বাবুল হক, মালদহ: এ যেন উলটো পুরাণ! গাছে আম নেই, তবু চাষিদের মুখে চওড়া হাসি। খোশমেজাজেই আমবাগানে ঘুরছেন আমের জেলার আমচাষিরা। ইংলিশবাজার শহর থেকে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে সাহাপুর। তার পর কাদিরপুর। একের পর এক আমবাগান। কিন্তু আম কই?
ডিসকো মোড়ের পাশের একটি আমবাগানে দাঁড়িয়ে রমেন মণ্ডল বলেন, “আম নয়, গাছে এবার সোনা ফলেছে। ছিটেফোঁটা যেটুকু আম দেখছেন, সেটা বিক্রি করেই একসঙ্গে তিন বছরের কামাই (উপার্জন) হয়ে যাবে। তিনগুণ দর পাচ্ছি। বেশি ফলন হলে চাহিদা থাকত না।” মালদহের আম বিশ্বজোড়া নাম। কিন্তু বাগানেই এবার আমের পাইকারি দর কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর বাজারে একটু ‘টু’ মারলেই পুড়ছে হাত। শহরের বিচিত্রা মার্কেট থেকে মকদমপুর বাজার। গ্রামীণ এলাকায় সুজাপুর, মিলকি, চাঁচোল, সামসি বাজার। সর্বত্রই চড়া দাম। যেন আম আর আপেল একদর। এবার ফলন খুব কম হয়েছে বলে আমের জেলার আমবাজারেই আম বিকোচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে! লক্ষণভোগ ১০০, ল্যাংড়া-হিমসাগর ১২০ টাকা কেজি। এতেই মুখে হাসি ফুটেছে আমচাষিদের। চলতি সপ্তাহেই শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম ভাঙার পর্ব। আর শুরুতেই এত চড়া দাম। চাষিদের দাবি, এই দর কমবে না। আরও বাড়বে। গাছের আম যত কমবে, ততই দর বাড়বে।
মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “জামাইষষ্ঠীতে আরও কদর বাড়বে মালদহের আমের। কলকাতার বাজারে অন্তত ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিকোবে মালদহের আম। আপেলের চেয়েও বেশি দাম দিয়ে আম কিনতে হবে।” এই মরশুমে কার্যত ইতিহাস গড়তে চলেছে আমের জেলার আম। মুঘল সম্রাট বাবরের ‘শের-ই-হিন্দুস্তান’ বলে কথা। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণেও বৈচিত্র। যেন আপেল, আঙুর, বেদানা, নাসপাতির ককটেল। রসনাতৃপ্ত বাঙালিরও প্রিয় ফল এই আম। ফলের রাজাও বটে। বাজারদর ১০০ ছুঁয়ে ২০২৪-এ এবার রেকর্ড গড়তে চলেছে মালদহের লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর। ইতিহাস নগরীতে ফলের রাজার খ্যাতি আবাহমানকাল ধরেই।
প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ে সুলতানি আমলের ইমারতগুলির চারপাশে শুধুই আমবাগান। সেখানে দাঁড়িয়ে জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, “আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচন্ড ঠান্ডায় গাছে মুকুল আসেনি। যখন মুকুল এল, তখন বৃষ্টি। মুকুল ঝরে গেল। মুকুলের পরিবর্তে পাতা গজিয়ে গেল। তার উপর রাজ্যজুড়ে দাবদাহের দাপট চলেছে। গুটি গুটি আম শুকিয়ে ঝরে পড়ে যায়। ফলন তলানিতে ঠেকে যায়।” মালদহের আম্র উন্নয়ন আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, “জেলার প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। প্রত্যেক বছর জেলায় সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এবার উৎপাদন হবে মাত্র দেড় লক্ষ মেট্রিক টন। অর্ধেকের চেয়েও কম। তাই চাহিদা অনুপাতে তরতরিয়ে দর বাড়ছে। এতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.