কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য থেকে বাংলাদেশে বাস এবং ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহণ দপ্তর। বাংলাদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কার্যত ট্রাক চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে সমস্যায় পড়েছেন মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকের পিঁয়াজ চাষিরা। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পিঁয়াজ পড়ে রয়েছে চাষিদের ঘরে। বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য পিঁয়াজের গোড়া পচে যাচ্ছে জমিতে। পিঁয়াজের সঠিক দাম না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিঁয়াজ উৎপন্ন হয় মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকে। মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৬ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপন্ন হয়। জেলার মধ্যে নওদা ব্লকেই প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ হয়। চলতি বছরে পিঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা উঠেছিল বলে লাভের আশায় তড়িঘড়ি পিঁয়াজ পুঁতেছিলেন চাষিরা। সেই পিঁয়াজ উৎপন্ন হওয়ার পর ভালই দাম পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু লাভের আশায় বাদ সাধল করোনা। COVID-19 ভাইরাসের আতঙ্কে নওদা থেকে উৎপাদিত পিঁয়াজ ভিন দেশে ও রাজ্যে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গত শনিবার থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ‘অসুর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পিঁয়াজ চাষিদের কাছে। নওদার পাটিকাবাড়ি, মহম্মদপুর, দুধসর, আমতলা-সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে উৎপাদিত পিঁয়াজ পড়ে রয়েছে চাষিদের ঘরে।
নওদার কৃষক সিরাজ শেখ বলেন, বৃষ্টির জন্য পিঁয়াজের রং খারাপ হয়ে গিয়েছে। মাঠে পিঁয়াজ তুলতে গিয়ে ঘুরে গিয়েছেন শ্রমিকরা। সৈরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টির কারণে পিঁয়াজের গোড়া পচে যাচ্ছে। বৃষ্টি ক’দিন থাকবে বোঝা যাচ্ছে না।” দশ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে পিঁয়াজ চাষ করেছিলেন তিনি। পিঁয়াজ উৎপন্ন করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, “করোনা আতঙ্কে গাড়ি আসছে না বলে পিঁয়াজ বিক্রি করা যাচ্ছে না। চাষের টাকা তুলব কী করে, কিছুই বুঝতে পারছি না।” ইলিয়াস শেখ বলেন, “১০ টাকা কেজি দরেও পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। জমির ফসল ট্রাক্টরেই বোঝাই রয়েছে। বৃষ্টির জলে পচে যাচ্ছে পিঁয়াজ।”
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ তো বটেই, এমনকী অসম, উত্তর প্রদেশেও নওদার পিঁয়াজ যাচ্ছে না। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে কোনও ট্রাক ওই রাজ্যগুলিতে যাচ্ছে না বলে নওদার পেঁয়াজ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের ফসল বিমা যোজনায় ক্ষতিপূরণের কথা ভাবা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.