বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বরুণদেবের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এবারও পুজোয় (Durga Puja) উত্তরের বাজারে আসছে ‘ডন’। তবে সেলুলয়েডের খলনায়ক নয়। এই ‘ডন’ কৃষিদপ্তরের বিশেষ তত্ত্বাবধানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় পলি হাউসে উৎপাদিত বিশেষ প্রজাতির সুস্বাদু ফুলকপি। এছাড়াও মিলবে ‘মুনসুন কুইন’, ‘হোয়াইট মার্বেল’, ‘সামারকিং’ প্রজাতির ভিন্নজাতের ফুলকপি, অর্গানিক ছোট আলু, সতেজ টম্যাটো, শসা, বিনস, শালগম, মুলো, ব্রকোলি। এসবই প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে শারদ উৎসবে ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে কৃষিদপ্তরের চ্যালেঞ্জিং কর্মযজ্ঞের সুফল। পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জেলার প্রায় ২০ একর জমিতে চলছে ফসল উৎপাদনের কাজ।
পুজো মানেই ভো-কাট্টা মন। দেদার আড্ডা। খুনসুটি। বাড়ির হেঁশেল বন্ধ রেখে বাইরে পাত পেড়ে ভূরিভোজ। মেনুতে চাই পালং পনির, বেগুনি, নতুন আলু-ফুলকপি ডালনা, বাধাকপির মতো রকমারি নিরামিষ পঞ্চব্যঞ্জন। তবে এবার অতিবর্ষণ ও অনাবৃষ্টির সাড়াশি হানায় সবজি চাষের মাঠ ফাকা হয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে বয়ে আনা সবজিতে চলছে বাড়ির হেঁশেল। তাই সংশয় বাড়ছিল পুজোয় নতুন সবজি মিলবে তো! সেই সংশয় কাটাতে কৃষিদপ্তরের কর্তারা একরকম যুদ্ধে নামেন। সেটাও সুকৌশলে আবহাওয়ার সঙ্গে। অক্টোবরেও বৃষ্টি থাকবে ধরে নিয়ে তারা ছক সাজিয়ে নেন।
জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি মহকুমা কৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ জানান, এবার আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে উত্তরে আগাম সবজি চাষে বিপদ বেড়েছে। সবশেষে বড় ধাক্কা শনিবার থেকে শুরু বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ। মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে ফের জলে তলিয়ে যাবে চাষের মাঠ। তাই চিরাচরিত পদ্ধতিতে আগাম সবজি উৎপাদনের এবার নেই। ওই কারণে গ্রামীণ এলাকায় উদ্বেগ বেড়েছে। সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজো থেকে নতুন সবজি বাজারে তুলে চাষিরা বাড়তি রোজগারের পথ খুঁজে নেয়। পরবর্তী চাষের অর্থসংস্থানও হয়ে যায়। কিন্তু এবার শুরুতে অতিবর্ষণ, পরে একটানা দাবদাহ, পুজোর মাসের শুরুতে ফের ভারি বর্ষণের জন্য আগাম সবজি উৎপাদন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। চাষিদের বেশিরভাগ পারছে না। ওই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা ও শিলিগুড়ি মহকুমায় ৬০ বিঘা জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি চাষের কাজ চলছে।
জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় শীতকালীন সবজি চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার বিঘা। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন ফুলকপি, বাধাকপি, বেগুন, মুলো, শালগম, শসা, লঙ্কা, টম্যাটো, আলুর চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু এবার কিছুই নেই। বেগতিক পরিস্থিতি দেখে কৃষিদপ্তরের কর্তারা পুজোর মরশুমে বাজারে সবজির জোগান ঠিক রাখতে আগস্ট মাসে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, নাগরাকাটা, ফাসিদেওয়া, মেটেলি এলাকায় কম খরচে পলি হাউস তৈরি করে চাষিদের দিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার চাপ সইতে পারে এমন প্রজাতি বাছাই করে বীজ সরবরাহ করা হয়। সেই বীজ থেকে তৈরি চারা বড় হয়ে এখন বাজারে পৌঁছনোর দিন গুনছে। জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি মহকুমা কৃষি অধিকর্তা বলেন, “খুব ভাল ফলন হয়েছে। মহালয়া থেকে ডন, মুনসুন কুইন, হোয়াইট মার্বেল, সামারকিং প্রজাতির ফুলকপি, বাধাকপি সহ বিভিন্ন সবজি বাজারে পৌঁছে যেতে শুরু করবে। সবই রাসায়নিক মূক্ত, জৈব সারে তৈরি। তাই স্বাদে অতুলনীয় হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.