দেবব্রত দাস, খাতড়া: দুর্গোৎসবের রেশ কাটিয়ে রাজ্যের অধিকাংশ ঘরে ঘরে এখন গৃহলক্ষ্মী বা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্ততি। এই সময়ে তাই ফুলের চাহিদাও অনেক বেশি থাকে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারগুলিতে। কিন্তু এবার সেই চাহিদা মেটাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তীব্র সংশয়ে চাষিরা। নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ এলাকায় ফুলের চাষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ফুলচাষিদের। ফলে এই পুজোর জন্য বাজারে ফুলের যোগান কম হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
দুর্গাপুজোর আগে থেকেই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জেরবার সাধারণ মানুষ। ভারী বৃষ্টির জেরে বাগানে ঝরে গিয়েছে নানা ধরনের ফুল। আর এই ফুল চাষই যাঁদের জীবিকা, তাঁরা পড়েছেন চরম ক্ষতির মুখে। শাস্ত্রমতে, যে কোনও পুজোতেই ফুল অন্যতম প্রধান উপকরণ। আর তা প্রচুর পরিমাণে দরকার হয়। কিন্তু এবার নিম্নচাপের বৃষ্টির জেরে বহু এলাকায় ফুলের বাগানে জল জমে গিয়েছে। অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে ঝরে পড়েছে ফুটন্ত ফুল বা ফোটার মুখে থাকা কুঁড়ি। দুর্গাপুজোর আগে তাই আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফুলচাষিরা। যেটুকু ফুল ছিল, তা দুর্গাপুজোয় তুলে ফেলার পর অবশিষ্ট ফুল প্রায় নেই বললেই চলে।
তার উপর গত দু’দিনের বৃষ্টিতে ফুলগাছগুলি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের প্রকাশঘাট, সোনামুখীর রাধামোহনপুর, পাত্রসায়ের ব্লকের নারায়ণপুর, হামিরপুর, বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক হারে গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেল ফুলের চাষ হয়। অষ্টমীর পর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আর সেই বৃষ্টিতে ফুলচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় ফুলচাষিরা জানান, অতি বৃষ্টিতে গাছের ফুল গাছেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই নষ্ট হওয়া ফুল মাটিতে ঝরে পড়েছে। যেসব গাছে নতুন কুঁড়ি ফুটছিল, সেগুলিতেও জল পড়ে মাঝপথেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকশো বিঘে জমির ফুল বৃষ্টির জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর পঞ্চায়েতের রামচন্দ্রপুর, বিষ্ণুপুর ব্লকের প্রকাশঘাট, হিংজুড়ি গ্রামে বেশ কয়েকজন ফুলচাষি তাঁদের জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। লক্ষ্মীপুজোর সময় এই গাঁদা ফুলের মালা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অনেকের জমিতে জল জমে গিয়েছে। জমিতে গাঁদা ফুল নষ্ট হয়ে ঝরে পড়েছে। লক্ষ্মীপুজোর আগে এইভাবে বৃষ্টির জন্য ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ফুল চাষিদের। স্থানীয় ফুলচাষি দুলাল পাল, তরুণ বৈদ্যদের কথায়, “ফুল চাষই আমাদের জীবিকা। এখান থেকেই আমাদের কিছু আয় হয়। পুজোর সময় গাঁদা ফুলের মালার চাহিদা ব্যাপক থাকে। ফুল ও ফুলের মালা বিক্রি করে মোটা টাকা রোজগার হয়। এবারও বাগান ভরে ফুল ফুটেছিল। আশা করেছিলাম, সেই ফুল বিক্রি করে পুজোর সময় আনন্দে কাটাব। কিছু অর্থ উপার্জন হবে। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সব আশা লন্ডভন্ড হয়ে গেল। প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ফুল গাছ থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। লক্ষ্মীপুজোয় আর ফুল বিক্রি করতে পারব কি না সন্দেহ আছে।”
বিষ্ণুপুরের প্রকাশঘাট গ্রামের বাসিন্দা ফুল চাষি অবনী মণ্ডল বলেন, “ফুলচাষ করে দু’টো পয়সার মুখ দেখছি। পুজোর সময় ভেবেছিলাম ফুল বিক্রি করে কিছু টাকা পাব। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টি আমাদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। জমিতেই অধিকাংশ গাছের ফুল নষ্ট হয়ে পড়ে গিয়েছে।” বাঁকুড়া জেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ভারী বৃষ্টির জেরে সবজির পাশাপাশি অনেক ফুল গাছ নষ্ট হয়েছে। বহু গাছের ফুল ঝরে পড়ে নষ্ট হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.