রাজা দাস, বালুরঘাট: একইসঙ্গে চলছে মধু সংগ্রহ এবং সরিষা চাষ৷ এই উপায়ে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের কৃষক এবং মধুপালকরাও। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে এখানে এসে মৌমাছি প্রতিপালন করছেন ভিন রাজ্যের মধুপালনকারীরা৷ এই পদ্ধতিতে আর্থিক আয় আরও কীভাবে বাড়ানো সম্ভব, সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর।
অগ্রহায়ণে ধান কাটার পরেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করেন কৃষকরা। গাছে ফুল আসতেই উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলার মৌমাছি পালকেরা আসেন দক্ষিণ দিনাজপুরে৷ কুশমণ্ডি, হরিরামপুর, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, তপন, হিলি এবং বালুরঘাট-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভিড় জমান মধু পালকেরা৷ তাঁরাই তাঁবু খাটিয়ে দু’মাস মধু সংগ্রহ করেন। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ক্ষেতের পাশে বাক্স রাখেন তাঁরা। এই বাক্সেই থাকে তাঁদের পালনকারী একটি স্ত্রী, পুরুষ এবং অসংখ্য শ্রমিক মৌমাছি। সকালে খুলে দেওয়া সেই বাক্স৷ আর সঙ্গে সঙ্গেই মৌমাছি ছড়িয়ে পড়ে সরিষার জমিতে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবারও বাক্সে ফেরে। বাক্সের মধ্যে চাক বানিয়ে সেখানে মধু সঞ্চয় করে মৌমাছিরা। সেই মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে মৌমাছি পালকরা। তেমনই আবার সরিষা ফুলে ক্রমাগত পরাগ মিলনের ফলে বাড়ছে সরিষার ফলনও৷ স্বাভাবিকভাবেই উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরাও৷ এভাবেই ভিন জেলা থেকে আসা মধুপালক এবং সরিষা চাষিরা একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন।
সরিষা চাষি বিমান বর্মন বলেন, ‘‘গত কয়েকবছর ধরে শীত পড়তে এই জেলায় আসছেন উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মৌমাছি পালকেরা। প্রথমে আমরা ভাবতাম মধুপালকদের জন্য আমাদের চাষে ক্ষতি হবে৷ পরবর্তীকালে বুঝতে পারি মধু চাষের মাধ্যমে সরিষা উৎপাদন বাড়ছে৷ এবিষয়ে কৃষি দপ্তরে খোঁজখবর নিয়েছিলাম৷ তাই বর্তমানে আর আমাদের মধুপালকদের কাজে কোনও আপত্তি নেই।’’ পালটা এ বিষয়ে মধু সংগ্রহকারী বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাক্স ভরতি মৌমাছি নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন ঋতুর ফুলের মধু সংগ্রহ করে অর্থ উপার্জন করি৷ কখনও বারুইপুরে লিচু ফুলের মধু তো কখনও সুন্দরবনের কেওড়া, গেও, গড়ান ফুলের মধু সংগ্রহ করি৷ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাঁকুড়ায় ইউক্যালিপটাস ফুলের মধু সংগ্রহ করি৷ বর্তমানে বাঁকুড়া জেলাতে ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে দিয়েছে৷ তাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় সরষে ফুলের মধু সংগ্রহ করছি৷’’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা জ্যোতিন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘মৌমাছিকে ফুলের বন্ধু বলা হয়। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করলে বাড়ে উৎপাদন। সরিষার জমিতে মৌমাছি পালন করলে একসঙ্গে লাভবান হন কৃষক এবং মধুপালক দু’জনেই৷ উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক৷’’ তাই জেলা কৃষি দপ্তরের তরফে কৃষক ও মধুপালক দু’পক্ষকেই এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.