ধীমান রায়, কাটোয়া: বিশ্বের উৎকৃষ্ট মানের খেজুর বলতে অনেকেই জানেন সৌদি আরবের খেজুর। বর্তমানে সৌদি আরব থেকে প্রচুর পরিমানে খেজুর এদেশেও আমদানি হচ্ছে। সেরা জিনিসের দামও চড়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। সৌদি আরবের মানের খেজুর ফলানোর লক্ষ্যে খেজুর বাগান করেছেন কাটোয়ার এক কৃষক। কাটোয়া শহরের উপকন্ঠে অজয় নদের ধারে নিজের বিঘা দুয়েক জমিতে আরবের খেজুর গাছের বাগান তৈরি করেছেন গোপাল মণ্ডল নামে এক কৃষক। ইতিমধ্যে কিছু গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। কিছু গাছে ফুল এসেছে। মেগজুল, আজওয়া প্রজাতির খেজুর এই বাগানে ফলবে বলে দাবি গোপালবাবুর। যে খেজুর সৌদি আরব থেকে আমদানি করা হয়। এবার কাটোয়ার বুকেই পাওয়া যাবে ওই উৎকৃষ্ট মানের খেজুর। কাটোয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক প্রলয় ঘোষ বলেন, ” আমি শুনেছি। এটা ভীষন ভাল উদ্যোগ। ওই কৃষক ইচ্ছা করলে আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করব।”
বালুভূমির দেশ সৌদি আরবের খেজুর ছর বিশ্বজোড়া নাম আছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও গুজরাট, রাজস্থান প্রভৃতি রাজ্যে সৌদি আরবের প্রজাতির খেজুরের চাষ হচ্ছে। জানা যায় অন্যান্য রাজ্যেও অনেকেই গুজরাট থেকে বীজ বা চারা আনিয়ে লাভজনক খেজুর চাষ শুরু করেছেন। উৎকৃষ্ট মানের খেজুরের বাজারে যথেষ্ট দাম আছে। পুষ্টিগুনের কারণে খেজুরের চাহিদাও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাপুর কলোনির বাসিন্দা গোপাল মণ্ডল বিকল্প চাষ হিসাবে খেজুর বাগান করেছেন। গোপাল বাবু ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছেন। তাঁর বরাবরই চাষের প্রতি ঝোঁক। কাটোয়া শহরের উপকন্ঠে অজয় নদের বাঁধের নীচে সাড়ে ছ’ বিঘা জমি রয়েছে তার । তার মধ্যে দু’ বিঘা জমিতে খেজুর বাগান করেছেন।
গোপালবাবু জানান দেড় বছর আগে দুবাই ও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের ‘আজওয়া’ ও ‘মেগজুল’ প্রজাতির বীজ তিনি আনিয়েছিলেন। জমিতে জৈব সার দিয়ে খেজুর চাষের উপযোগী মাটি তৈরি করেন। কুড়ি ফুট তফাতে গর্ত তৈরি করে বীজ রোপন করেন৷সেখানে দিব্যি গাজ জন্মেছে। কয়েকটি গাছে ইতিমধ্যে ফল ও ফুল ধরেছে। তবে গোপালবাবু এখনই ফলের আশা করছেন না। কারণ তিনি জানিয়েছেন সৌদি আরবের মতোই সুস্বাদু খেজুর ফলতে অন্তত পাঁচ থেকে ছ’ বছর সময় লাগে ।
গোপালবাবু জানান বীজ আনিয়ে খেজুর বাগান তৈরি করতে তার এযাবৎ দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। গোপাল বাবু বলেন,” আমি মূলত ইউটিউব দেখেই সৌদি আরবের খেজুর চাষ করতে মনস্থ করি। বাংলাদেশেও এখন সৌদি আরবের খেজুর চাষ হচ্ছে। তাই আমাদের রাজ্যে উর্বর পলি মিশ্রিত মাটিতে আরবের খেজুর ফলানো এমন কিছু কঠিন নয়। আমার গাছে ইতিমধ্যেই ফলও ধরেছে।”
গোপালবাবু জানান খেজুর গাছের পুরুষ গাছ ও স্ত্রী গাছ দুই ধরনের গাছ রয়েছে। ভালো মানের খেজুর পেতে হলে স্ত্রী গাছের ফুলের ছড়া বের হওয়ার সাথে সাথে পুরুষ গাছের পরাগরেণু দিয়ে সময়মতো নিষেক ঘটানো আবশ্যক। সেই কৌশল গোপালবাবু রপ্ত করে নিয়েছেন৷ বাজারে ‘আজওয়া’ প্রজাতির খেজুর কিলো প্রতি ১১০০ – ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ‘মেগজুল’ প্রজাতির খেজুর ৪০০ থেকে ৫০০ প্রতি কেজি বর্তমান বাজারমূল্য। বাঙালির পুজো পার্বন, ভোজের অনুষ্ঠান থেকে রমজান মাসে খেজুরের প্রচুর চাহিদা থাকে। তাই অজয়পাড়ে আরবের খেজুর ফলিয়ে মোটা টাকা আয়ের আশা করছেন গোপালবাবু।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.