বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দিনভর মেঘলা আকাশ। কখনও দু’এক পশলা বৃষ্টি। ফের গরম। রোদের দেখা মিলছে খুবই কম। এমন আবহাওয়া ‘লুপার ক্যাটার পিলার’ নামে সবুজখেকো পোকাদের পোয়াবারো। রাতারাতি বিঘার পর বিঘা চা বাগানের (Tea Garden) ‘দুটি পাতা একটি কুড়ি’ চিবিয়ে খেয়ে সাবাড় করছে। মাথায় হাত চা চাষিদের।
দৃশ্যতই মহামারী! গাছ ঢেকে কিলবিল করছে শুঁয়োপোকা (Catterpiller) আদলের লুপার। গাছের চেহারা দেখে মনে হবে, কেউ যেন এলোপাথাড়ি ছুড়ি চালিয়ে পাতা নষ্ট করেছে। বড় চা বাগান কর্তৃপক্ষ, চা গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চা বাগানে এমন ‘মহামারী’ গত তিন-চার দশকে দেখা যায়নি। ওই দুর্যোগের কবলে পড়ে দিশেহারা উত্তর দিনাজপুর, তরাই এবং জলপাইগুড়ি জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের শঙ্কা, এপ্রিলে যতটুকু পাতা মিলছে লুপারের হামলার কারণে মে মাসে সেটাও বন্ধের মুখে। ইতিমধ্যে কাঁচা চা পাতার অভাবে বন্ধ হয়েছে অন্তত ৭০টি বটলিফ কারখানার দরজা।
বিঘার পর বিঘা চা বাগানের শুধু যে পাতা খেয়ে সাবাড় করেছে লুপার ক্যাটার পিলার, সেটাই নয়। গাছের ডাঁটা পর্যন্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে তারা। চা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকদের মতে, তাপমাত্রার দ্রুত ওঠানামার কারণে বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে লুপার। এপ্রিল মাস থেকে ঝড়ের গতিতে একের পর এক বাগানে ছড়িয়ে সর্বনাশ ডেকেছে। ডুয়ার্সের (Dooars) চা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক তৃণা মণ্ডল বলেন, “ভয়ংকর পরিস্থিতি চলছে। চা বাগানে লুপার থাকে কিন্তু এত বড় মাপের হামলা দেখা যায় না। একদিকে যেমন ভারী বর্ষণ নেই, অন্যদিকে গরম। এর ফলে চা পাতা উৎপাদন মার খাবে।”
তৃণাদেবী জানান, ডুয়ার্স, তরাইয়ের ছোট বড় প্রতিটি চা বাগানে এপ্রিল মাস থেকে লুপারের তান্ডব চলছে। যে বাগানগুলো শুরুতে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা কিছুটা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু লুপার বড় হয়ে গেলে ওষুধ স্প্রে করে খুব একটা লাভ হয় না। সেটাই হয়েছে বেশিরভাগ বাগানে। সেখানে কিলবিল করছে লুপার। উত্তরে ছোট চা বাগান রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। কমবেশি সবগুলোতে লুপারের আক্রমণ শুরু হয়েছে। চা চাষিরা জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ নেই, তাপমাত্রাও কমেনি। শুধু তাই নয়। একটানা কয়েকদিন রোদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে লুপার ক্যাটার পিলারের উপদ্রব বেড়েছে। রাতারাতি বিঘা পর বিঘা চা বাগানের সবুজ পাতা উধাও হচ্ছে। ফলে পাতার উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে।
বটলিফ চা কারখানা মালিক সংগঠনের অন্যতম কর্তা সঞ্জয় মিত্রুকা বলেন, “কারখানা চালু রাখতে দৈনিক কমপক্ষে ৩০ হাজার কেজি কাচা পাতা প্রয়োজন। কিন্তু এবার সেটা মিলছে না। যে পাতা মিলছে সেটার গুণগত মানও খারাপ। ওই কারণে জলপাইগুড়ি জেলার ৮৯টি বটলিফ কারখানার মধ্যে ৭০টি বন্ধ হয়েছে।” কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতিটি চা বাগানে লোকসান বেড়েই চলেছে। ওই পরিস্থিতিতে অনেক চাষি খুব বেশিদিন বাগান খোলা রাখতে পারবে না। সংস্থার সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “কাঁচা পাতার উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে। তাপদহের জন্য ফার্স্ট ফ্ল্যাশ মার খাওয়ার পর আশা ছিল সেকেন্ড ফ্ল্যাশে লোকসান পুষিয়ে যাবে। সেটাও হল না। এই অবস্থায় বাগান খুলে রাখা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন কয়েক দিনের মধ্যে ভারী বর্ষণ শুরু না হলে একের পর এক বাগান বন্ধ হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.