রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: জুন শেষ হয়ে জুলাইয়ের মাঝামাঝি। কিন্তু বৃষ্টি কই? আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় রীতিমতো সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। আর্দ্রতাজনিত তীব্র গরমে ব্যাহত হচ্ছে ফুলের চারা তৈরির কাজও। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে চাষবাস সামাল দিতে গিয়ে দিশেহারা চাষিরা।
রাজ্যের ফুলবাজারে পূর্ব মেদিনীপুরের চাষিদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা আছে৷ সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলছেন, “বিগত দিনে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় ফুলের দর তলানিতে নেমে আসে। এতেই হতাশ হয়েছিলেন বাংলার ফুলচাষিরা। এরপর গত ফাগুনে আচমকাই মুষলধারে বৃষ্টি আসায় ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে ফের একবার প্রকৃতির নির্মম খামখেয়ালিপনায় চাষিরা আরও হতাশ হয়ে পড়ছেন।”
মূলত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিকল্প চাষ হিসেবে ফুলচাষকেই বেছে নিয়েছেন এলাকার কৃষিজীবীরা। তবে পাশের জেলা হাওড়া বা পশ্চিম মেদিনীপুরেও ফুল চাষ বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আর এই চাষকে কেন্দ্র করে কোলাঘাটে রাজ্যের অন্যতম দ্বিতীয় ফুলের বাজারও গড়ে উঠেছে। এখন শুধু রাজ্য নয়, এই বাজারের ফুল মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু–সহ ভিন রাজ্যের শহরগুলিতেও পাড়ি দিচ্ছে। এইসব শহরে চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিচ্ছে বাংলার ফুল। গাঁদা থেকে গোলাপ,চন্দ্রমল্লিকা থেকে বিদেশি গ্লাডিওলাস, ঘরের মাটিতে ফুটে ওঠা জবা, অপরাজিতা, দোপাটি, পদ্মের বেশ কদর বাইরের শহরগুলিতে৷ আর সব রকমের ফুলচাষে সিদ্ধহস্ত এই জেলার ফুলচাষিরা।
কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে অতিবর্ষণে বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন জেলার চাষিরা। এবছর আবার উলটো ছবি৷ জুন শেষ, জুলাইয়েরও অর্ধেকটা পেরিয়ে গিয়েছে৷ তবু এবছর এখনও সেভাবে বর্ষা নামেনি। কাজেই প্যাচপ্যাচে গরম ও মাঝেমধ্যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে ফুলের বাগান তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন পাঁশকুড়ার গণেশ সাহু, ধনঞ্জয় সাহু, স্বপন জানার মতো ফুলচাষিরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও লোভনীয় চন্দ্রমল্লিকার বাগান তৈরি করতে হিমশিম দশা তাঁদের। শুরুতেই ফুলের চারা নষ্ট হওয়ায় দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ছে চারাগাছের। ৮০ পয়সার চারার দাম বেড়ে এখন হয়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা৷
ফুলচাষি ধনঞ্জয় সাহুর কথায়, “এবছর অতিরিক্ত দাবদাহের জেরে ফুলের বাগান তৈরি করেও তা টেকানো সম্ভব হয়নি। রোদে শুকিয়ে নষ্ট হয়েগিয়েছে পাঁশকুড়ার মহৎপুর–সহ আশপাশ এলাকার প্রায় কয়েক একর ফুলগাছের বাগান। এরপর আবার অতিরিক্ত দাম দিয়েও উপযুক্ত ফুলের চারা না মেলায় গভীর সংকটে পড়েছি আমরা।” তাহলে কি ফুলের বাগান এবার শুকনো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই মনখারাপ চাষি থেকে ক্রেতা – সকলের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.