শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: দুয়ারে কড়া নাড়ছে বর্ষা। জুনের প্রথম সপ্তাহেই বঙ্গে ঢুকছে বর্ষা। তার আগেই রেমালের ধাক্কায় বেসামাল তিস্তা পাড়ের কৃষি বলয়। বুধবার সিকিম পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতির তিস্তায়। লালটং বস্তি, টোট গাঁও সহ ভেসে যায় একাধিক এলাকা। ক্রান্তি ব্লকের দক্ষিন চ্যাংমারি, পশ্চিম প্রেমগঞ্জ, পশ্চিম মোয়ামারি গ্রামেও জল ঢুকে পড়ে।
মূলত কৃষিপ্রধান এই এলাকায় চাষের ক্ষেতে নদীর জল ঢুকে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিঘার পর বিঘা বাদাম চাষের জমি। তাতে মাথায় হাত পড়েছে ৭৭ জন কৃষকের। জলপাইগুড়ি কৃষি বিভাগের উপ কৃষি অধিকর্তা গোপাল চন্দ্র সাহা জানান, তিস্তার জলে ক্রান্তি এলাকায় ৫৫ হেক্টর বাদাম চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬১ লক্ষ টাকা। এই বছর জলপাইগুড়ি জেলায় ৬ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
বর্ষা নামার আগেই রেমালের ধাক্কায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এখন আর কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ কৃষিদপ্তর। উপকৃষি অধিকর্তা গোপাল চন্দ্র সাহা জানান, বাদাম এখন জমি থেকে তুলে নেওয়ার উপযুক্ত হয়ে গিয়েছে। এই সময় বাদাম তুলে নিলে কোনও সমস্যা হবে না। বর্ষাও এগিয়ে আসছে। সেই কারণে নদীর চর সংলগ্ন এলাকার বাদাম চাষিদের জমি থেকে বাদাম তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্লক কৃষি আধিকারিকরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, সমতলের পাশাপাশি সিকিম পাহাড়ে বৃষ্টি কমায় বৃহস্পতিবার তিস্তা নদী পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তাতে উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমেছে বাসিন্দাদের। তিস্তা থেকে উদ্ধার হয়েছে বিরল প্রজাতির একটি এশিয়ান ওয়াটার মনিটর। যা গো সাপ নামে পরিচিত। লুপ্ত প্রজাতির এই প্রাণীটি তিস্তার জলে ভেসে এসে টাকিমারি এলাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরিবেশ কর্মীরা উদ্ধারের পর প্রাণীটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিস্তার এই আকষ্মিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য রেমালকেই দায়ী করেছে সেচদপ্তর।
তবে সিকিম পাহাড় থেকে নেমে আসা জলে গত বছর ৪ অক্টোবরের মতো তিস্তা উথাল পাথাল হয়ে উঠলেও এবার আর বাধের সেই অর্থে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি বলে দাবি সেচ দফতরের। চেংমারির প্রেম গঞ্জ, বাকালি, বীরেন বস্তি এলাকায়। বাঁধে গিয়ে ধাক্কা মারলেও খুব একটা ক্ষতি হয়নি বলে দাবি সেচ কর্তাদের। সেচদপ্তরের উত্তর পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক জানান, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। শনিবার থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কন্ট্রোলরুম চালু হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। জলপাইগুড়ির কন্ট্রোল রুম থেকে জলপাইগুড়ির পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, শিলিগুড়ির সমস্ত নদী ও আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নজরদারি চলবে বলে জানান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.