বাবুল হক, মালদহ: অনুকূল আবহাওয়ায় এবার লিচুর ফলন খুব ভাল হয়েছে। লিচুর রং ধরেছে। পরিপক্ক লিচু থিকথিক করছে গাছে গাছে। এত বেশি ফলনের খুশিতে চাষিদের মুখে অন্তত চওড়া হাসি দেখা যেত। বাস্তবে উল্টো ছবি। বাগানে গিয়ে রঙিন লিচু দেখে মাথা ঠুকছেন কালিয়াচকের রাহুল বিশ্বাস, লুৎফর রহমান, আবদুল মজিদরা। প্রশ্ন একটাই, গাছ থেকে লিচু পাড়বে কে? লকডাউনে মিলছে না শ্রমিক। দল বেঁধে লিচু বাগানে কাজ করতে নারাজ শ্রমিকরা। করোনার প্রভাব যে লিচু পাকার সময় এভাবে পড়বে, তা কখনও ভাবেননি মজিদরা। শুধু এখানেই শেষ নয়, পরিবারের সদস্যদের কিংবা আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে লিচু পাড়লেও লোকসান হবেই।
মোজমপুরের রাহুল বিশ্বাসের কথায়, “গাছ থেকে লিচু পেড়ে লাভ নেই। কালিয়াচকের লিচু ফি বছর মুম্বইয়ে রপ্তানি করা হয়। এবার লকডাউনে গাড়ি পাওয়া যাবে না। মুম্বই কীভাবে যাবে? চতুর্থ দফায় ফের শুনছি লকডাউন। তাহলে তো কালিয়াচকের লিচু এবার গাছেই পচে নষ্ট হবে।” গাছ থেকে লিচু পাড়ার শ্রমিক না মেলায় দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের। কালিয়াচক থেকে ইংলিশবাজারের কোতয়ালি, কাজিগ্রাম, তেলিপুকুর। সর্বত্রই একই অবস্থা। লকডাউনের মধ্যে জনশূন্য রাস্তাঘাট, ফাঁকা কৃষিজমি এবং লিচুর বাগানগুলিও। শ্রমিক কোথায় পাওয়া যাবে তা খুঁজতে কালঘাম ছুটছে মালদহের কৃষকদের। সময়ের মধ্যে গাছে ফলন হলেও শুধুমাত্র শ্রমিকের অভাবেই লিচু পাড়ার কাজ শুরু করতে পারেননি চাষিরা। এখন গাছের পাকা লিচু খাচ্ছে বাদুড়, পাখি। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে দরবার করেছেন মালদহের লিচু চাষিরা। কিন্তু বাগিচা পালন দপ্তরের তরফেও কোনওরকম আশার আলো দেখাতে পারছে না।
মালদহের উদ্যানপালন দপ্তরের জেলার উপ-অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী বলেন, “এখনও অনেক বাগানে লিচু পরিপক্ক হতে সময় আছে। কিছু কিছু বাগানে লিচু পরিপক্ক হয়েছে। তবে কৃষিক্ষেত্রে সরকার বলেছে কোনওরকম বিধিনিষেধ নেই। কাজেই কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিচু পাড়ার কাজ করতেই পারেন।” উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে লিচু চাষ হয়ে থাকে। যার মধ্যে কালিয়াচক ১, ২ এবং ৩ নম্বর ব্লকেই লিচু চাষ বেশি হয়। এর বাইরে ইংলিশবাজার, রতুয়া, চাঁচল ও ওল্ড মালদহ ব্লকে লিচু চাষ হয়। লিচুর চাহিদা গোটা রাজ্যজুড়ে রয়েছে। মালদহ থেকে লিচু মূলত পাঠানো হয় মুম্বইয়ের বাজারে। এছাড়া অসম, বিহার, ঝাড়খন্ডেও ফি বছর লিচু রপ্তানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু লকডাউন বন্ধ করে দিয়েছে লিচু রপ্তানি করার সব পথই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.