সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ধানের জমিতে মাছেরও চাষ! উত্তর চব্বিশ পরগনা ও মালদহের প্রকল্পকে এবার পরীক্ষামূলকভাবে পুরুলিয়ায় (Purulia) শুরু করল কৃষিদপ্তর। নিতুড়িয়া ব্লকের দীঘা গ্রাম পঞ্চায়েতের লালপুর গ্রামে এক কৃষকের জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আমন ধানের সঙ্গে এই মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। নিতুড়িয়া ব্লক কৃষিদপ্তর ওই কৃষককে উৎসাহ দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। তবে ধানের জমিতে এই মাছ চাষে ওই কৃষককে সবরকমভাবে সাহায্য করছে নিতুড়িয়া ব্লক কৃষিদপ্তর।
তাদের কথায়, এই বিষয়টি একেবারেই অবিশ্বাস্য নয়। উত্তর চব্বিশ পরগনা ও মালদহের মতো জেলা এই কাজ করে সফল হয়েছে। একসঙ্গে ধান ও মাছ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছে। এবার সেই কাজই রুখাশুখা পুরুলিয়ায় প্রয়োগ করে এই এলাকায় কৃষকদের আয়ের দিশা দেখাতে চাইছে কৃষি দপ্তর। আত্মা প্রকল্পে এই কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রায় হাজার দুয়েক টাকায় রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের চারা কিনে স্বপন বাউরি নামে ওই কৃষককে দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে হচ্ছে এই চাষ? এক বিঘা ধানের জমির এক পাশে দশ ফুট চওড়া ও ছ’ফুট গর্ত করে কাটা হয়েছে হাপা। সেই হাপা বৃষ্টির জলে এখন ভরতির হয়ে গিয়েছে। সেখানেই ছাড়া হয়েছে মাছের চারা। কিন্তু মাছ চারপাশে ঘুরে বেরনোর জন্য তো জায়গা দরকার। ওই দশ ফুট চওড়া হাপা তো পর্যাপ্ত নয়।
নিতুড়িয়া ব্লক সহকারী কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মণ বলেন, “মাছের চারাগুলি দিনের বেলায় গরমে চলে যাবে ওই হাপাতে। তারপর বিকাল থেকে রোদ কমলেই মাছের চারা গুলো সমগ্র জমিতে ঘোরাফেরা করবে। মাছ সাধারণত ফাইটো ও জু প্ল্যাঙ্কটন খায়। ধানের জমিতে তা গাছের গোড়ায় থাকে। এই খাবারে মাছের যেমন খাদ্যের চাহিদা মিটছে। তেমনই ধান গাছের গোড়ায় থাকা একেবারে ছোট পোকা মাছ খেয়ে ফেলায় ধানে কোন সমস্যা হবে না।” সাধারণভাবে মাছ চাষে গভীর জলের প্রয়োজন হয়। ধানের জমিতে তা না থাকাতেই ওই হাপা কাটা হয়। অর্থাৎ রুখাশুখা এই জেলায় জলের সমস্যায় সেভাবে মাছ চাষ করা যায় না। কিন্তু ধানের জমিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে আশাবাদী কৃষি দপ্তর। তবে এই চাষে ধানের জমিতে সাধারণ কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। তাতে মাছের ক্ষতি হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ চাপান সারের জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক দিতে হবে।
ওই কৃষক স্বপন বাউরি বলেন, “ধানের জমিতে মাছ চাষ শুনে প্রথমে হতবাক হয়ে যাই। কিছুই বুঝতে পারিনি কৃষি দপ্তর ঠিক কি চাইছে। এখন মনে হচ্ছে এই পদ্ধতিতে ধানের সঙ্গে মাছ চাষ সম্ভব।” কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, পাঁচ-ছ’ইঞ্চি আকৃতির মাছ আমন ধান কাটার সময় দু-তিন মাস পর চারাপোনা হিসাবে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন কৃষকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.