লকের পানবাড়ি এলাকার জলঢাকা নদী সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা এই লড়াইয়ের ময়দান। জোট বেঁধে কৃষকরা ধান, আলু ও ভুট্টা চাষ ছেড়ে নতুন লড়াইয়ে নেমে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। বুনো হাতির দল এলেও সুবিধা করতে পারছে না। ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

পানবাড়ির বারোহাতি মোড় লাগোয়া এলাকাকে রামশাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষকরা পরীক্ষামূলক লড়াইয়ের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যদিও ছ’বছর আগে স্থানীয় কৃষকরা বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের মতো উপায় খুঁজে বের করেছিলেন। কিন্তু তখন বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকজন ধান, আলু, ভুট্টার মতো হাতির প্রিয় ফসল ছেড়ে বাদাম চাষ শুরু করেন। সাফল্য মিলতে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যোগে এখন সেটাই হয়েছে সংগঠিত ঢাল। কয়েকশো কৃষক ‘রামসাই আদর্শ ফার্মার্স ক্লাব’ তৈরি করে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। চাষের এলাকা বেড়ে হয়েছে প্রায় আড়াইশো বিঘা। ফার্মার্স ক্লাবের লক্ষ্য এক হাজার বিঘা। প্রতি বছরই জঙ্গল লাগোয়া এলাকার নতুন কৃষকদের লড়াইয়ে শামিল করানোর কাজ চলছে। রামসাই আদর্শ ফার্মার্স ক্লাবের তরফে দিলীপ মণ্ডল জানিয়েছেন, বাদাম চাষ শুরুর পর থেকে এলাকায় বুনো হাতির আনাগোনা কমেছে। এলেও আগের মতো মারমুখী না হয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পরই ফিরে চলে যায়।

কিন্তু পাঁচ বছর আগেও ছবিটা ছিল ভিন্ন। তখন এলাকাজুড়ে ছিল আলু, ভুট্টা, কুমড়ো এবং তরমুজ চাষের আয়োজন। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই গরুমারা জঙ্গল থেকে হাতির দল বের হয়ে ফসলের মাঠে হাজির। আলু, তরমুজ সাবাড় করে তবেই ফিরত। স্থানীয় চাষি ভক্ত ভৌমিক জানিয়েছেন, আলুর গুটি আসতে হাতির উপদ্রব শুরু হয়ে যেত। এখন সেই সমস্যা নেই। উলটে প্রত্যেকে লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারছেন। সাফল্য ক্রমশ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে শুরু করেছে যে, রামসাই আদর্শ ফার্মার্স ক্লাব আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বাদাম বোনা ও তোলার কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য গুজরাটের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে মেশিন কেনার তৎপরতা। এছা়ড়াও বাদাম তেল তৈরি করে নিজস্ব ‘ব্র‌্যাণ্ড নেম’-এ বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

[আরও পড়ুন: বাড়িতেই চাষ করুন কড়াইশুঁটি, পদ্ধতি জানেন তো?]

রামশাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর বিপ্লব দাস বলেন, “হাতি আলু তুলে খেতে অভ্যস্ত হলেও বাদামে সুবিধা করতে পারে না। ওই কারণে বিপদ অনেকটাই কেটেছে।” জলপাইগুড়ির কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ জানিয়েছেন, পানবাড়ির বারোহাতি এলাকায় বাদাম চাষ এখন মডেল। কৃষকরা জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি বাদাম চাষে খরচ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় চার কুইন্টাল। বিক্রি করে মিলছে পনেরো হাজার টাকা। চার মাসের ফসল। হাতির নাগালের বাইরে থাকায় এই লাভ ঘরে তুলতে মোটেও সমস্যা হচ্ছে না।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement