দেবব্রত বিশ্বাস, খাতড়া: বৃষ্টির অভাবে আমন ও আউশ ধানের চাষ মার খেয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের জল সরবরাহ করতে পারেনি কংসাবতী সেচ দপ্তর। ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এবার বোরো মরশুমেও কংসাবতী সেচ দপ্তর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে সেচের জল দিতে পারবে না। তবে রবি মরশুমে অন্যান্য ফসল চাষের জন্য পর্যায়ক্রমে জল সরবরাহ করবে কংসাবতী সেচ দপ্তর। এ ব্যাপারে কংসাবতী সেচ দপ্তরের তরফে নোটিস জারি করা হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, “পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে এ বছর বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর জলাধার ভরে ওঠেনি। যা জল থাকার কথা তার চেয়ে কম জল রয়েছে। এবার তাই বোরো চাষের জন্য মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে সেচের জল ছাড়া সম্ভব হবে না। পানীয় জল সরবরাহের জন্য জল মজুত রেখে বাকি জল রবিচাষের জন্য ছাড়া হবে।”
বোরো চাষের জন্য কংসাবতী সেচ দপ্তর জল ছাড়বে না শুনেই কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এ বছর চাষের মরশুমে সময় মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকের আমন ও আউশ ধানের চাষ মার খেয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত মুকুটমণিপুর জলাধার পুরোপুরি ভরেনি। পরে অবশ্য বিক্ষিপ্তভাবে পুজোর আগে ও পরে বৃষ্টিপাতের জন্য মুকুটমণিপুর জলাধারে জলের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। তবে বর্তমানে যে পরিমাণে জল মজুত রয়েছে তা বোরো চাষের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলেই কংসাবতী সেচ কর্তৃপক্ষের দাবি। এই অবস্থায় বোরো চাষের জন্য জল না মিললে দক্ষিণ বাঁকুড়ার পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে এই জলাধারের সেচের জলের উপরে নির্ভরশীল চাষিরা এখন চিন্তায়।
কংসাবতী সেচ দপ্তর সূত্রের খবর, মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে খারিফ ও বোরো মরশুমে জল ছাড়া হয়। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলি জেলার ৫ লক্ষ ৭০ হাজার একর জমিতে সেচের জল পৌঁছয়। বর্তমানে এই জলাধারে জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪৪২ ফুট। কংসাবতী সেচ দপ্তরের খাতড়া ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গৌরব ভৌমিক বলেন, “এদিন সকাল পর্যন্ত মুকুটমণিপুর জলাধারে জলস্তর ছিল ৪৩১ ফুট। রবি মরশুমে তিল, ডাল, সরষে, মসুর, ছোলা সহ বিভিন্ন শস্য চাষের জন্য পর্যায়ক্রমে জল ছাড়া হবে। তবে বোরো চাষের জন্য এবছরও জল দেওয়া সম্ভব হবে না। বোরো চাষে জল যে ছাড়া হবে না তা আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, রবিচাষের জন্য জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে নির্দিষ্ট তারিখে জল ছাড়া হবে। প্রথম পর্যায়ের ৬ থেকে ১৪ জানুয়ারি জল ছাড়া হবে।
মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কংসাবতীর প্রধান দুই সেচখালে জল ছাড়া হয়। বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমার রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, খাতড়া-সহ সাতটি ব্লকের শতাধিক মৌজার চাষিরা সেচের জল পান। এবার বোরো চাষের জন্য জল না দেওয়ার খবরে তাই রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন কৃষকরা। রানিবাঁধের বাসিন্দা সুনীল হেমব্রম, ঝোলা গ্রামের গৌতম গুলির মতো চাষিদের ক্ষোভ, “বৃষ্টির জন্য আমন ও আউশ ধান চাষ মার খেয়েছে। ভেবেছিলাম বোরো চাষ করে খরচ কিছুটা উঠবে। এখন কংসাবতী জলাধার থেকে জল না পেলে আমাদের বোরো চাষ করা মুশকিল হয়ে গেল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.