টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: আলুর পর এবার বাঁকুড়ায় বোরো ধানের চাষও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শীতের শুরুতে ডিসেম্বরে ধানের চারা অন্তত তিন-চার ইঞ্চি লম্বা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এই জেলার চাষিরা এখনও ধানের বীজতলাই তৈরি করে উঠতে পারেননি। কেউ কেউ অবশ্য বীজতলা তৈরি করে ধানের বীজ ছড়িয়েছেন। তবে তা খুবই সামান্য। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা দেবরাজ সরকার বলছেন, ‘‘এবার রাসায়নিক সার পর্যাপ্ত পরিমাণ বজায় রয়েছে। তবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ঠান্ডা আচমকাই বেড়ে গিয়েছে। এবং কুয়াশার দাপটে ধানের চারা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে ঠান্ডা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে বাঁকুড়ায়। পাশাপাশি বাড়ছে কুয়াশার দাপটও। শীত ও কুয়াশার জোড়া ফলায় ধানের চারার বৃদ্ধি ব্যাহত ও পাতার রঙ হলুদ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। চাষিদের বক্তব্য, এবার আলু চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় আমন ধানই অনেকে এখনও ঘরে তুলতে পারেননি। আমন ধান খামারে তুলেই চাষিরা বীজতলা তৈরিতে হাত লাগান। আলু চাষে দেরি, এরপর পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে দেরির কারণেই বোরো চাষও পিছিয়ে যাচ্ছে।
বাঁকুড়া জেলায় ব্যাপক হারে বোরো ধানের চাষ হয়। বোরোর জমিতে ডিপ টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবলের মাধ্যমেই জল সেচ হয়। জেলায় বহু বিল রয়েছে, যেগুলি বর্ষায় ডুবে থাকায় যেখানে আমন চাষ হয় না। সেসব বিল এলাকায় বোরো চাষ হয়। সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ বা অগ্রহায়ণের প্রথম থেকেই চাষিরা বীজতলা তৈরি করে বোরো ধানের বীজ ছড়াতে শুরু করে দেন। এবার অগ্রহায়ণ মাস শেষ হতে চললেও অনেকেই বীজতলায় হাত লাগাতে পারেননি।
চাষিদের দাবি, এবার বোরো চাষ প্রায় ১৫-২০ দিন পিছিয়ে গিয়েছে। বীজ তৈরির সঠিক সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় বীজের বৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন। ওন্দার চাষি মুকুল রায় বললেন, দুদিন থেকে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশায় দাপটে দৃশ্যমানতাও কমেছে। অত্যধিক শীত আর কুয়াশার কারণে ধানের চারার বৃদ্ধি হবে না। পাতাও হলুদ হয়ে যাবে। রাসায়নিক-সহ চূড়ান্ত পরিচর্যার প্রয়োজন পড়বে। গঙ্গাজলঘাটির বোরো চাষি চরণ দাম বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে সেভাবে চাষের ক্ষতি না হলেও ডানা এবার সব চাষই প্রায় পিছিয়ে দিয়ে গিয়েছে। বোরো চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় ফসল উঠতেও দেরি হবে। ফলে কালবৈশাখীর ধকলও চাষিদের সামলাতে হবে। পাশাপাশি বোরো চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় পরবর্তী চাষেও তার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে বাঁকুড়ার কৃষি বিভাগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.