বাবুল হক, মালদহ: আমের জেলায় আম নিয়ে নয়া ইতিহাস গড়তে এবার উদ্যোগ রাজ্য সরকারের কৃষিদপ্তরের। জাপান থেকে আসছে চারা। এবার জাপানি আমের চাষ শুরু হতে চলেছে মালদহে! বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম কি? উত্তর একটাই, জাপানের ‘মিয়াজাকি’ আম। আগের বছরই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে জাপানের এই আম। এত দাম? তাহলে তো অনেক লাভ। সোনার ফসলকেও টেক্কা দেবে এই ‘মিয়াজাকি’! যদি বাংলায় চাষ করা যায়, তাহলে তো কেজি প্রতি নূন্যতম হাজার টাকা দাম পেতে পারেন চাষিরা। আর এই ভাবনা থেকেই ‘মিয়াজাকি’ চাষের (Miyazaki mango) উদ্যোগ আমের জেলা মালদহের কৃষিদপ্তরের।
শুধুমাত্র উদ্যোগ নিয়েই থেমে নেই, সেই জাপানি প্রজাতির আমচাষের পদ্ধতি-সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি শেখাতে মালদহের ৫০ জন চাষিকে ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। মালদহের মাটিতেও জাপানি আমের চাষ সম্ভব। কৃষিবিদদের কাছ থেকে সেই সবুজ সংকেত মিলেছে। উদ্যোগে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য সরকারও। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তুতি পর্ব প্রায় শেষ। আমের জেলায় শুরু হচ্ছে নতুন ইনিংস। মালদহের আমচাষিরা এবার জাপানের ‘মিয়াজাকি’ আমের চাষ শুরু করতে চলেছেন। জাপান থেকেই আসছে সেই দামি আমের চারা। আগামী সপ্তাহেই তা পৌঁছে যাবে মালদহে।
বৃহস্পতিবার জেলা কৃষিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, মালদহে জাপানের ‘মিয়াজাকি’ আম চাষ করার জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ইংলিশবাজার ব্লককে বেছে নেওয়া হয়েছে। চাষিদের প্রশিক্ষণ শেষ পর্যায়ে। বাছাই করা হয়েছে ৫০ জন চাষিকে। তাঁরা প্রত্যেকেই একটি করে জাপানি আমের চারা পাবেন। গাছের বৃদ্ধি হতেই সেখান থেকে কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মালদহের ইংলিশবাজারের সহকারি কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ড. সেফাউর রহমান বলেন, “সবচেয়ে দামি আম জাপানের ‘মিয়াজাকি’। সেই আমগুলিকে ব্র্যান্ডেড করে বিশ্ববাজারে বিক্রি করা হয় ‘তাইয়ো-নো-টোমাগো’ বা ‘এগস অফ সানশাইন’ নামে। গত বছর ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এই আমের চাষ মালদহ জেলাতেও করা যাবে। আমরা রীতিমতো আলোচনা করে সবকিছু খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
জাপান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই ৫০টি চারা এসে পৌঁছে যাবে মালদহে। একটি করে চারা ৫০ জন চাষিকে দেওয়া হবে। আমরাই চাষ দেখাশোনা করব। সেই চারা বড় হলেই কলম করে জেলায় ছড়িয়ে দেব। রাজ্য সরকার সিলমোহর দিয়েছে। জাপান থেকে চারা কিনে আনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। প্রকল্পটিতে সফল হলে মালদহের আমচাষিরা রাজা বনে যাবেন। চড়া দামের আম বাংলার মানুষ না খেলেও বিশ্ববাজারে বিক্রি হবে। কেজি প্রতি অন্তত হাজার টাকা দাম পেতে পারেন চাষিরা।
সহকারি কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক জানান, এই জাপানি আম পাকলে বেগুনি থেকে জ্বলন্ত লাল হয়ে ওঠে। ডাইনোসরের ডিমের মতো দেখতে। এই আমগুলির ওজন সাড়ে তিনশো গ্রামের বেশি এবং এতে সুগারের পরিমাণ পনেরো শতাংশের মতো। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, বিটা-ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিডে ভরা। চোখের জন্য ভাল, ক্যানসারের ঝুঁকি ও কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বকের জন্যও উপকারী। ইংলিশবাজারের সহকারি কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ড. সেফাউর রহমান জানিয়েছেন, এই আমের চাষের জন্য একটি নিখুঁত পরিবেশ প্রয়োজন, মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছে। দীর্ঘ ঘন্টার রোদ, উষ্ণ আবহাওয়া এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। এই অনুকূল পরিবেশ তো এখানেও রয়েছে। এই প্রজাতির আমচাষে সাফল্য মিলবেই বলে আশাবাদী মালদহের কৃষিবিদরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.