সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: বাউ কুল চাষেই লক্ষ্মী আসবে ঘরে। শিলিগুড়ির গ্রামাঞ্চলে আনারসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাউ কুল চাষ এখন নয়া দিশা দেখাচ্ছে। তবে এখনই ব্যাপক হারে চালু না হলেও দার্জিলিং জেলার অন্তত একশোজন কৃষক গত কয়েক বছরে বাউ কুল চাষ করে স্বনির্ভরতার মুখ দেখেছেন। তাঁদের দেখে উৎসাহী হচ্ছেন আরও অনেকেই। নতুন যাঁরা বাউ কুল চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা উদ্যান পালন দপ্তর।
দার্জিলিং জেলা উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দপ্তরের তরফ থেকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে উদ্যোগীদের। উদ্যান পালন দপ্তর প্রতি বছরই বিভিন্ন রকম প্রকল্প চালু করেছে। তার মধ্যে এই বাউ কুল অন্যতম। কেউ কুল চাষে আগ্রহী হলে দপ্তর কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সব রকম সহায়তা করা হবে। বিঘা প্রতি বছরে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় কোনও ব্যপার নয় বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দাবি।
বাউ কুল কি? ইংরেজিতে বিএইউ-কে একত্রে বলা হয় বাউ। এর মানে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি। তারাই দেশি কুলের সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে বিদেশি ফলের মিশ্র সংকর প্রজাতির এই কুলকে প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারে আনে। তাই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এই কুলের পরিচয়। যদিও বাজার চলতি শব্দে এটি আপেল কুল নামেও পরিচিত। গোটা বাংলায় এখন সাধারণ কুলের জায়গা স্থান করে নিয়েছে এই বাউ কুল বা আপেল কুল। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ থেকে বালুরঘাট, রায়গঞ্জ-সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বাউ কুলের চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া, পাহাড়ের কালিম্পং, দার্জিলিং-সহ অন্যান্য এলাকাতেও এই কুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে চাষে এই চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে, ভিন জেলা থেকে এই কুল আমদানি করতে হয়। মূলত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাতে বর্তমানে ব্যাপকহারে বাউ কুলের চাষ হচ্ছে। সেখান থেকেই তা চাহিদা আনুযায়ী নিয়ে আসা হয় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। এখন এই কুলের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এর চাষে উৎসাহী হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি, বিন্নাবাড়ি, নকশালবাড়ি, হাতিশালা, মনিরাম, ফাঁসিদেওয়ার বিধাননগর-সহ বহু এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় অল্প পরিমাণে বাউ কুল চাষ করা হচ্ছে। যাঁরা একবার চাষ করেছেন তাঁরা ফলন ও লাভের পরিমাণ দেখে চমৎকৃত। ফলে তাঁরা এখন চাইছেন নিয়মিত চাষ করে যেতে।
মূলত ফেব্রুয়ারি মার্চের মধ্যেই গাছ লাগানোর কাজ সেরে ফেলতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে গাছের ফল তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম বছর ফলন হতে পারে গড়ে ১৫ কিলোগ্রাম। পরের বছরই সেই ফল ৪০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত কুল প্রতি গাছ থেকে পাওয়া যাবে। যার পাইকারি বাজারে মূল্য প্রতি কেজি ২০ টাকা। আর খোলা বাজারে খুচরো ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি সম্ভব। আর যদি পুজোর মরশুম হয়ে তা হলে কমপক্ষে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি অসম্ভব নয়। এই কু্লের গাছ বিঘা প্রতি ১০০ থেকে ১২০টি পর্যন্ত লাগানো সম্ভব। ফলে লাভের পরিমাণ সহজেই অনুমেয়। ফল পাকার সময় পাখি বা বাদুড় থেকে বাঁচাতে জাল ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া, এই কুল চাষে আর কোনও বাড়তি খরচ নেই। খরচ বাড়লে ‘লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে যাওয়া’-র সম্ভাবনা প্রবল।
বিন্নাবাড়ি এলাকার কৃষক মোয়াজ্জেম আলি জানান, দু’বছর থেকে তিনি আপেল কুল চাষ করছেন। প্রথম বছর লাভ তেমন না হলেও গত বছরে তার পাঁচ বিঘা জমিতে এই কুলের চাষ করে আড়াই লক্ষ টাকার বেশি লাভ ঘরে তুলেছেন। তিনি আগে আনারসের চাষ করতেন। কিন্তু তাতে খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। বাউ কুলে সাধারণভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলেই ভাল ফলন তোলা যায়। খরচ কম হওয়ায় এবারও ওই কুলেই লগ্নি করবেন বলে জানান তিনি। দু’বিঘা জমিতে কুল চাষ করছেন কৃষক সোমেশ খেড়িয়া। তিনি গত বছরই প্রথম এই কুলের চাষ করেন। প্রথম বছরেই প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২০ কেজি করে কুল ঘরে তুলেছিলেন তিনি। আশাবাদী এ বছর অন্তত প্রতি গাছ থেকে ৬০ কেজি করে কুল তুলতে পারবেন। নতুন যে সমস্ত কৃষকরা বাউ কুল চাষ করতে চান তাঁদের বিনা দ্বিধায় ময়দানে নামার আশ্বাস দিচ্ছেন সোমেশবাবু ও দার্জিলিং জেলা উদ্যান পালন দপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.