Advertisement
Advertisement

Breaking News

সজনে গাছের চাষ

করোনা যুদ্ধে এগিয়ে গ্রামবাংলার সজনে ডাঁটা, রাজ্যে ব্যাপক হারে শুরু চাষ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সজনে ডাঁটার ভূমিকা অনেক।

Scientific cultivation of Drumsticks starts in East Midnapur to combat COVID
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 19, 2020 7:39 pm
  • Updated:July 19, 2020 7:39 pm  

সৈকত মাইতি, তমলুক: লকডাউন এর মাঝে বেঁচে থাকার অসম লড়াই। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন এবং সেই সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার ‘মারেঙ্গা স্টিক’কেই হাতিয়ার করতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। সহজ বাংলায় এই ‘মারেঙ্গা স্টিক’ আসলে আমাদের অতিপরিচিত সজনে ডাটা। করোনা যুদ্ধে তার ফলন বাড়াতে চান জেলার কৃষকরা।

Drumsticks1

Advertisement

 

বৈজ্ঞানিক নাম মারেঙ্গা হলেও, ড্রামস্টিক কিংবা একেবারে গ্রামবাংলায় সজনে গাছ হিসেবেই পরিচিত একটি ধন্বন্তরি উদ্ভিদ। মূলত দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে এই গাছটি প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়ে থাকে বৈজ্ঞানিকভাবে। খাদ্যগুণ অপরিসীম হওয়ায় দিনদিন বাড়ছে এর কদর। এই গাছের ছাল থেকে আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরি হয়ে থাকে। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত ভঙ্গুর এই গাছের পাতা ও ডাঁটায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। যা মানবদেহের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম ভিটামিনের ভাণ্ডার হওয়ায় মানবদেহের শারীরিক গঠনে অত্যন্ত সহায়ক। শুধু তাই নয়, প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যানসার প্রতিরোধ করে। একেবারে ধন্বন্তরীর মতই এই গাছের পাতা সেবন উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। ভালো রাখে লিভারও। আন্তর্জাতিক বাজারে এই গাছটির অমূল্য ডাঁটা ও গুঁড়ো পাতা কেজি প্রতি প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় দেদার বিক্রি হয়।

[আরও পড়ুন: বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, চাষের জন্য এখনই কৃষিজমিতে সেচের জল ছাড়ছে না DVC]

গ্রাম বাংলার এমন উপকারী উদ্ভিদ, কিন্তু দেশীয় বাজারে এর তেমন কোনও গুরুত্বই ছিল না এতদিন। চিকিৎসকরা অবশ্য বারবার এই গাছের পাতা ও ফলের সেবনের উপর জোর দিয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। এমন পরিস্থিতিতে এবার পড়ে থাকা কিংবা ফেলে দেওয়া, ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা এই গাছটির পাতা ও ডাঁটা সংগ্রহ করে তার বিশ্বায়নের উপর জোর দেয় জেলা প্রশাসন। মূলত সিএডিসি’র তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যেই এই গাছের জেলা জুড়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষ শুরু হয়েছে। সিএডিসি’র তত্ত্বাবধানে গত বছরই প্রায় দু’লক্ষ সজনে চারা নার্সারিতে প্রতিপালন শুরু করে জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রচুর পরিমাণ এ ফলন শুরু হয়েছে। আর তা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে চলতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ সজনের চারা প্রতিপালন শুরু হয়েছে খেজুরির ইরিঞ্চি এবং তমলুকের নিমতৌড়ি সেন্ট্রাল নার্সারিতে। বেঙ্গালুরু থেকে এই উন্নত মানের সজনে বীজ নিয়ে আসা হয়।

[আরও পড়ুন: ​শিলিগুড়িতে শুরু আনারস রপ্তানি, ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন উৎপাদকরা]

তবে আচমকাই করোনা আবহে দীর্ঘ লকডাউনের জেরে ভেঙে পড়ে প্রায় গ্রামীণ অর্থনীতি। ফলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন গ্রামের মহিলারা। এই মহিলাদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ এবং সেই সঙ্গে করোনা আতঙ্ক উড়িয়ে নতুন করে আলোর দিশা দেখাতে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে সিএডিসি’র তত্ত্বাবধানে এই সজনে ডাঁটা ও পাতা শুকিয়ে ড্রামস্টিক পাউডার মরিঙ্গা, লিভ পাউডার সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তমলুকের রনসিনহাতে সিএডিসি’র দপ্তরে সোলার হাইড্রেটর মেশিনের সাহায্যে ফেলে দেওয়া এই সজনে পাতা ও বাড়তি ডাঁটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেই শুরু হয়েছে শুকিয়ে গুড়ো করে ডাস্ট পাউডার তৈরির প্রক্রিয়া।

Drumstick-powder

সিএডিসি’র তমলুক প্রকল্প আধিকারিক উত্তম কুমার সাহা বলেন, ”প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অভিনব এই প্রকল্পে জেলার প্রায় দু’শোটি পরিবারকে স্বনির্ভর করে তোলার স্বপ্ন রয়েছে। MGNREGS প্রকল্পে ১০ কেজি ডাঁটা ও পাতা শুকিয়ে প্রায় এক কেজি ওজনের পাউডার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে যেমন একদিকে কর্মদিবস বৃদ্ধি ঘটেছে, তেমনি করোনা আবহে বাজারে বিপুল পরিমাণ চাহিদাও পূরণ সম্ভব হবে।” 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement