গৌতম ব্রহ্ম: বৈদুর্যরহস্যের কথা মনে আছে? দুষ্প্রাপ্য বৈদুর্য মণি পেটে নিয়ে পুকুরে খেলে বেড়াত মাছ!
এবার পটভূমিকা আলাদা। মাছের সঙ্গেই বেড়ে উঠছে মুক্তো। তাও যে সে মুক্তো নয়, ডিজাইনার মুক্তো। রাধাকৃষ্ণ, কালী, গণেশ– পছন্দের আকার নিয়ে পুকুরে ফুটে উঠছে মুক্তো।
বীরভূমের (Birbhum) সাঁইথিয়ায় সফলভাবে দু’টি পুকুরে ডিজাইনার মুক্তো চাষ শুরু হয়েছে। এবার মুক্তো চাষের (Pearl Farming) পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিল নবান্ন। মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। খদ্দেরও প্রচুর। লাভও প্রচুর। ২ বিঘের পুকুরে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মুনাফা! তাই মাছচাষিদের মধ্যেও প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ঋণের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথাও হয়েছে রাজ্য সরকারের। এমনটাই জানালেন নবান্নের এক আধিকারিক।
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া মুক্তো চাষের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল। তবে একটা সমস্যা রয়েছে। গ্রামবাংলায় গোলমুক্তোর উপযোগী বড় ঝিনুক সেভাবে পাওয়া যায় না। মেলে ছোট ঝিনুক। যাতে খুব ভালভাবে ডিজাইনার মুক্তো চাষ করা সম্ভব। এমনটাই জানালেন মুক্তো বিশেষজ্ঞ মানিকচন্দ্র লোধ। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ক্যালশিয়াম ডাস্ট দিয়ে নিউক্লিয়াস বা ছাঁচ তৈরি করে তা সার্জারি করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মুক্তোর মধ্যে। এভাবে এক একটা ঝিনুকে দুটো করে মুক্তো তৈরি করা সম্ভব। এই ফর্মুলা মেনেই সাঁইথিয়ার তিনটি পুকুরে মুক্তো চাষ শুরু হয়েছে।
মানিকবাবু নিজে হাতেকলমে শেখাচ্ছেন মুক্তো চাষ। জানালেন, মেচেদার এক বাসিন্দা রাঁচি ইনস্টিটিউটে মুক্তো চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তাঁর কাছ থেকেই এই ডিজাইনার মুক্তো চাষ শেখা। ঝাড়খণ্ডের অনেক পুকুরেই এখন ডিজাইনার মুক্তো চাষ হচ্ছে। ত্রিপুরাতেও হচ্ছে। এই ব্যাপারে অবশ্য বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। আসলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বা গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চল মুক্তোচাষের পক্ষে খুবই অনুকূল। সেই হিসাবে দুই ২৪ পরগনায় সবচেয়ে ভাল মুক্তোচাষ হওয়ার কথা।
মাছের সঙ্গে মুক্তো চাষের সুবিধা কী?
আসলে মাছ আর ঝিনুকের খাবার প্রায় এক। মাছচাষের ক্ষেত্রে যেমন পুকুরে খোল দিতে হয়, চুন দিতে হয়। মুক্তো চাষের ক্ষেত্রেও তাই। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে। এমনটাই জানালেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এক, বাইরের জল ঢুকতে পারবে না এমন পুকুরেই মুক্তো চাষ বাঞ্ছনীয়। দেখতে হবে, জমি লাগোয়া পুকুরে অনেক সময় কীটনাশক ঢুকে পড়ে। দুই, পুকুরের উপর বড় বড় বনস্পতি না থাকাই ভাল। পুকুরে পাতা পড়ে জল নষ্ট হতে পারে। এমনটাই জানালেন সাঁইথিয়ায় মুক্তোচাষি জ্যোৎস্না দাস।
গ্রামবাংলার অনেক পুকুরেই ঝিনুক পাওয়া যায়। আদিবাসীরা সেই ঝিনুক সংগ্রহ করে বিক্রি করে। তাতেই সার্জারি করে ক্যালশিয়ামের নিউক্লিয়াস ঢোকানো হচ্ছে। তারপর সেই ঝিনুক নাইলনের ব্যাগে পুরে ৪ ফুট জলের নিচে ফেলে রাখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এক একটি ব্যাগে ১০টি করে ঝিনুক রাখা সম্ভব। এভাবে ২ বিঘার একটি পুকুরে ১ লক্ষ মুক্তো চাষ করা সম্ভব। সময় লাগবে ১৮ থেকে ২৪ মাস। যদি ২০ শতাংশ নষ্টও হয়ে যায় তাহলেও ৮০ হাজার মুক্তো মিলবে। মুক্তো পিছু ২০০ টাকা করে দাম পেলেই ১৬ লক্ষ টাকা রোজগার এক মরশুমে। মুক্তোপিছু খরচ আশি টাকা করে ধরলে মোট মুনাফা প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.