টমেটো কেবল দর্শনধারী নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের কাজ করতেও পারে। বিভিন্ন রোগ, যেমন ক্যানসার, হৃদরোগ, রিওম্যাটিজম ইত্যাদির উপশমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সহজেই চাষ করে ভাল আয় করা যায় পুষ্টিতে ভরপুর এই সবজি। টমেটোর পুষ্টিগুণ নিয়ে লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন বিভাগের পোস্ট-হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্টের গবেষক পিংকি মাইতি ও অধ্যাপক আইভি চক্রবর্তী।
টমেটো (লাইকোপারসিক্যান এসকুলেন্টাম মিল ) সোলানাসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এমন গুরুত্বপূর্ণ সবজি যা রান্নায় বা স্যালাড হিসাবে অথবা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা উপজাত দ্রব্য, দুইভাবে সমান ব্যবহার করা যায়। পৃথিবীতে যত পরিমাণ সবজি প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে ব্যাবহৃত হয়, এদের মধ্যে টম্যাটোর স্থান সর্বোচ্চ। এটি শীতকালীন সবজি হিসাবে পরিচিত হলেও গ্রীষ্মকালেও এর চাষ হয়। আয়ও হয় প্রচুর।
পশ্চিমবঙ্গে টমেটো চাষ নিছকই কম নয়। টমেটোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোগ প্রতিরোধকারী সবজি হিসাবে গণ্য করা হয়। এর টকটকে লাল রঙের জন্য দায়ী ক্যারোটিনইড (Carotenoid) গ্রুপের অন্তর্গত লাইকোপেন (Lycopene) নামক রঞ্জক পদার্থ এবং অল্প পরিমাণ বিটা ক্যারোটিনের জন্য। এদের উপস্থিতি শুধুমাত্র টমেটো বা তাদের উপজাত দ্রব্যগুলিকে (কেচাপ, সস, পেস্ট, পিউরি ইত্যাদি) আকর্ষণীয় করে তোলে তাই নয়, এটি গুণাবলীতেও সমৃদ্ধ। যা মানবদেহের রোগপ্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে যত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী সম্পন্ন উপাদান রয়েছে লাইকোপেন হল এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।
এছাড়াও টমেটোতে অন্যান্য গুরুত্ত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন অ্যাসকর্বিক আ্যাসিড (ভিটামিন সি), আলফা টোকোফেরল (ভিটামিন ই), বিভিন্ন ফেনলিক উপাদান এই সবগুলোই অনন্য গুণসম্পন্ন ও দেহকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এরা দেহের বিপাকীয় ক্রিয়া সৃষ্ট ‘ফ্রী র্যাডিকল’ নামক ক্ষতিকারক কিছু পদার্থকে শোষণ করে নেয়। না হলে দেহে মুক্ত অবস্থায় এই মূলকগুলো কিছু অপ্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন-হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস অথবা এই জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে যা ক্যানসার জাতীয় ভয়াবহ রোগ সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের খাদ্য তালিকায় টম্যাটোকে অপরিহার্য সবজি হিসাবে রাখা হয়েছে কারণ এতে হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন সমস্যা (কার্ডিও ভাসকুলার) ও অন্যান্য অনেক দূরারোগ্য ব্যাধিও প্রশমন হয়।
সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরা বেগুনি রঙের (Purple Fleshed) টম্যাটো উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ধরণের টম্যাটোতে করটিনইডের সঙ্গে অ্যান্থোসায়নিন নামের এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে যার জন্য এর রঙ বেগুনি হয়। এই অ্যান্থোসায়নিন ও বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী সম্পন্ন যা রোগ প্রতিরোধক্ষম সবজিটি ভিটামিন ‘এ’-র উৎস হিসেবে সপ্তম ও ভিটামিন-সি এর উৎস হিসেবে দশম স্থানে বিরাজমান। অন্যান্য যে সব ভিটামিন টম্যাটোতে পাওয়া যায় সেগুলি হল ফলিক আ্যাসিড, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, বায়োটিন, রিবোফ্ল্যাভিন , থিয়ামিন ইত্যাদি। এছাড়াও এতে নানাবিধ অনুখাদ্য (Micronutrients) খুব কম পরিমাণে রয়েছে।
(দ্বিতীয় পর্ব আগামী সপ্তাহে)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.